২১ আগস্টের হামলা আ.লীগের পরিকল্পিত চক্রান্ত : রিজভী
সময় সিলেট ডট কম
‘আমি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের টার্গেটে ছিলাম।’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা তৎকালীন বিএনপি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত চক্রান্ত।
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মৎসজীবি দল আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাকে মেরে ফেলার অনেকবারই চেষ্টা করা হয়েছে। একুশে আগস্ট হচ্ছে একটা বিরাট পরিকল্পনা, ভয়ঙ্কর আক্রমণ। এর আগেও আমাকে অনেকবার আক্রমণ করা হয়েছে, কিন্তু এটি ছিল ভয়ঙ্কর আক্রমণ।’ প্রধানমন্ত্রী একটু আধ্যাত্মিকভাবে বিষয়টা বলতে চেয়েছেন। সেই সময় যদি এই হামলা সরকার পরিকল্পিত বিষয় থাকতো তাহলে একজনকেই টার্গেট করতো। এলোপাতাড়ি চারিদিকে গ্রেনেড ফুটছে। উনি (শেখ হাসিনা) কিন্তু সেদিন নিরাপদে গাড়িতে উঠে গেলেন। এই যে ‘কারণ যে একটা আছে’, এটি ছিল অন্যতম কারণ। এ থেকেই স্পষ্ট হয়, এই হামলা ছিল আওয়ামী লীগেরই পরিকল্পিত চক্রান্ত।’
গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল গণভবনে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে আমি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের টার্গেটে ছিলাম।’
সরকারপ্রধানের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ছিল তৎকালীন বিএনপি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতায় আসা এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বিপর্যস্ত করা। বড় ধরনের দেশীয় এবং বিদেশি আওয়ামী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের ফল হচ্ছে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, এবং তার পরে এসকল বিচারের প্রক্রিয়া। সবাই দেখছে, কেমন বিচার প্রক্রিয়া চলছে। সই নাই স্বাক্ষর নাই কোনও কিছুই নাই, তারপরও বিএনপর চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি অবিচারের রাজ্যে বাস করছি, এখানে চলছে ভয়ঙ্কর অবিচার। ন্যায় বিচার শুধু নিরুদ্দেশ নয়, ন্যায় বিচারের অর্থ কি এটা আগামীদিনের ছাত্ররা গবেষণা করার সুযোগ পাবে না। কারণ কারণ দেশে চলছে কর্তৃত্ববাদী শাসন, একদলীয় শাসন অর্থাৎ সরকার থেকে যা বলা হবে সেভাবেই ইতিহাস রচনা করা হবে। সেভাবেই গবেষণা হবে, সেভাবেই লেখাপড়া করতে হবে। সরকারের বিধিনিষেধের মধ্যে গবেষণা করারও সুযোগ থাকে না। এটাকেই বলে দুঃশাসন। ন্যায়বিচার দূরের তারা। দূরের তারার মতো দেখতে হয়; ওই যে দূরে যে তারা দেখা যাচ্ছে ওইটা মনে হয় ন্যায় বিচার।’
তিনি বলেন, ‘একুশে আগস্ট বোমা হামলা নিয়ে মিথ্যাচার অল্পস্বল্প নয়। সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা কোরাস গাইছেন। আমরা প্রথম থেকেই দেখে আসছি এই একুশে আগস্ট বোমা হামলা নিয়ে বর্তমান সরকার অর্থাৎ সেই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা তখন থেকেই কিন্তু ডাইভার্ট করার চেষ্টা করছে। আসল ঘটনাকে ঢেকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
২১ আগস্টের হামলা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘অর্থাৎ তাকে (শেখ হাসিনা) বাঁচিয়ে একটা ঘটনা ঘটিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারকে ব্লেম দেয়াই ছিল আওয়ামী ষড়যন্ত্রের অংশ। এটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, বর্তমান সরকার সে সময়ের বিরোধী দল এই ব্লেম দেয়ার জন্যই পরিকল্পিত ঘটনা ঘটিয়েছে এবং কারণ হচ্ছে বিএনপি সরকারকে দেশে-বিদেশে অভিযুক্ত করা। সেদিন বোমা হামলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিচলিত হয়েছিলেন। তিনি দৌঁড়ে সিএমএইচে আইভি রহমানসহ আরও যারা আহত হয়েছিলেন তাদেরকে দেখতে গিয়েছিলেন। খোঁজখবর নিয়েছিলেন। সেখান থেকে দৌঁড়ে এসেছিলেন সুধা ভবনে, কিন্তু সেদিন তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কেন ঢুকতে দিলো না আপনার ছাত্রলীগ যুবলীগ শুধু ঢুকতে দেয়নি এমনকি প্রধানমন্ত্রী এবং তার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছে, তাহলে এই কারণগুলো কি?’
১/১১ সরকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আন্দোলনের ফসল ১/১১ সরকার। কিন্তু এ সরকার একুশে আগস্টের বোমা হামলার ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসায়নি। আপনারা জানেন ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল আন্তর্জাতিক মাস্টার প্ল্যানের একটি নির্বাচন, ওই নির্বাচনে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর আবার সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হল, আবার নতুন করে তদন্ত করা হলো। যিনি তদন্ত করলেন তিনি আওয়ামী লীগের নমিনেশন কিনেছিলেন, নৌকা মার্কার ছবি দিয়ে তিনি তার এলাকায় পোস্টার মেরেছেন। এটাও তো একটা কারণ কারণ আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটা ঘটিয়ে বিএনপি নেতৃত্বকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর জন্য।’
সরকারের দুর্নীতির নানা চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজকে যদি আওয়ামী লীগকে একটা ঘর ধরি সেই ঘরের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বের হয় পাপুল, তাদের স্যুটকেস থেকে বের হয় শাহেদ, তাদের আলমারি থেকে বের হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা। সব কিছুই তো আওয়ামী লীগের ঘরের ভেতর থেকে বের হচ্ছে।
সূত্র : ঢাকা টাইমস