বৈধ কাগজপত্রহীনরা সুযোগ পেলে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে
সময় সিলেট ডট কম
বৈধ কাগজপত্রহীনরা বৈধতাকরনের সুযোগ পেলে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে প্রস্তুত। Help The Helpless নামে বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন কমিউনিটির সকলের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছে।
করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর কারনে ব্রিটিশ অর্থনীতি এক নাজুক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সহজকরণ করেছে, যাতে নতুন অভিবাসীরা ব্রিটেনে এসে সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করতে পারে। অথচ দীর্ঘ দিনের বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী যারা বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ, তাদের শুধু বৈধতাকরণ করা হলে তারা এখনই সরকারকে নতুন অভিবাসীদের চেয়ে বেশি বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স প্রদান করে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে। তাই সরকারের এখনই এই ব্যাপারে সুদৃষ্টির দেয়া প্রয়োজন যাতে এদের অতিদ্রুত বৈধতাকরণের আওতায় আনা সম্ভব হয়।
বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের দীর্ঘদের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য তাদের বৈধতাকরনের প্রচেষ্টা হিসেবে গত ২৪ জুন বেশকিছু এমপি পার্লামেন্টে একটি মোশন উদ্ধাপন করেছেন।
https://edm.parliament.uk/early-day-motion/57173/leave-to-remain-status
ইতিমধ্যেই ৪০ জন এমপি এই মোশনটিকে সমর্থন করেছেন, যার ফলে এটি পরবর্তী ধাপে যাওয়ার রাস্তা সহজ হয়েছে। এই উদ্যোগটি সফল হলে ভবিষ্যতে লক্ষ লক্ষ বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের দুর্ভোগের লাঘব হবে ।
যেই ৪০ জন এমপি ইতিমধ্যে এই মোশনটিকে সমর্থন করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলেন লাইম হাউস এন্ড পপলারের এমপি আফসানা বেগম। তিনি ইতিমধ্যেই এই ইস্যুটি পার্লামেন্টে একাধিক বার উপস্থাপন করেছেন। নতুন এমপি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে এই অসহায় বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরনের এই অব্যাহত প্রচেষ্টার কারনে আফসানা বেগম এমপি বিশেষ প্রশংসা পাবার যোগ্যতা রাখেন। আশা করা যাচ্ছে আরও অনেক এমপি অতিসত্ত্বর তার মতো এই ইস্যুতে সোচ্চার হবেন। এর আগে রুপা হক এমপি ও রুশনারা আলী এমপি বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরনের ইস্যুতে পার্লামেন্টে সোচ্চার ছিলেন।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণের জন্য পৃথিবী এক দুঃসময় অতিবাহিত করছে, ব্রিটেনেও এর বিরাট প্রভাব পড়েছে। এই দুঃসময়ে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা রয়েছেন মহা বিপদে। কারন এদের জন্য কোনো সরকারি সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ সম্ভাবনা নেই। তাই এই দুঃসময়ে সকলের সহযোগিতাই এদের জীবন বদলে দিতে পারে। কিন্তু বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা ত্রান বা ভিক্ষা চায়না, বরং বৈধকরণের জন্য সবার সহযোগিতা চায়। এই দুঃসময়ে অনেকে ইচ্ছা করলেই তাদের লোকাল এমপিদের কাছে সরাসরি যোগাযোগ বা ইমেইল করে এদের বৈধকরণের জন্য সহায়তা করতে পারে। লোকাল এমপিরা যদি তাদের লোকাল জনগণের অনুরোধ পায়, তবে অবশ্যই এই ইস্যুটি জরুরী ভিত্তিতে সরকারের কাছে তুলে ধরবে । এমপিরা যদি এই ইস্যুটি নিয়ে সোচ্চার হন তবে পর্তুগাল ও ইতালির মতো বৃটেনেও এই আপদকালীন সময়ে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরন সম্ভব হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
একটা প্রবাদ আছে- ভালো কাজ করুন আপনার ভালো হবে। বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গোটা বিশ্ব এক দুর্যোগময় মুহূর্তে আছে ব্রিটেনেও এই রোগ ইতিমধ্যে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। সরকার কয়েক মাসের লক ডাউন ঘোষণা করে বেশির ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন, যার প্রভাব এখনো আছে। সরকারের তরফ থেকে দেশের নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু বৈধ কাগজপত্রহীন মানুষগুলো আর্থিক সহায়তা তো দূরের কথা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পাবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হলেও অনেকে ভয়ে যায় না, যেতে চায় না, যা স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মক হুমকির কারন হতে পারে ।
ব্রিটেনের দীর্ঘদিন বসবাসকারী বৈধ কাগজপত্রহীন লক্ষ লক্ষ অভিবাসীরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কবে তাদের বৈধকরনের বিশেষ পরিকল্পনা আসবে। কারন ক্ষমতায় এখন তাদের পক্ষে কথা বলা প্রধানমন্ত্রী, যিনি প্রায় দীর্ঘ একযুগ ধরে এই দীর্ঘ দিন কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের বৈধকরনের কথা বলে আসছেন।
২০০৮ সালে প্রথমে তিনি দীর্ঘদিনের বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতা দেয়ার দাবীটি করেছিলেন, ২০০৮ সালে লন্ডন মেয়র নির্বাচনের আগে চ্যারিটি সংগঠন সিটিজেনের একটি অনুষ্ঠানে, ২০১৩ সালে এলবিসির অনুষ্ঠানে , ২০১৬ সালের ১৯শে জুন ব্রেক্সিটের ভোটাভুটির ঠিক আগে তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যার প্রভাব ব্রেক্সিটের ভোটাভুটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি এই সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের কথা ভুলে যাননি তাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে পার্লামেন্টে প্রথম দিনেই রুপা হক এমপির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দীর্ঘদিন কাগজপত্রবিহীন এইসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বৈধতা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে
জানান।
ব্রিটেনে বৈধকাগজপত্রহীনদের বৈধতাকরনের দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাইন চলছে। ২০০৮ সালের ২০ শে এপ্রিল এই দাবীতে প্রথম লন্ডনের ট্রাফলগর স্কোয়ারে এক বিরাট জনসমাবেশ হয়েছিলো, পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে এমপিদের সাথে এই দাবিতে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বার্মিংহামের একটি ক্যাম্পাইন গ্রুপ বেশ কিছু লোকাল এমপিদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেছে। তারা ২০১৮ সালে হাউস অফ কমন্সে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে যান এবং সেখানে তৎকালীন ছায়া ইম্মিগ্রেশন সেক্রেটারি আফজাল খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ২০১৮ সালে বিসিয়ের নেতৃত্বে হাউস অফ কমেন্সের সামনে বিক্ষোভ ও অনুষ্ঠিত হয়।
বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর সময় কয়েক শত এমপিদেরকে তাদের লোকাল জনগণের মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরণের সহায়তা করার অনুরোধ করে ইমেইল করা হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক এমপি এই ইস্যুতে একমত পোষন করে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন, যা ধারাবাহিক ক্যাম্পাইনের সফলতার ফসল।
ব্রিটেনে দীর্ঘদিন বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা এখন এই দুর্যোগের মুহুর্তে অপেক্ষার প্রহর গুনছে তাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনার। এটাই সঠিক সময় তাদের বৈধকরনের। কারন এদের বৈধকরন করা হলে এরা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।