৫০০ বছরের প্রথা : নারীর উপর দিয়ে হাঁটলেই সন্তান লাভ
সংবাদ সংগ্রহ :
সংবাদ সংগ্রহ : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে আজব সব রীতিনীতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রীতি-নীতিতে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। যা আপনার বা আমার কাছে অবাক করা বিষয় তা হয়তো অন্যদের কাছে পরিচিত বিষয়। এমনই এক আজব রীতি ৫০০ বছর ধরে মেনে আসছে ভারতের ছত্তীসগঢ়ের এক গ্রামের বাসিন্দারা। সন্তান লাভের আশা অনেকেই অনেক কিছু করে থাকে। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাও তাল মিলিয়ে এনেছে নানান চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে সে সব কিছুর তোয়াক্কা না করেই এখনো অনেক মানুষ ডুবে আছেন কুসংস্কারের ডোবায়। ছত্তীসগঢ়ের ধমতরী জেলার নারীরা সন্তান লাভের আশায় বিশেষ এক প্রথা মেনে চলছেন।
নারীরা রাস্তায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকবেন। তাদের পিঠ মাড়িয়ে চলে যাবেন পুরোহিত ও ওঝার দল। ছত্তীসগঢ়ের এক মেলায় এমনই অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়। এ ভাবেই নাকি সন্তানের ইচ্ছেপূরণ হয় এলাকার আদিবাসী নারীদের। এই তথাকথিত আধুনিক সময়েও ধর্মীয় কুসংস্কারের শিকড় যে মানুষজনের মনের কতটা গভীরে গেঁথে রয়েছে, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে ছত্তীসগঢ়ের এই প্রাচীন প্রথা।
মহামারির মধ্যেও বাদ যায় নি প্রথা মানা। সংক্রমণ এড়াতে শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা বা মুখোশ পরার প্রশাসনিক সতর্কবার্তা এড়িয়েই চলছে এই মেলা। সম্প্রতি সেই মেলারই একটি ছবি দেখে হতবাক বিশ্ব। এই মেলায় আশপাশের ৫২টি গ্রাম থেকে জড়ো হন বিভিন্ন বয়সের নারীরা।
অঙ্গারমতী দেবীর মন্দিরের সামনের রাস্তায় প্রায় দুইশ নারী উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন। আর মন্ত্র পড়তে পড়তে তাদের পিঠের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছেন পতাকাধারী পুরোহিত-ওঝারা। দেবী অঙ্গারমতীর কাছে এ ভাবে প্রার্থনা করলেই নাকি সন্তানসম্ভবা হবেন তারা। স্থানীয়দের একাংশের মনে বদ্ধমূল সে ধারণা।
ভারতের অধিকাংশ মানুষ সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং এখনো রয়েছে আধুনিকতা থেকে বহু দূরে। এসব গ্রামের মানুষেরা বেশিরভাগই শিক্ষার আলো দেখেন নি। আর যারা দেখেছেন তারাও দ্রোতে গা ভাসিয়েছেন। কুসংস্কার থেকে অন্যদের তো দূরে থাক নিজেরাই বের হতে পারেন নি। মূলত দেওয়ালির পর প্রথম শুক্রবার বসে মড়ই মেলা। স্থানীয়দের মতে, এটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো প্রথা। একইসঙ্গে স্থানীয় দেবী অঙ্গারমতীর আরাধনাও চলে। তাতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষের জমায়েত হয়। তবে মেলায় নারীদের উপর পুরোহিত-ওঝার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যে স্তম্ভিত বহু নেটাগরিক। ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী এলাকার ওই প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
প্রাচীন এই প্রথা নিয়ে সারা বিশ্বের মাথা ব্যথা হলেও ভাবলেশহীন এই অঞ্চলের মানুষেরা। সুপ্রাচীন এই প্রথা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখার কথাই বলেছেন বাসিন্দারা। তিনি বলেন, অনেকের বিশ্বাস, গত ৫০০ বছর ধরে এই মেলা বসছে। আমরা সেই ঐতিহ্যকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মানুষজন নিজের বিশ্বাসেই এখানে জমায়েত হচ্ছেন।
সেখানকার মানুষের বিশ্বাস নারীদের উপর দিয়ে পুরোহিত-ওঝাদের হেঁটে যাওয়ার পর অনেকেই সন্তানধারণ করেছেন। যা সত্যিই অলৌকিক ব্যাপার। তবে এর তেমন কোনো সঠিক যুক্তি কিংবা প্রমাণ মেলে নি এখনও। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ ধরনের প্রথা নারীদের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকারক। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত না করেই স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা প্রসারের কাজ করে যাচ্ছেন সচেতন মহল।
অনেকের মতেই এই ধরনের প্রথা অমানবিক এবং অবৈজ্ঞানিক। এতে যে নারীরা মাটির উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছেন, তাদের গুরুতর আঘাত লাগারও আশঙ্কা রয়েছে। কুসংস্কারের বশে মানুষজন যেন মধ্যযুগেই পড়ে রয়েছেন। অনেক সচেতন মহল থেকেই এই প্রথা বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা ভক্তি ভরেই এই প্রথা যুগের পর যুগ ধরে পালন করে আসছেন।