মেসিকে জড়িয়ে বার্সাকে অপমান করেছে নেইমারের ক্লাব
স্টাফ রিপোর্টার :
ব্যাপারটাকে হোয়ান লাপোর্তার নির্বাচনী চালও ধরে নিতে পারেন। আবার ধরে নিতে পারেন, ক্লাবের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে নিয়ে অন্য ক্লাবের এভাবে কথা বলায় সত্যি সত্যিই অপমানিত বোধ করছেন বার্সেলোনার সভাপতি পদপ্রার্থী। আবার দুটির মিশেলও হতে পারে।
লাপোর্তা হয়তো লিওনেল মেসিকে জড়িয়ে পিএসজির কথায় সত্যি সত্যিই আহত, তবে পিএসজির কথায় শঙ্কায় ভুগতে থাকা বার্সা সমর্থকদের কাছে নিজেকে ‘মেসাইয়া’ রূপে হাজির করতে, তাঁদের ভরসার জায়গা দখল করে নির্বাচনে জেতার জন্য সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছেন না লাপোর্তা, সেটিই–বা কে বলতে পারে?
কী বলেছেন লাপোর্তা? পিএসজিকে ধুয়ে দিয়েছেন। এর আগে বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে নিয়ে গেছে, সেটি নিয়ে ফরাসি ক্লাবটার ওপর একটু রাগ এখনো বার্সার কর্মকর্তাদের কথায় টের পাওয়া যায়।
নেইমারের ক্লাব এবার হাত বাড়াতে চাইছে মেসির দিকেও। তারা যে ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে চায়, সেটি প্রকাশ্যেও জানাতে কুণ্ঠা নেই কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটির। কিন্তু পিএসজির এসব কথাকে বার্সার জন্য অপমানজনক মনে হচ্ছে লাপোর্তার কাছে।
আগামী মৌসুমে লিওনেল মেসি কোথায় খেলবেন—ইউরোপিয়ান ফুটবলে গত কয়েক মাসেই বেশ আলোচিত প্রশ্ন এটি। গত আগস্টে মেসির বার্সা ছাড়তে চাওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে ক্লাবের উদ্দেশে ব্যুরোফ্যাক্স পাঠানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই আলোচনা আর গুঞ্জন যেন থামছেই না।
থামবেই-বা কেন? মেসির ভবিষ্যৎ যে ঠিক হওয়ার এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই। আগামী ২৪ জুন মেসি ৩৪-এ পা দেওয়ার দিন ছয়েক পরই বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তিটা শেষ হয়ে যাবে তাঁর। চাইলে ১ জানুয়ারি থেকেই যেকোনো ক্লাবের সঙ্গে দলবদলের আলোচনায় বসতে পারেন মেসি, সে জন্য বার্সার অনুমতিরও দরকার নেই।
তাঁর চুক্তি নবায়ন নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হচ্ছে না। হওয়ার কথাও নয়, উচ্চবাচ্চ্য করবে কে? বার্সার দিক থেকে সে আলোচনা করার এখতিয়ার যে পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির, সেই সভাপতি পদই যে খালি! যাঁর সঙ্গে মেসির ঝামেলা ছিল বলে শোনা যেত, বার্সার সাবেক সেই সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ পদত্যাগ করেছেন আগেই।
এই মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির মধ্যে নির্বাচন ঝুঁকিপূর্ণ বলে সেটি পিছিয়ে গেছে। নির্বাচনের নতুন দিন ঠিক হয়েছে ৭ মার্চ। স্পেনে গুঞ্জন, নতুন সভাপতি নির্বাচনের পর তিনি ক্লাবকে আবারও মাঠে সর্বজয়ী করতে কী কী পদক্ষেপ নেবেন, দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে কী ‘স্পোর্টিং প্রজেক্ট’ নেবেন, সেসব শুনেই মেসি চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত নেবেন।
মেসি নিজেও কদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বার্সা সমর্থকদের আশ্বস্ত করেছেন, জুনের আগে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
কিন্তু জুনে নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত যদি হয় বার্সায় না থাকার? এমনিতেই তাঁকে পেতে ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজি আগ্রহী বলে শোনা যায়। তবে গত কিছুদিনে পিএসজির নামটাই মেসিকে জড়িয়ে বেশি শোনা গেছে।
