রায়হানের শার্ট-মোবাইল উদ্ধারের দাবি মায়ের
সময় সিলেট ডট কম
সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমদের নীল শার্ট ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন মা সালমা বেগম। একইসাথে মামলার সকল আলামত সংগ্রহ করতে পিবিআই’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে রায়হানের মা সামলা বেগম এসব দাবি জানান।
তিনি বলেন, সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের আগের রাতে নীল শার্ট পরেই বেরিয়েছিলেন রায়হান। কিন্তু রায়হানের মরদেহে ছিল লাল শার্ট। যে আঁটসাঁট শার্টে জায়গা হয়নি রায়হানের দেহ। এছাড়া মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় তার মোবাইলও ফিরিয়ে দেয়নি পুলিশ।
এদিকে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন পুলিশ সদস্যের কেউ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি। এতে সর্বোচ্চ শাস্তির ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে না বলে জানান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আইনজীবীরা।
সিলেট কোর্টের সাবেক পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আমরা আশা করেছিলাম আসামিরা দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবে। কিন্তু কোনো আসামিই এখন পর্যন্ত আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়নি। তবে তারা জবানবন্দি না দিলেও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে না।
এদিকে আকবরের রিমান্ডের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত সকলের গ্রেপ্তারের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। এছাড়া তদন্তে কোন অবহেলা থাকলে আরো কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
বৃহত্তর আখালিয়া (১২ হামছায়া) সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মখলিসুর রহমান কামরান বলেন, আমরা চাই ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তারের আওতায় নিয়ে আসতে। একই সাথে পিবিআই’র প্রতি আমরা আস্থা রাখতে চাই। কারণ পিবিআই আমাদের জানিয়েছে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। আর যদি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত না হয়, তাহলে আবারও দেশবাসীকে নিয়ে আন্দোলন করবো।
এর আগে গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান। তাকে ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহীসহ পুলিশ সদস্যরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন।
মামলাটি পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পরে মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়। রায়হানের দেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন মেলে ফরেনসিক রিপোর্টে।