সিলেটে এলো করোনা ভ্যাকসিন : ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে প্রয়োগ
স্টাফ রিপোর্টার :
সংরক্ষণ নিয়ে জটিলতার অবসান হওয়ার পর অবশেষে করোনাভাইরাসের টিকা সিলেটে এসে পৌঁছেছে। রোববার (৩১ জানুয়ারি) বেক্সিমকো ফার্মার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কাভার্ডভ্যানে করে পৌনে ৩ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সিলেটে আনা হয়।
বেলা পৌনে ১টার দিকে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাজিয়া সুলতানা ও সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল ভ্যাকসিনের কার্টুনগুলো গ্রহণ করেন। এরপর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্প্রসারিত টিকাদান প্রোগ্রাম (ইপিআই) ভবনে করোনার টিকা রাখা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সিলেটে আসা ২৩ কার্টুন ভ্যাকসিনের মধ্যে ১৯ কার্টুন নিয়মিত এবং বাকি ৪ কার্টুন অতিরিক্ত হিসেবে আনা হয়েছে। প্রতি কার্টুনে ১২শ ভায়েল করে করোনার ভ্যাকসিন রয়েছে। প্রতি ভায়েলে ১০ ডোজ করে করোনার টিকা রয়েছে। সেই হিসেবে সিলেটে নিয়মিত বরাদ্দের ২ লাখ ২৮ হাজার ডোজ করোনা টিকা এসেছে। আর অতিরিক্ত হিসেবে এসেছে আরও ৪৮ হাজার ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে পৌনে তিন লাখ ডোজ করোনার টিকা সিলেটে এসেছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর তিন হাসপাতালের ১৩টি বুথে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
গত শুক্রবার সিলেটে করোনার টিকা আসার কথা থাকলেও শনিবার নগরীতে বিদ্যুৎ না থাকায় ঢাকা থেকে টিকা আনা হয়নি। করোনার টিকাগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় বলে বিদ্যুৎ ছাড়া তা সম্ভব হয় না।
জেলা সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল গণমাধমে বলেন- ‘মোট ১৯০টি কার্টনে ২ লাখ ২৮ হাজার ডোজের টিকা বুঝে পেয়েছি। প্রতি কার্টুনে ১২০০ ভায়াল আছে। প্রতি ভায়ালে ১০টি ডোজ আছে। ভ্যাকসিনগুলো আমাদের ইপিআই কক্ষে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আপাতত সেখানে পুলিশ প্রহরা আছে।’
তিনি জানান- সিলেটে প্রথম দফায় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সিলেট করোনার ভ্যাকসিন ১৫৩টি কেন্দ্রে বুথের মাধ্যমে প্রদান করা হবে যার মধ্যে সিলেট নগর এলাকায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ ডা. শাসসুদ্দিন হাসপাতাল, বিনোদিনী নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও সদর উপজেলায় মোট ২৫টি কেন্দ্র রয়েছে। সিলেটে করোনা চিকিৎসার জন্য বরাদ্ধকৃত শামসুদ্দিন হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথমে টিকা পাবেন বলে জানা গেছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন- ২২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ফ্রিজে টিকা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। টিকা দানে প্রতিটি কেন্দ্রে দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। টিকাদান পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে তার নেতৃত্বে চিকিৎসকের সাতজনের একটি টিম থাকবে। এছাড়াও ইতোমধ্যে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- জেলা ও মহানগর এলাকার জন্য পৃথক দুটি কমিটিও করা হয়েছে। মহানগর এলাকায় ২২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক সিলেট কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সদস্য সচিব প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের উপ পরিচালক।
দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। আর সিলেটে প্রথম শনাক্ত হয় একই বছরের ৫ এপ্রিল। রোববার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৯৮৮জনের। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৯ হাজার ৫৪৭ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৫৩৩ জন, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৯৮২ জন ও মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৯২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৭৫ জন।
প্রথমদিকে করোনা নিয়ে সিলেটে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিলেও এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। তবে আতঙ্ক কমলেও এখনো অব্যাহত আছে সংক্রমণ। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে নতুন করে ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যে দেখা দেওয়া করোনার নতুন ধরণ স্ট্রেইন সিলেটেও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বিশেষত যুক্তরাজ্য থেকে নিয়মিত প্রবাসীরা সিলেটে আসায় এমন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। নিয়মিত ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করছে লন্ডনের ফ্লাইট। সেখানে যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।