এক বইয়ের দাম তিন লক্ষ টাকা
সময় সিলেট ডেস্ক :

লেখক, গবেষক ও আর্ট কিউরেটর এবাদুর রহমান।
লেখক, গবেষক ও আর্ট কিউরেটর এবাদুর রহমান তার তৃতীয় উপন্যাস মজনু শাহ ফকিরা লিখেছেন প্রায় ১৬ বছর ধরে। উপন্যাসটির কাহিনী গড়ে উঠেছে ব্রিটিশ শাসনপূর্ব উত্তর ভারতের রাজ্য আওয়াধের শেষ নবাব ওয়াজিদ আলী খাঁর রান্নাঘরে কাজ করা একজন তরুণ ফরাসি বাবুর্চিকে ঘিরে।
এবাদুর রহমান তার এক ফেসবুক পোস্টে ঘোষণা দিয়েছেন- এই উপন্যাসটি ছাপা হবে মাত্র ১৭ কপি। প্রতি কপির আন্তর্জাতিক দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশের কেউ কিনতে চাইলে দাম পড়বে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
একটি বিশেষ প্রদর্শনী করে এ বই উন্মোচন করবেন তিনি।
শুধু সীমিত মুদ্রণই নয়, বইটির বাঁধাই ও অঙ্গসৌষ্ঠবেও অভিনবত্ব থাকবে। এটি নিজেই হয়ে উঠবে একটি শিল্পকর্ম।
এবাদুর রহমান তার ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন- সাধারণ কোনো প্রেসে ছাপা হবে না বইটি। এর ফন্টের নকশাও করা হয়েছে বিশেষভাবে।
এবাদ লিখেছেন- হাতে বানানো এসিড-ফ্রি কাগজে, জাফরান ও মধু মেশানো তাবিজ লেখার একটি বিশেষ কালিতে বইটি ছাপা হবে। রেনেসাঁস আমলে উত্তর ইউরোপীয় পন্ডিতেরা, আলেপ্পো থেকে আসা বইকে যে মরক্কো লেদারের পুট খোলা বিশেষ বাঁধাইতে আবদ্ধ করতেন, তা প্রয়োগ করে বইটি বাঁধাই করবেন ইতালিতে বসবাসকারী এমন একজন শিল্পী, যার পরিবার ৬০০ বছর ধরে বাঁধাই পেশায় নিয়োজিত আছেন।
তবে উপন্যাসটির শেষ তিনটি পাতা এখনও লেখা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন- বছরের একটি বিশেষ দিনে তিনি ‘মজনু শাহ ফকিরা’র শেষ তিনটি পাতা লিখবেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এবাদুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন- ‘শেষ তিন পাতা লিখব ৭ সেপ্টেম্বর, আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন। এই বইয়ের শেষ শব্দ ও প্রথম শব্দ এক। কিন্তু শব্দের ওজন আলাদা রাখতে ৭ সেপ্টেম্বরই লিখে শেষ করতে হবে।’
বই বিক্রির শর্তও জুড়ে দিয়েছেন এবাদ। তিনি লিখেছেন- ‘কাউকে ২ কপির বেশি বহি দিবো না। ভারতীয় নাগরিকদের কাছে বহি বেঁচবো না। যাঁরা বই কিনবেন তাঁরা যদি আমার অপরিচিত হন, আমি আপনাদের সাথে আলাপ করবো, অন্তত একবার একসাথে বসে খাওয়াদাওয়া করবো, তারপর যদি আমার ইচ্ছা না হয়, তাইলে বহি দিবো না।’
এই ১৭ কপির পরে আর কখনও বইটি ছাপা হবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
১৭ পাঠকের বাইরে বাকি পাঠকেরা কিভাবে বইটি পাবেন, জানতে চাওয়া হলে এবাদুর রহমান বলেন- ‘পাবেন না। ছাপা হওয়া জ্ঞানের ব্যবসা গণতান্ত্রিক নয়। কিন্তু গল্প বলা ও শোনা আমাদের সংস্কৃতিতে একটি গণতান্ত্রিক চর্চা। যারা লিখিত ও ছাপা বই সংগ্রহ করতে পারবেন না, তারা আমার করা প্রদর্শনীতে হয়তোবা আমার বা অন্য কথকের মুখে গল্প শুনে, আমাদের অভিনয় দেখে, প্রশ্ন করে গল্পের অভিজ্ঞতাটি অন্যভাবে নিতে পারবেন।’
উপন্যাসের কাহিনী সম্পর্কে এবাদুর রহমান বলেন- ‘ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ব্যাপ্তির ৪০ বছর সময়কালে এই উপন্যাসের বেশির ভাগ ঘটনা বিস্তার পাবে। কিন্তু বদীউদ্দীন শাহ-ই-মাদারের সিলসিলাভুক্ত ফকির ও দরবেশগণ ও শাহ সুলতান বলখি মাহীসওয়ারির কেরামতি একজন বিধর্মী ও বিদেশি মনে যে উপলব্ধি ও প্রেম জাগিয়েছিল, তাই এই উপন্যাসের মূল উপপাদ্য।’
এবাদুর রহমানের প্রথম উপন্যাস দাস ক্যাপিটাল প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৫ সালে। ২০১১ সালে বেরিয়েছিল দ্বিতীয় উপন্যাসগুলমোহর রিপাবলিক।
সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার ফিল্যাক শহরে তার কিউরেশনে ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনী হয়েছে। হীরালাল সেনের জীবনীভিত্তিক তার লেখা একটি ইংরেজি নাটক লন্ডনে শীঘ্রই মঞ্চায়িত হবে। হীরালালের চরিত্রে অভিনয় করছেন রেজ কবির। মুকুল আহমেদ নাটকটি পরিচালনা করবেন।
এবাদুর রহমানের চিত্রনাট্য অবলম্বনে বানানো চলচ্চিত্র আলফা কিছুদিন আগে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে। এর আগে গেরিলা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য ও সংলাপের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
লেখক সম্প্রতি গবেষণার কাজে ভিয়েনা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থান করছেন।