সুনামগঞ্জে বিপাকে বালু শ্রমিকরা
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদীপাড়ের হতদরিদ্র একজন শ্রমিকের নাম জহুর আলী। তিনি গতবছর হাতের সাহায্যে ২০ হাজার ফুট বালু উত্তোলন করে ডাম্পিং করে রেখেছেন নদীর পাড়ের ধানি জমিতে। করোনায় দেশব্যাপী লকডাউনে বিক্রি করতে পারেননি। পরে চার দফা বন্যায় তার বালু পাশের জমিতে ছিটিয়ে পড়েছে। এভাবে পুরান মথুরকান্দি গ্রামের দ্বীন ইসলাম, জালাল মিয়া, আলমগীরসহ অনেকেই প্রায় লাখ ফুট বালি ডাম্পিং করার পর বন্যায় ধানি জমিতে ছিটিয়ে পড়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসন বালি বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে এবং ধানি জমির মালিকরা চাষাবাদের জন্য বালি সরাতে বার বার তাগাদা দিচ্ছেন। না পারছেন বালি বিক্রি করতে, না পারছেন মালিকরা কৃষি জমির মালিকরা চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে ধানি জমিকে। এমন দু’টানায় পড়ে হাপিত্যেশ করছেন হতদরিদ্ররা। পাশের উপজেলা তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতেও বালি উত্তোলন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে প্রশাসনের কাছে দাবি দাওয়া তুলে ধরছেন।
তারা বলছেন, সুদীর্ঘকাল থেকে হাতের সাহায্যে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে বালু-পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু বালি খেকো সিন্ডিকেটের কারণে মহাল বন্ধ থাকায় বালি বিপণন এবং উত্তোলন করতে পারছে না। ফলে শত শত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্থানীয়রা জানান, হাওরপাড়ের শ্রমিকরা নদীর উপর ভরসা করেই আহার যোগান।
জেলা প্রশাসন মহাল বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকরা অসহায় জীবন যাপন করছেন। এছাড়া অনেক শ্রমিক বালি বিক্রি করতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটে আছেন। শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। কর্মহীন হয়ে পড়বে লোকজন। একমুঠো খাবারের কথা বিবেচনা করে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে তাদের বালি উত্তোলন ও বিপণনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন।
পুরান মথুরকান্দি গ্রামের জহুর আলী, দ্বীন ইসলাম, আলমগীরসহ অনেকেই এ প্রতিবেদকের কাছে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেন, আমরা হাতের সাহায্যে বালি তুলে জমিতে ডাম্পিং করে রেখেছিলাম। কিন্তু বালি বিক্রিতে নিষেধ থাকায় বড় অসহায় হয়ে পড়েছি। এদিকে জমির মালিকরা বালি সরাতে বার বার চাপ দিচ্ছেন। বালি সরাতে গেলে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হবে। এমতাবস্থায় বালি বিক্রি করতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। জেলা প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন মানবিক বিবেচনা করে বালি বিক্রি করার সুযোগ সৃষ্টি করার আহবান জানান। জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, বর্তমানে নদী ইজারা নেই। অতএব বালি উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বালি বিপনন করতে হলে বৈধ কাগজপত্র থাকতে হবে।