হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি
সময় সংগ্রহ :
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও মেরামতকাজ শুরু করার কথা গত ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার এক মাসের বেশি সময় পার হলেও সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধের সব প্রকল্পে কাজ শুরু করা হয়নি। এ পর্যন্ত ৮টি হাওরের ১৬৯টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৫০টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে।
কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন- ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ঘুষ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করতে হয়েছে। এতে পিআইসি গঠনে দেরি হয়ে যাওয়ায় ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করতে দেরি হয়ে গেছে। তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) বলছে- হাওর থেকে দেরিতে পানি নামার কারণে জরিপ, প্রাক্কলন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন যথাসময়ে করা যায়নি। ফলে কাজ তুলনামূলকভাবে কিছুটা পিছিয়েছে। কিন্তু দেরিতে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় কৃষকেরা বোরো ফসলরক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পাউবো, উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- এ উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল, ধানকুনিয়া, জয়ধনা, সোনামড়ল, গুরমা, গুরমার বর্ধিতাংশ, ঘোড়াডোবা, কাইলানী এই আটটি হাওর সুনামগঞ্জ পাউবোর অধীনে রয়েছে। এই ৮ হাওরে প্রকল্পের সংখ্যা ১৬৯টি। এসব প্রকল্পকাজের জন্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জরিপ, প্রাক্কলন তৈরি ও পিআইসি গঠন শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পিআইসি কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করে তা চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। এ উপজেলার ৮টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ১৬৯টি প্রকল্পকাজের মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৫০টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন- কাগজে–কলমে পিআইসি গঠন করার কাজ শেষ দেখানো হলেও বাস্তবে পিআইসি গঠনসহ সব কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রতিটি পিআইসির কাজ নিতে গিয়ে এ কাজ বাস্তবায়ণকারীদের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার করে উৎকোচ দিতে হয়েছে। আর এ জন্য আজ–কাল করতে করতে বাঁধের কাজ পিছিয়েছে। ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলে মাশুল গুনতে হবে কৃষকদের। তাই আর দেরি না করে অবিলম্বে সব প্রকল্পের কাজ শুরু করা উচিত।
উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক এস এ বিলকিস বলেন- প্রকৃত কৃষকদের নিয়েই পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আনা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি গুজব ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়।
ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান বলেন- ‘প্রকৃত কৃষকদের নিয়ে পিআইসি গঠনসহ সব কাজ নীতিমালা অনুযায়ী করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি। এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা আমার কাছ থেকে বিভিন্নভাবে বাঁধের প্রকল্পকাজ নেওয়ার চেষ্টা করেও বেআইনিভাবে তা নিতে পারেননি। নিজেদের সুবিধা হাসিল হয়নি—এমন ব্যক্তিরা বাঁধের কাজ নিয়ে গুজব রটাতে পারেন। নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ধরমপাশা উপজেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক আলা উদ্দিন বলেন- ‘হাওরে একবার ফসলডুবি হলে এই বিপর্যয় পাঁচ বছরেও কাটিয়ে ওঠা যায় না। তাই দেরি না করে দ্রুত সব প্রকল্পের কাজ শুরু করে তা যথাসময়ে শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।’
সৌজন্যে : দৈনিক প্রথম আলো