নগরীতে পথচারীদের মধ্যে ফুটপাত ব্যবহার বাড়ছে
আহমাদ সেলিম :
নগরীর সড়ক ও ফুটপাত দখল মুক্ত হওয়ায় পথচারীদের মধ্যে ফুটপাত ব্যবহার বাড়ছে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ নিরাপদ হিসেবে ফুটপাত দিয়ে চলাফেরা করছেন। তবে, কিছু প্রতিবন্ধকতা মুক্ত হলে সিলেট নগরীর ফুটপাত চলাফেরার জন্য আরো উপযোগী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ।
ছোট শহর হলেও প্রাচীন নগরী হিসেবে সিলেটের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট। এ অঞ্চল বহু ধারায় উৎকর্ষিত, সৌন্দর্যমন্ডিত। সেই সৌন্দর্যপথে বড় বাধা ছিলো ফুটপাত। বছরের পর বছর নগরীর সবগুলো ফুটপাতে পণ্য সাজিয়ে ব্যবসা করেছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, স্থায়ী দোকানিরা দোকানের মালপত্র ফুটপাতে রেখে দেয়ায় পথচারী চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতো। হকাররা পণ্য সাজিয়ে ফুটপাত দখল করে রাখায় ভিড়ের কারণে পথচারীদের হেঁটে যাওয়ার সুযোগ ছিলোনা। তাই বাধ্য হয়ে বেশির ভাগ পথচারী হাঁটতেন সড়ক দিয়ে।
এদিকে, শহরে এলেই প্রতিদিন চোখে পড়ে- জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার এলাকায় ফুটপাত দখল করে বসেছে কাপড়, জুতা, চটপটি, চা, ফলমূল ব্যবসায়ীরা। জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে একেবারে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত একপাশের ফুটপাত দখল করে বসেছে শীতের পুরনো কাপড়ের দোকানের সারি। সাথে ছিলো জুতার দোকান। খোদ বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও জেলা প্রশাসকের প্রধান ফটকের ফুটপাতের একটা বড় অংশ দখল করে ছিলো কাপড় থেকে শুরু করে সবধরণের অস্থায়ী দোকানীরা। এছাড়া নগরীর জিন্দাবাজার থেকে আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত একইভাবে ছিলো ফুটপাত দখল করে ব্যবসা। ফলে ফুটপাতে যাতায়াত করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
ফুটপাত দখলে চলে যাওয়ায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মতো স্কুলগামী শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে সড়কের উপর দিয়ে চলাফেরা করতো। এতে অনেক সময় ঘটতো দুর্ঘটনা। সিলেটের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, কোর্টপয়েন্ট দখলমুক্ত করতে বহু আন্দোলন করেছেন সিলেটের ব্যবসায়ীসহ সচেতন নাগরিকমহল। অবশেষে গতবছরের ২১ ডিসেম্বর সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে সিলেট নগরী দখলমুক্ত হয়। স্বস্তি ফিরে আসে পথচারীদের মাঝে। তারা ফুটপাত ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছেন। ফুটপাত জঞ্জালমুক্ত থাকায় প্রতিদিন ভোরে প্রাতঃভ্রমণ হিসেবেও ফুটপাতকে বেছে নিয়েছেন অনেকে। তবে ফুটপাত দখলমুক্ত হলেও কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকেই গেছে।
জিন্দাবাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং সরকারি কিন্ডারগার্টেন সরকারি প্রাথমিক স্কুলের অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেছেন- জিন্দাবাজারে রয়েছে সাইকেল ও সাইকেলের পার্টস বিক্রির বেশ কয়েকটি দোকান। একইভাবে আছে টেলিভিশন ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর দোকান। তাদের স্থায়ী দোকান থাকলেও ফুটপাত দখল করে তারা মালামাল রাখছেন সবসময়। ফলে পথচারীসহ স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া নগরীর মেডিকেল ও রিকাবীজার সড়ক এলাকায় ফুটপাত দখল করে চলছে ফলসহ আরো কিছু ব্যবসা।
জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকার পথচারী আশরাফ, ইকবাল, রুমেল, শাওন বলেন- ফুটপাত দখলমুক্ত হবার ফলে মানুষ নিয়ম করে ফুটপাত ব্যবহার করছেন। সবার পদচারণায় ফুটপাত সবসময় মুখর থাকে। অথচ পূর্বে নগরীর সব ফুটপাত ও সড়ক দখল করে রাখায় ফুটপাত দিয়ে চলাচলের অধিকার আমরা হারিয়েছিলাম। এখনো যারা নিজস্ব দোকানের সামনে মালামাল রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। একইভাবে ফুটপাত দিয়ে চলাচলকারী ডা. তায়েক আহমেদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন জানান- ফুটপাত দিয়ে চলাচলে অভ্যস্ত হলে সড়কের শৃংখলা ফিরে আসবে, কমবে দুর্ঘটনা।
ফুটপাত দখলমুক্ত হবার পর থেকে নগরীতে প্রতিদিন ভোরে প্রাতঃভ্রমণও বেড়েছে। সকল বয়েসি মানুষ ভোরবেলা নিরাপদে হাঁটতে পারছেন। এজন্য তারা ব্যবহার করছেন জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা এলাকার ফুটপাতকে। অথচ এটি কখনো সম্ভব ছিলো না পূর্বে।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) জিন্দাবাজার এলাকায় প্রাতঃভ্রমণকারী মইনুল ইসলাম আসাদ, নোমান আহমেদ, হিমেলসহ কয়েকজন বলেন- ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সুযোগ থাকায় ডায়াবেটিক রোগীসহ চাকুরীজীবীরা নিয়মিত হাঁটছেন। দেরীতে হলেও আমরা সেই সুযোগ পেয়েছি।
এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান- শহর আরো সুন্দর হবে। পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই নিরাপদে ফুটপাত ব্যবহার করতে পারবেন। আর যারা দোকানের সামনে এখনো মালামাল রাখছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।