কোম্পানীগঞ্জে বনশ্রী আদর্শগ্রামে লোলুপ দৃষ্টি, অপরাধ ঢাকতে কলাগাছ রোপণ
কোম্পানীগঞ্জ সংবাদদাতা :
কোম্পানীগঞ্জ সংবাদদাতা : ২০০২ সালে বনশ্রী আদর্শগ্রাম নামে ২২.৭৫ একর জায়গা নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমা গ্রামে স্থাপিত হয় গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প। ১শ’টি পরিবারকে দেওয়া সরকারি এই ২২.৭৫ একর জায়গার প্রতি শুরু থেকেই লোলুপ দৃষ্টি ছিল স্থানীয় পাথর খেকোচক্রের। যে কারণে ২০০৫ সালে ১১ পাথরখেকোকে চিহ্নিত করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে কোম্পানীগঞ্জ ভূমি অফিস। বর্তমানে এই চক্রের মূল নেতৃত্বে আবারও শুরু হয়েছে সরকারি এই জায়গা থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন। সরকারের দেওয়া এ জায়গায় বসবাস করেন নিরীহ মানুষ। তাদের জনবল বা আধিপত্য না থাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক এই চক্রটি দখল করে নিচ্ছে তাদের জমি। যার ফলে উৎমা বাজারের সাথে গ্রামের সংযোগ সড়ক প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে ঝুঁকির মুখে।
এদিকে সোমবার (২৩ নভেম্বর) সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম উৎমা এলাকা পরিদর্শনের খবর পেয়ে রাতারাতি ১২ ঘন্টার ভিতর এই এলাকায় রোপন করা হয় কলাগাছ। সরেজমিনে দেখা যায়- উৎমা ছড়ার পশ্চিম পাশে লিজ বহির্ভূত জায়গা থেকে পাথর উত্তোলন করে যে গর্ত হয়েছিল, সেগুলো ভরাট করে রাতারাতি কলাগাছের বাগান তৈরি করা হয়েছে। আবার একদিনের এইসব কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান- জোরপূর্বক তাদের বাড়ি থেকে এসব কলার গাছ কেটে এনে এখানে রোপণ করা হয়েছে। রোববার রাত ৯টা থেকে সকাল পর্যন্ত এইসব কলাগাছ রোপণ করা হয়। যাতে জেলা প্রশাসক দেখলে বুঝতে না পারেন এখান থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন করা হয়। উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জেলা প্রশাসকের অফিসে পাঠানো প্রতিবেদনেও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় যে, প্রভাবশালী পাথরখেকোদের দ্বারা জোরপূর্বক সরকারি এসব জমি দখল করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। আর এই পাথর খেকোদের চিহ্নিত করে মামলা করেছিল ভূমি অফিস।
এই চক্রটি বনশ্রী আদর্শগ্রাম ধ্বংসের পাশাপাশি রাতে ও দিনে উৎমা কমলা বাগান সীমান্ত ও মাজেরগাঁও সীমান্ত এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন করছে। আর এইসব এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন ও পরিবহন করতে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে। বিজিবি উৎমা ক্যাম্প থেকে আদর্শগ্রামের দূরত্ব ৩/৪শত গজ। আবার এই আদর্শগ্রামের সীমান্তে রয়েছে বিজিবির টহল পোস্ট। অন্যদিকে কমলা বাগানের দূরত্ব ৬/৭শত গজ হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- এই চক্র প্রতিদিন কমলা বাগান সীমান্তের এপার ওপার থেকে প্রায় ৮০-১০০ গাড়ি পাথর উত্তোলন করে থাকেন। ২২০ ফুটের এসব গাড়ি বিক্রি হয় ২১ হাজার টাকায়। প্রতি গাড়ি থেকে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা পেয়ে থাকেন ২ হাজার টাকা আর বিজিবির মেস ভাতার নামে নেয়া হয় আড়াই হাজার টাকা। এভাবে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি হয়। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত পিলারের কাছ থেকে হাইড্রলিক ট্রাক দিয়ে পাথর পরিবহন করা হলেও বিজিবি তাতে বাঁধা দেয় না। মাঝে মধ্যে লোক দেখাতে ছোট ৩৫ ফুটের ট্রলি ধরে ক্যাম্পে এনে পাথর রেখে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক উৎমা আদর্শগ্রাম এলাকার ১২৫৭-৩ঝ পিলার থেকে ৫শ পিলার এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে তাদের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সরেজমিনে উৎমা ছড়ার পূর্বপাড়ের বাঁধ থেকে পাথর উত্তোলন করার চিহ্ন দেখতে পান। সীমান্ত এলাকা ও লিজ বহির্ভূত এসব যায়গা থেকে যাতে আর কেউ পাথর উত্তোলন করতে না পারে সে জন্য তিনি উপস্থিত বিজিবি সদস্যদের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে উৎমা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডারকে ফোন দিলে তিনি সরেজমিন গিয়ে কথা বলার জন্য আহবান করেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরশাদ মিয়া বলেন- বিষয়টি আমরা দেখছি। সরকারি জমি ধ্বংস করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।