ক্রেডিট নিয়ে টানাটানি : ৭ দিনের রিমান্ডে আকবর
সময় সিলেট ডট কম
স্টাফ রিপোর্টার :
রায়হান হত্যার মূল অভিযুক্ত এসআই (বরখাস্ত) আকবর আটকের খবর এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। তাকে কিভাবে আটক করা হয়েছে, কে আটক করেছে, পুলিশ না জনতা এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড়। চলছে আটকের ক্রেডিট নিয়ে টানাটানি। সিলেট জেলা পুলিশ তো ক্রেডিটের পুরোটাই নিজেদের দখলে নিয়ে নিতে তৎপর। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সকল ভিডিওচিত্র পুলিশের দাবীকে ম্লান করে দিয়েছে।
ক্রেডিট নিয়ে টানাটানির মাঝে আলোচনায় এসেছেন রহিম উদ্দিন নামের কানাইঘাটের এক যুবক। তিনিই নাকি আকবরকে সীমান্তের ওপার থেকে ধরে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর পক্ষ থেকেও এমনটি জানানো হয়েছে।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার থেকে আকবরকে আটকের আরেকটি ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রহিম উদ্দিনকেও দেখা যায়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রহিম উদ্দিনসহ কয়েকজন গাছপালা ঘেরা একটি পাহাড়ি ছড়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। ওই ভিডিওতে আকবরকে দেখা না গেলেও তার কন্ঠস্বর শোনা যায়। ভিডিওর প্রথমেই আকবরকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়-, ‘ভাই আমি হাসপাতালে পাঠাইছি ভাই’, ‘ভাই আমার ধর্মের ভাই’।
এসময় বিভিন্ন জন আকবরকে আটকের ভিডিও করতে আগ্রহী হলে রহিমকে বলতে শোনা যায়- ‘বেজান নেটে দেও’। এরপর আবার আকবর বলেন, ‘আমি মারি নাই। আমি হাসপাতালে পাঠাইছি’। এসময় রহিম উদ্দিনের পাশে থাকা একজন মোবাইল ফোনে কাউকে কল দেন। এরপর ফোন তুলে দেন রহিম উদ্দিনের হাতে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রহিম উদ্দিন লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির ডোনা সীমান্ত এলাকার মৃত তরফ আলীর পুত্র। আকবরকে খাসিয়াদের কাছ থেকে নিয়ে এসে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি।
এদিকে, সোমবার ভাইরাল হওযা এক ভিডিওতে আকবরের মুখে আর্তনাদ শুনে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘হাম লোক কিয়া ফয়সালা করেগা, ওদার ফয়সালা করে গা…।’ তখন আকবর বলেন, ‘গোপাল খাকে ফোন দে না।’ গোপাল কে? জানতে চাওয়ায় আকবর বলেন, ‘মেরা ভাই গোপাল খা।’ এ কথা বলে আকবর আবারও বলে ওঠেন, ‘মুঝে জান ভিক্ষা দে ভাই।’ তখন ‘চুপ থাক’ বলে তাঁকে শাসানো হয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে ওপারে কে এই গোপাল খা, যাকে ফোন দিতে আকবর বার বার আকুতি জানায়।
এদিকে, আকবরকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক আওলাদ হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে আকবরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানিতে সিলেটের মেট্রোপলিটন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম আকবরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের মামলার প্রধান আসামি আকবর। তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এই মামলায় আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন একজন গ্রেপ্তার আছেন।
আকবরকে আদালতে হাজির করার সময় বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী মানুষের ভিড় ছিল আদালতের আশপাশের এলাকায়। এ সময় অনেককে ‘আকবরের ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে দেখা গেছে। কড়া পুলিশ পাহারায় আকবরকে আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ড মঞ্জুর হলে একইভাবে আদালত থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিলেট নগরীর আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরের দিন ১১ অক্টোবর মারা যান রায়হান। এ ঘটনায় রাতে কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা হয়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা আকবর সাময়িক বরখাস্ত হন। ১৩ অক্টোবর থেকে আকবরকে পাওয়া যায়নি। ২৭ দিন পর রোববার ধরা পড়ার পর আকবরকে একটি ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে, তিনি কানাইঘাটের সুরইঘাট দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ধরা পড়ার সময় আকবরের মুখে দাড়ি, গলায় পুঁথির মালাসহ বেশভূষায় ‘খাসিয়া’ সাজ ছিল।
পুলিশ ও কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকার মানুষজন এই ভিডিও দেখে ধারণা করছেন, এটি প্রথম দিকের ঘটনা। আকবরকে সাদা গাড়ি দিয়ে সেখানে নিয়ে আসা হয়। যাঁরা আকবরকে সেখানে নিয়ে যান, তাঁরা আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের কাহিনি জানতে চেয়েছিলেন।
খাসিয়াপল্লিতে যাতায়াত আছে, ডোনা সীমান্তের একটি গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা ভিডিওটি দেখে বলেন, ডোনা সীমান্তের ওপারে ভারতের তিজাঙ্ঘা। ওই এলাকা পুরোটা খাসিয়াপল্লি। মেঘালয় থেকে সরাসরি গাড়ির যোগাযোগ রয়েছে সেখানে।