দু’দিন আগেই সিলেটে ইজতেমা শুরু : বিএনপির সমাবেশে না যাওয়ার শপথ
স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (১৭ ও ১৮ নভেম্বর) দু’দিন ব্যাপী নগরীর সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে আজিমুশ্বান ইজতেমার স্থান নির্বাচন করা হয়। কিন্তু ১৯ নভেম্বর আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করায় সেখানে ইজতেমার আয়োজন করা যায়নি। ফলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (১৭ ও ১৮ নভেম্বর) দু’দিন ব্যাপী দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে ইজতেমার স্থান নির্ধারণ করা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) থেকে ইজতেমা মাঠে উপস্থিত হন মুসল্লীরা। তবে বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিশৃশৃঙ্খলা আশঙ্কায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দকে ইজতেমা পেছানোর অনুরোধ করে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেটের মুসল্লি ও হেফাজতের কর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে তাই তাৎক্ষণিক ইজতেমা ময়দানে সিলেট জেলা ও মহানগর হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীলদের নিয়ে মাশওয়ারাহ (পরামর্শ) সভায় বসেন পীর সাহেব বরুণা।
তখন তিনি বলেন— আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম হলো : আত্মশুদ্ধির সংগঠন, ইসলাম, কালিমা ও মানুষকে নামাজের দিকে আহবান করার সংগঠন। আমরা শান্তিপ্রিয়, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা সালাত-সেজদা আর জিকিরের সঙ্গে এখানে আজ থেকে ইজতেমা শুরু করবো। ইনশাআল্লাহ কেউ কোনো ধরণের উগ্রতা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবেন।
মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকেই ইজতেমা শুরুর ঘোষণা দেন আমীরে হেফাজত আল্লামা মুফতি মুহা. রশীদুর রহমান ফারুক পীর ছাহেব বরুনা। তিনি রাতে ইজতেমা মাঠে আজ থেকে চারদিন ব্যাপী ইজতেমা চলবে ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে মুসল্লীদের নির্দেশনা দেন-বিএনপির গণসমাবেশে না যেতে ওয়াদা করিয়ে বলেন— ‘কও আমরা বিএনপি মাহফিলে কেউ যাইতাম নায়।’ ‘আর ইজতেমাতে আপনারা কেউ না থাকলে আমি একলা থাকমু।’
তিনি বলেন— মোগলাবাজার থানার ওসির কথায় প্রথমে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। তিনি ইজতেমাস্থলে এসেই বলেন— আপনাদের প্রোগ্রাম হবেই হবে। কিন্তু কানে কানে বলেন— ১৮ নভেম্বরের পর করেন। তখন বলি— আমরা তো লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছি। আলেম-উলামারাও আসতে শুরু করেছেন। এই মানুষদেরও সামাল দেওয়া কঠিন। আর আমাদের অনুষ্ঠান ১৮ তারিখ জুমার পর শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় পেছানো যাবে না।
ইজতেমা মাঠে পরামর্শ সভায় উপস্থিত ছিলেন— আল হারামাইন’র চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওলিউর রহমান, গোলাপগঞ্জ পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, কাজিরবাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল সামিউর রহমান মুসা, সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন বি ১৪১৮ এর বিভাগীয় কমিটির সভাপতি ইনুল ইসলাম’সহ আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার সকল দায়িত্বশীলরা।
এদিকে, ইজতেমার আয়োজকদের এমন অনঢ় মনোভাব প্রকাশের পর পুলিশ নতুন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কি না, জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সুদিপ দাস ( মিডিয়া) বলেন— এ ব্যাপারে নতুন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আগের সিদ্ধান্তই বহাল। আর নতুন কোন সিদ্ধান্ত হলে সেটি বুধবার জানিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে আগামী শনিবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইজতেমা কেন্দ্র করে বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম বেশি হবে, কয়েক দিন ধরে সিলেটে এমনটি আলোচনায় ছিল।
বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে ইজতেমা পেছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে অতিরিক্ত উপক মিশনার সুদীপ দাস বলেন— এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই। মূলত ওই দুই দিনের ইজতেমায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলেন গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য আসে। এরপর সংগঠনটিকে ইজতেমা পেছাতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন— এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে ইজতেমা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
১২ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, ধর্মীয় ও অরাজনৈতিক এ সংগঠনের ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে সিলেটে দুই দিনব্যাপী ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পরপরই শুরু হয়ে পরদিন শুক্রবার বাদ জুমা ইজতেমা শেষ হওয়ার কথা ছিল।
ইজতেমা আয়োজনের জন্য টার্মিনালে প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে ইজতেমা পেছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শাব্বীর আহমদ বলেন— সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।