আদালতে স্বীকারোক্তি : ‘সাংবাদিককে ফাঁসাতে’ ছেলেকে লুকিয়েছিলেন বাবা
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের মাধবপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ছেলেকে অবৈধ পথে ভারতে পাঠিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন বাবা। সেখানে প্রায় ৫২ দিন থাকার পর স্থানীয় (ভারতের) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপের মুখে গত ৩১ জানুয়ারি ফের অবৈধ পথে বাংলাদেশে ফেরত আসেন জাহিদুল ইসলাম আকাশ নামের ওই ব্যক্তি।
জাহিদুল ইসলাম আকাশ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথারিয়া চা বাগানে হাত, পা, চোখ বাধা অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি জাহিদুল ইসলাম আকাশকে হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। আদালতে তার দেওয়া জবানবন্দিতে অপহরণ নাটকের বিষয়টি প্রকাশ হয়।
জাহিদুল ইসলাম আকাশের জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাধবপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সাঈদুর রহমান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক আবুল হোসেন সবুজ ও তার চাচাত ভাই আব্দুল হামিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মামলা মোকদ্দমা ও জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে সাংবাদিক আবুল হোসেন সবুজকে ফাঁসাতে আব্দুল হামিদের ছেলে জাহিদুল ইসলাম আকাশ অপহরণ হয়েছে বলে গত ২৮ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আবুল হোসেন সবুজ, তার স্ত্রী ও ছেলেসহ ৭ জনকে আসামি করে একটি অপহরণের মামলা করেন আব্দুল হামিদ। এরপর ৫২ দিন পর গত ১ ফেব্রয়ারি লুকিয়ে থাকা জাহিদুল ইসলাম আকাশকে বড়লেখার পাথারিয়া চা বাগান থেকে চোখ, হাত, পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ২ ফেব্রয়ারি হবিগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের হাকিম (ম্যাজিস্ট্রেট) নূরুল হুদার আদালতে হাজির করা হলে জাহিদুল ইসলাম আকাশ আদালতের কাছে অপহরণ নাটক ও প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি প্রদান করে।
আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে জাহিদুল ইসলাম আকাশ জানায়- জমি নিয়ে তার চাচা সাংবাদিক আবুল হোসেন সবুজের সঙ্গে তার পিতা আব্দুল হামিদের বিরোধ ছিল। এ কারণে ৫২ দিন আগে গত ৯ ডিসেম্বর আকাশকে তার পিতা কসবা সীমান্ত দিয়ে ভারতের বিশালঘর খালাম্মার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে সে ১ মাস অবস্থান করে। পরে পুলিশ তার অবস্থান জেনে ফেলায় স্থান বদল করে ভারতে ত্রিপুরা নানা বাড়িতে লুকিয়ে ছিল। সেখানেও ভারতীয় পুলিশ তার সন্ধানে হানা দেয়। ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় সেখানে তার লুকিয়ে থাকা নিরাপদ ছিল না। পরে তার আত্মীয়স্বজনরা গত ৩১ জানুয়ারি অবৈধ পথে আকাশকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল সে যেন বলে সাংবাদিক ও তার লোকজন অপহরণ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অজ্ঞাত স্থানে রেখে চোখ, হাত পা বেধে ফেলে রাখে। কিন্তু সে বাবার অপহরণ নাটকের গোপন তথ্য প্রকাশ করে আদালতে সত্য ঘটনা বলেছে।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন বলেন- ‘জাহিদুল সত্য ঘটনা প্রকাশ করায় অপহরণ নাটকের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’