সিলেটের বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারি খুলে দিতে মন্ত্রী ইমরানের ডিও লেটার
সময় সিলেট ডেস্ক
সিলেটের বন্ধ থাকা পাথরকোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী ডিও লেটারটি পাঠান। তবে বিষয়টি রবিবার জানাজানি হয়।
ইমরান আহমদ সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) আসনের সংসদ সদস্য। তার নির্বাচনী এলাকাতেই জাফলং, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, শ্রীপুরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পাথরকোয়ারিগুলোর অবস্থান। ২০১৯ সাল থেকে সরকারি নির্দেশনায় এসব কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ আছে।
এ বিষয়ে জানতে মন্ত্রী ইমরান আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন— মন্ত্রীর ডিও লেটারের একটি অনুলিপি তার কাছে পৌঁছেছে।
ডিও লেটারে অসহায় ও দরিদ্র শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ সনাতন পদ্ধতিতে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে কোয়ারি থেকে পাথর তোলার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী লিখেছেন— ‘কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের সুযোগ না দিলে আগামী নির্বাচনে এর সরাসরি বিরূপ প্রভাব পড়বে। যার জন্য আমাদেরই সবাই দায়ী করবেন।’
তবে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পাথরকোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে আসছে সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। মন্ত্রীর ডিও লেটারের বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী শাহ সাহেদা বলেন— ‘পাথরকোয়ারিগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, তা হবে আত্মঘাতী। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেই পাথরকোয়ারি বন্ধ রাখা উচিত।’
ডিও লেটারে ইমরান আহমদ লিখেছেন— কোয়ারিগুলো থেকে দীর্ঘকাল ধরে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকলেও সরকারি নির্দেশনায় কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ আছে। বন্ধের আগে দীর্ঘদিন ধরে কোয়ারিগুলো সচল থাকায় এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কোয়ারিসংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর কোয়ারি বন্ধ থাকায় হাজারো শ্রমিকের কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
তিনি লিখেছেন— কোয়ারিগুলো ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের কারণে উজান থেকে প্রচুর পানি নেমে আসে। কয়েক বছর কোয়ারি বন্ধ থাকায় ও পাথর উত্তোলন না করায় বর্তমানে অনেক পাথর নদীর প্রবেশমুখে স্তূপাকারে আটকে আছে।
নদীর প্রবেশমুখে পাথরের স্তূপ থাকায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে বলে মন্ত্রী ইমরান আহমদ ডিও লেটারে দাবি করেছেন।
তিনি আরও লিখেছেন— নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় জাফলং কোয়ারির পাশে খাসিয়াপুঞ্জি, বিছনাকান্দি কোয়ারির পাশে বগাইয়া, ভোলাগঞ্জ কোয়ারির কালাইরাগ, কালাসাদক মৌজাসহ নদীর আশপাশের গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং এলাকাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পাথর কোয়ারির প্রবেশমুখগুলো উন্মুক্ত করার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিসহ নদীর পানিপ্রবাহ ঠিক থাকবে বলে মন্ত্রী ইমরান আহমদ দাবি করেছেন। তিনি বলেন— দীর্ঘদিন কোয়ারি বন্ধ থাকায় ও বেকারত্ব বাড়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে অস্থিরতা, অসহায়ত্ব ও হতাশা বাড়ছে। তারা বিভিন্ন অনৈতিক ও অসামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও লিখেছেন— বর্তমান অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাথর আমদানি হ্রাস পেয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম উপকরণ পাথরের দাম দিন দিন বাড়ছে। ফলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে এবং বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলে এক দিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বেলার সিলেটের সমন্বয়কারী শাহ সাহেদা বলেন— মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের কারণে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি অনেক শ্রমিকের মৃত্যুও ঘটছে। কোয়ারির অবস্থান ও ঝুঁকি বিবেচনায় পাথরকোয়ারির তালিকা থেকে সিলেট অঞ্চলের কোয়ারিগুলোকে বাদ দেওয়া উচিত। তবে যদি পাথর নদীমুখে জমে যায়, তাহলে নদীর নাব্যতা নিশ্চিতে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা না দিয়ে সরকার নিজ দায়িত্বে নদী খনন ও বালু-পাথর অপসারণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন— যারা পাথরকোয়ারি চালুর দাবি জানাচ্ছেন, এটা বেআইনি ও অনায্য দাবি। কোনোভাবেই তাদের দাবির প্রতি সরকারের সমর্থন জানানো উচিত নয়।