ওসমানীনগরে দুই শিক্ষার্থীর দ্বন্দ্ব গড়ালো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে : আহত ২০
ওসমানীনগর সংবাদদাতা
সিলেটের ওসমানীনগরের তাজপুর ডিগ্রি কলেজের দুই শিক্ষার্থীর দ্বন্দ্বের জেরে উপজেলার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সময় অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়। এই সংঘর্ষে প্রায় এক ঘণ্টা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে চলাকালে কয়েকটি যানবাহনও ভাংচুর করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার তাজপুর বাজারে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি আটকা পড়ে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জের মাধ্যমে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করেছে। যে কোনো সময় আবারও দুই গ্রুপ সংঘর্ষের লিপ্ত হতে পারে।
এ অবস্থায় ইউএনওর আদেশে শুক্রবার (১০ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত তাজপুর বাজার এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন— দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে উপজেলা ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালাতে দেখা গেছে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন— কলেজের দুই শিক্ষার্থীর দ্বন্দ্বকে ঘিরে বাজার এলাকায় সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এই সংঘর্ষ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃত সংঘর্ষকারীদের এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে— তাজপুর ডিগ্রি কলেজ দুই শিক্ষার্থীর দ্বন্দ্বের জের ধরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর দুইটার দিকে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাজপুর বাজারে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষটি এলাকা ভিত্তিক ছড়িয়ে পড়লে বাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
খবর পেয়ে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জের মাধ্যমে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিকাল ৪টার দিকে আরেক দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দুই গ্রুপ। এসময় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিলেটগামী কয়েকটি গাড়ি আটকা পড়ে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা গাড়ি থেকে নেমে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করেন। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষনিক আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়েকের দুই পাশে শতাধিক যানবাহনসহ কয়েকেটি রোগীবহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়ে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ঝুঁকি নিয়ে রোগীবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স তাজপুর বাজার পাড়ি দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সংঘর্ষ এড়াতে বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তাজপুর বাজারের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলিমা রায়হানা।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এস মইন উদ্দিন বলেন— খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশাপাশি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাজার এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকা শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত পূর্বক গ্রেফতারে থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে।