দোয়ারাবাজারের অবাধে সরকারি গাছ কর্তন
সময় সিলেট ডট কম
দোয়ারাবাজার সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী থাবলী মোকামে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে স্থানীয় একটি অসাধু গাছখেকো চক্রের। চক্রটি প্রায় চার বছর ধরে নানান প্রভাব প্রতিপত্তি দেখিয়ে একের পর এক মূল্যবান সরকারি বনজ ও ফলজ গাছ নিধন করে আসছে। কিন্তু নিরাপত্তার ভয়ে এদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না কেউ-ই।
অবৈধভাবে এসব গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মোকাম এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই মামলা হামলাসহ ভিটেমাটি থেকে সমূলে উচ্ছেদ করার ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা পেকপাড়া (মোকাম ছড়া) থাবলী মৌজায় থাবলী মোকামটির অবস্থান। জনশ্রুতি আছে সিলেটের প্রখ্যাত সুফি সাধক হযরত শাহ জালাল (রহঃ) এর সফর সঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়াদের মধ্যে একজন হযরত শাহ আরপিন (রহঃ) এই এলাকায় কিছুদিনের জন্য বিশ্রাম নিয়েছিলেন। তার স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি বর্তমানে থাবলি মোকাম নামে পরিচিত। থাবলী মোকামের বৃহৎ অংশ পড়েছে ভারতের সীমানায় বাকি অংশ বাংলাদেশের ভেতরে। মোকামের বাংলাদেশ অংশের পুরোটাই সরকারি খাস ভূমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোকাম এলাকায় একেকটি বড় গাছের গুড়ি ও শেকড়ের অংশ বেরিয়ে আছে। দেখে মনে হবে প্রতিটি গাছ পরিকল্পিত ভাবে কাটা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি প্রতিবেদককে জানান, প্রায় দুইমাস আগে মাজারের উন্নয়ন কাজের নামে এসব পুরোনো ফলজ কাঁঠাল গাছ কেটে বিক্রি করা হয়।
জানা যায়, থাবলী মোকাম এলাকায় দোয়ারাবাজার উপজেলা ফরেস্ট অফিসের উদ্যোগে ২০১২-১৩ সালের দিকে প্রায় শতাধিক বেলজিয়াম ও ইউক্যালিপ্টাস গাছ রোপণ করা হয়। মাস দুয়েক আগে কর্তন হওয়া কাঁঠাল গাছ মোকামের প্রয়াত খাদেম হাশিম শাহ ওরফে হাইসসা পাগলা ও তার পরিবারের লোকজনের হাতে লাগানো। তারা মোকামের খাস জমিতে এসব গাছ রোপণ করে দীর্ঘদিন ধরে দেখভাল করে আসছিলেন। কিন্তু বিগত তিন-চার বছর ধরে থাবলী মোকাম এলাকার বহিরাগতরা মিলে খাদেমের পরিবারের কাউকে না জানিয়ে কমিটি করে মোকামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বছর দুয়েক আগেও মোকামের শিরনি করার নামে প্রায় দুই শতাধিক গাছ কর্তন করে কমিটির লোকজন।
এ ব্যাপারে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে মাজার পরিচালনা কমিটির ক্যাশিয়ার জহিরুল ইসলাম জুলহাস থাবলী মোকামের সরকারি জমির এসব পুরোনো ফলজ গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি প্রতিবেদকে জানান, এ বিষয়ে সামনাসামনি আলাপ করা হবে। মোকামের উন্নয়ন কাজে গাছ কাটা হয়েছে। মোকামের ঘর নতুন করে নির্মাণ করা হবে। মোকাম পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে সর্বমোট ২২ হাজার টাকা মূল্যে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
প্রয়াত খাদেম হাশিম শাহের ভাতিজা ও মাজারের বর্তমান খাদেম ওসমান ফকির জানান, মাজার ও মোকাম এলাকার কোনো বিষয়ের খবরাখবর আমরা জানিনা। বংশ পরম্পরায় আমরা এই মাজার ও মোকামের দেখভাল করে আসছি। কিন্তু এখন এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে কমিটির লোকজন।
বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। মাস তিনেক আগে একবার অভিযোগ পেয়েছি, খাদিম পরিচয় দিয়ে মোকাম এলাকার খাস জায়গা দখল করে আছে কিছু লোকজন। গোপনে তারা এসব গাছ বিক্রি করে মাজার কমিটির নামে চালিয়ে দিচ্ছে।
মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জ জেলা বন অফিসের ফরেস্ট রেঞ্জার মোঃ ফখরুল আলম খান প্রতিবেদককে জানান, অনুমতি ছাডা গাছ কাটা সম্পূর্ণ বেআইনী। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওযা হবে। একই বক্তব্য দেন উপজেলা বন কর্মকর্তা মিথিশ চক্রবতী।