প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কী ‘নির্দেশনা’ নিয়ে এলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি তাকে এ নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র। সূত্র মতে— শুধু নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্যই নয়, তাকে এলাকায় গিয়ে কাজ করারও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ সময় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
সূত্র জানায়— সাক্ষাতকালে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আলোচনায় সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন প্রসঙ্গও উঠে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথেও সাক্ষাত করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
‘সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী হচ্ছেন আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী’ কদিন ধরে এমন আলোচনায় সরব সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গন। এমতাবস্থায় ২২ জানুয়ারি দেশে ফিরেন আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী। ওইদিন সকালে তাকে বরনে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন— আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবও। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে বরণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
ওসমানী বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রা করে তাকে নিয়ে আসা হয় নগরীতে। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং হযরত শাহজালাল রহ. মাজার জিয়ারত করেন আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী। এতেই তার মনোনয়নপ্রাপ্তীর বিষয়টি অনেকটাই খোলাসা হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন— ‘কথা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক সম্প্রতি দলীয় নেতাদের জানিয়েছেন, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নগরীর বাইরে থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে কাকে প্রার্থী করা হবে, তা খোলাসা করেননি প্রধানমন্ত্রী।’ এতে ধরে নেয়া যায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। অবশেষে তা খোলাসা হতে চলেছে।
দলীয় সূত্র জানায়— আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিগত দিনে দলের জন্য নিবেদিত হয়ে প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। যেমনটি করতেন সাবেক মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন কর্মী হয়ে তিলে তিলে গড়ে উঠা এক মানবিক কর্মী, ক্লীন ইমেজের রাজনীবিদ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তিনি। কলেজ জীবনে তিনি বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন তিনি।
এরপর তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়েও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী থেমে থাকেননি। প্রথমে তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট-২ আসনে প্রার্থী হতে তৎপর থাকলেও দলীয় মনোনয়ন জুটেনি। তথাপি বসে থাকেননি তিনি। জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার সব নির্বাচনকালে ছুটে এসেছেন দেশে। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সরব থাকতে দেখা গেছে তাকে। বিশেষ করে সিলেট-১ ও সিলেট-৩ আসন, সিলেট জেলা পরিষদ ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নৌকার বিজয় নিশ্চিতে দিনরাত খেটেছেন তিনি। এ কারণে শুধু বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরেই নয়, সিলেট সদর ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং ফেঞ্চুগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে তাঁর। নেতাকর্মীরাও যেনো তার মাঝে প্রয়াত মেয়র কামরানের স্বভাবসূলভ দৃষ্টিভঙ্গি খোঁজে বেড়ান।
নেতাকর্মীদের অনেকে জানান— সারাবিশ্বে যখন করোনা মহামারীতে টালমাটাল। মানুষের যাপিত নিয়মগুলো থমকে দাঁড়িয়ে আছে! সব শ্রেণি পেশার মানুষ চরম আতংক ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে ধীরে ধীরে হাঁটছে। তখন সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের সেবায় নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন আনোয়ারুজ্জামান। সিলেটের আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। আড়ালে থেকে অগণিত নেতা গড়ার কারিগরও তিনি। দেশ ও দেশের বাইরে আওয়ামী লীগকেও চাঙ্গা করতে কাজ করেছেন। বিনিময় হিসেবে কখনো বাগিয়ে নেননি পদ-পদবী।
সূত্র জানায়— দলের জন্য তার এই নিঃস্বার্থ ত্যাগ কেন্দ্রের নজর কেড়েছে। যে কারণে ‘ডার্ক সাইডে’ থাকা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ডাক পড়েছে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে।