আশা-নিরাশার মাঝে সিলেট ক্রিকেট গ্রাউন্ডস-২ এর যাত্রা শুরু
স্পোর্টস রিপোর্টার :
মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে আরেকটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম পেলো সিলেট। লাক্কাতুরা চা বাগানের মাঝখানে গড়ে উঠা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ঘেষা এই মাঠকে শুরুতে ‘আউটার স্টেডিয়াম’ (খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য) হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল। তবে নবনির্মিত এই স্টেডিয়ামের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বিশ্বমানের হওয়ায় এটিকেও আন্তর্জাতিক ভেন্যু করতে চায় বিসিবি। তাই এটির নামও বদল করে রাখা হয়েছে সিলেট গ্রাউন্ডস-২। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে গ্রাউন্ডস-২ এর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন- দেশের একমাত্র গ্রিন গ্যালারি সমৃদ্ধ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মতো এই স্টেডিয়ামও সবাইকে মুগ্ধ করবে। বদলে দেবে সিলেটের ক্রিকেটের চেহারা। তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন অভিমতও আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের সাবেক ক্রিকেটাররা বলেন, মাঠ হচ্ছে এটি খুবই আশার কথা। কিন্ত শুধু মাঠ দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ক্রিকেটের লাভ কি হচ্ছে? মাঠে তো খেলা নেই। বছরের পর বছর মাঠ পড়ে থাকে খালি। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ কিংবা ঘরোয় কোন প্রতিযোগিতাও নিয়মিত হয়না। আন্তর্জাতিক আয়োজনও নামমাত্র হয়। মাঝে মাঝে কয়েকদিনের দায়সারা আয়োজন করেই দায় সারা হয়। অথচ চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতা ঠিকই হয়।
কয়েকদিন আগে জাতীয় ক্রিকেটার ও সিলেটের দুই লোকাল বয় অলক কাপালী ও এনামুল হক জুনিয়রও মাঠ খালি থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। নিয়মিত লীগ না হওয়ায় চরম হতাশা তাদের। তারা বলেন- সিলেটের ঘরোয়া লীগগুলো নিয়মিত না হলে খেলোয়াড় বের হবেনা। এতে একসময় জাতীয় দলে সিলেটের প্রতিনিধিত্ব শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবল, ভলিবল, কাবাডিসহ অন্যান্য খেলারও একই চিত্র। নিয়মিত খেলার প্রতিযোগিতামূলক আসর বসে না। ক্লাবগুলোও নিষ্ক্রিয়। শখের বশে বা পেশাদারি মনোভাব নিয়ে যাঁরাই এসব খেলার অনুশীলন করেন, তাঁদের তা করতে হয় নিজেদের চেষ্টায়।
এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ক্লাবগুলো ও খেলোয়াড়রা একে অপরকে দোষারোপ করে প্রায় সময়। ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা বলেন- সিলেটে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বা স্পন্সর প্রতিষ্ঠান একবারেই নেই। তাদের সহযোগিতা মেলেনা, তাই নিয়মিত খেলার আয়োজন হয়না। অন্যদিকে ক্লাব কর্মকর্তা কিংবা খেলোয়াড়দের ভাষ্য, ক্রীড়া সংস্থার অনীহার কারণে খেলা হয় না। একে অপরের দোষারোপের মাঝেই চলছে সিলেটের ক্রিড়াঙ্গন।
এমন আশা নিরাশার মাঝে শনিবার সিলেট গ্রাউন্ড-২ এর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. মাসুদ করিম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি নিশারুল আরিফ, জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ প্রমুখ।
উদ্বোধনকালে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল জানান- ‘সিলেট ক্রিকেট গ্রাউন্ডস-২’র আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এর কাছে আবেদন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই আইসিসি’র কাছ থেকে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে এটির স্বীকৃতি পেয়ে যাবো।
বিসিবি ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গেছে- এ দুই স্টেডিয়ামের পাশে অনুশীলনের জন্য নতুন আরেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন থেকে এরই মধ্যে ৩ শতক জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অনুশীলন স্টেডিয়াম নির্মিত হলে সেখানে একসঙ্গে ৭০ জন করে প্রতিদিন ২১০ জন ক্রিকেটার অনুশীলন করতে পারবেন। নির্ধারিত ফি প্রদান করে যে কোনো ক্লাবই সেখানে ক্রিকেটারদের অনুশীলন করানোর সুযোগ পাবে।
এছাড়াএ এলাকায় একটি ক্রিকেট একাডেমী গড়ে তুলবে বিসিবি। আর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নির্মাণ করবে ৪০ জনের আবাসনের সুবিধা সংবলিত ডরমিটরি। যাতে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ক্রিকেটাররা এসে এখানেই থাকতে পারে। এছাড়া স্টেডিয়ামগুলোর পাশেই দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত একটি বিদ্যালয় নির্মাণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এ বিদ্যালয়ের জন্য বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলতে আসা শিক্ষার্থীদের যাতে পড়ালেখায় বিঘ্ন না ঘটে, সে লক্ষ্যে এ বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হচ্ছে।