নেইমার কিছুদিন আগে জানিয়েছেন- আগামী মৌসুমে মেসির সঙ্গে আরেকবার খেলতে চান। দেনায় জর্জর বার্সার যেহেতু এখন নেইমারকে কেনার সামর্থ্য নেই, নেইমারের ওই কথার পর তাই মেসির পিএসজিতে যাওয়ার গুঞ্জন ডালপালা মেলেছে।
এর মধ্যে পিএসজির ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দোর কথা গুঞ্জন আরও উসকে দিয়েছে। গত সপ্তাহেই মেসিকে পিএসজির কিনতে চাওয়া না চাওয়া নিয়ে প্রশ্নে লিওনার্দো বলেছেন- ‘মেসির মতো গ্রেট খেলোয়াড়দের সব সময়ই দলে টানতে চায় পিএসজি।’
ব্যস, আগামী মৌসুমে নেইমার, মেসি আর কিলিয়ান এমবাপ্পের ত্রিফলা কেমন হতে পারে, সেটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।কিন্তু পিএসজির এভাবে মেসিকে নিয়ে কথা বলা পছন্দ হচ্ছে না লাপোর্তার।
আগামী ৭ মার্চ নির্বাচনে বার্সার তিন সভাপতি প্রার্থীর একজন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, ভিক্তর ফন্ত আর লাপোর্তার মধ্যে কোনো একজনই বসবেন বার্সা সভাপতির চেয়ারে।
এর আগে ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বার্সার সভাপতির দায়িত্ব পালন করা লাপোর্তা পিএসজির মেসিকে ঘিরে এসব মন্তব্য নিয়ে বলেছেন- পিএসজির এসব মন্তব্য বার্সার জন্য অপমানজনক, এগুলো বার্সাকে অস্থিতিশীল করছে।
‘আমি পড়েছি যে পিএসজির (আর্থিক বিবরণীতে) ক্ষতি হয়েছে বলে লিখেছে। অথচ তারা কীভাবে (মেসিকে কেনার মতো) এত বড় বিনিয়োগ করবে, সেটা নিয়ে আমরা এখানে কথা বলছি। যা-ই হোক, তাদের প্রতি আমার আহ্বান, আমরা একে অন্যের প্রতি সম্মান দেখানোর স্বার্থে তারা যেন বার্সাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা না করে। আমরা এমন কিছু তো করিনি যেটা দেখে মৌসুমের মাঝপথে ওদের মেসিকে কেনার পরিকল্পনা করার কথা মনে হতে পারে’—স্পেনের জাতীয় সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠান টিভিই-তে বলেছেন লাপোর্তা।
পিএসজি ও ম্যানচেস্টার সিটিকে নিয়ে ইউরোপিয়ান ফুটবলে বড় সমালোচনা, দুটি ক্লাব রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। ম্যান সিটি আবুধাবির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অধীনে, পিএসজি কাতারের।
সেই প্রসঙ্গ টেনে পিএসজিকে ধুয়েও দিয়েছেন লাপোর্তা, ‘পিএসজি জনসমক্ষেই যে মেসিকে কিনতে চাওয়ার কথা বলছে, সেটা বার্সার জন্য অপমানজনক। তার ওপর কথাটা এমন একটা ক্লাবের দিক থেকে আসছে, যারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলে, নিয়ম এড়িয়ে যায়।’
নেইমারের ক্লাবকে হুমকিও দিয়ে রেখেছেন বার্সার সভাপতি প্রার্থী, ‘এমন হলে আমাদের উয়েফা ও ফিফার সঙ্গে কথা বলতে হবে। পিএসজির এটা (মেসিকে নিয়ে কথা বলা) থেকে দূরে থাকতে হবে। ওর ব্যাপারে অন্য একটা ক্লাব কথা বলবে, এটা সৌজন্যবিবর্জিত।’ এরপরের কথাটা অবশ্য লাপোর্তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ জাগায়, ‘তার ওপর এখন এসব কথার জবাব দেওয়ার মতো সভাপতিও বার্সার নেই।’
বার্সার তিন সভাপতি প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারণায় মেসির চুক্তি নবায়নের দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে লাপোর্তা সেটির পাশাপাশি আরেকটি কাজও করেছেন, বিতর্কিত কাজ বা মন্তব্য করে বার্সার ‘শত্রু’ ক্লাবকে ছোট করে দেখানো, যাতে বার্সা সমর্থকদের মন পাওয়া যায়।
এর আগে রিয়াল মাদ্রিদের স্টেডিয়াম সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সামনে অনেক বড় ব্যানার টানিয়েছেন। মাদ্রিদ সেটির সমালোচনা করলেও বার্সা সমর্থকদের অনেকেই তাতে মজা পেয়েছেন। রিয়ালকে চোখ উঁচিয়ে কথা বলতে পারে বার্সা—এমন একটা ইঙ্গিত ছিল তাঁর সে কাজে।
এবার বার্সার সভাপতি না হয়েও সভাপতির ঢঙে পিএসজিকে এভাবে জবাব দেওয়াও যে লাপোর্তার বার্সা সমর্থকদের মন জেতার আরেকটা চেষ্টা নয়, তা নিশ্চিত করে কে বলতে পারবে?