হুমায়ুন ফরীদি এখনও আমাদের মধ্যে বেঁচে আছে
সারা যাকের :
“হুমায়ুন ফরীদি ছিল আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। আমি সবাইকেই শুটিংয়ে দেরি করে আসতে দেখেছি। কিন্তু একটি মানুষকে কখনোই শুটিংয়ে দেরি করে আসতে দেখিনি। সেই মানুষটির নাম হুমায়ুন ফরীদি।”
হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল ভাইবোন ও বন্ধুর। তার সঙ্গে আমার প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় পরিচয় ছিল। এখনো পরিচয় আছে। কারণ কাছের মানুষ বা আপনজনেরা কখনো ছেড়ে যায় না। আমি ফরীদিকে কখনো আশ্চর্য হতে দেখিনি। যা আমার কাছে আশ্চর্য মনে হতো। সব বিষয়েই তার অনেক জানাশোনা ছিল। শুটিংয়ে হোক অথবা আড্ডায়ই হোক না কেন, কেউ যদি কিছু জানতে চাইছে, আর সে উত্তর দিতে পারেনি- এমনটি কখনো আমি দেখিনি। ফরীদি আমার কাছে না, আমাদের সবার কাছে ভালোবাসার একটি নাম। দেখতে দেখতে তার মৃত্যুর নয় বছর হয়ে গেলো। কিন্তু আমি মনে করি, ফরীদি এখনো আমাদের মধ্যে বেঁচে আছে আর সারা জীবনই বেঁচে থাকবে। কারণ তার মতো শিল্পীদের মৃত্যু হয় না।
আমি তার সঙ্গে বেশকিছু জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছি। শুটিং স্পটে আমরা খুবই মজা করতাম। তবে যেদিন ফরীদির শুট না থাকত, সেই দিন শুটিং ইউনিটে শুধু শুটিংই হতো কিন্তু আনন্দ আর হতো না। তার মধ্যে মানুষকে ভালোবাসার এক অদ্ভুত ব্যাপার ছিল। সে যাকে ভালোবাসত তাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসত। এ ছাড়া তাকে যারা ভালোবাসত বা এখনো ভালোবাসে, তারা কোনো দিনও তাকে ভুলতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। ফরীদি আমার কাছে একজন সম্মানী অভিনেতা ছিল। একটু একটু মনে আছে, ১৯৯০ কি ৯১ সাল হবে। ‘অয়োময়’ নাটকের শুটিং চলছে। এই নাটকে আমার নাম থাকে এলাচি।
তো আমার এই নাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি মজা করত ফরীদি। তো আমি একদিন একটু খেপে যাই। ফরীদি বুঝতে পারে। এরপর শুটিং শেষ হওয়ার আগে ফরীদি হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আমার পাশ দিয়ে ঘুরছে আর শুটিংবয়দের বলছে- এই চায়ে একটু এলাচি দেয়া যাবে, একটু এলাচি দেয়া যাবে। যা শুনে শুটিং স্পটে সবাই হেসে দেয়, আমিও হেসে দিই। এরপর ফরীদি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলে আমার আর রাগ থাকে না। ফরীদির সঙ্গে কেউ রাগ করেছে আর ফরীদি যদি সেটা জানতে পারে, তাহলে তার অবস্থা খারাপ। যেভাবেই হোক তার রাগ ভাঙতেই হবে।
হুমায়ুন ফরীদি ছিল আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। আমি সবাইকেই শুটিংয়ে দেরি করে আসতে দেখেছি। কিন্তু একটি মানুষকে কখনোই শুটিংয়ে দেরি করে আসতে দেখিনি। সেই মানুষটির নাম হুমায়ুন ফরীদি। ফরীদির সব সময় কাজের প্রতি আলাদা ভালোবাসা ছিল। এ ছাড়া সময় নষ্ট করা একদমই পছন্দ করত না। শুটিং স্পটে সবার আগে উপস্থিত হতো। সে নতুনদের জন্য না শুধু, সবার জন্যই একটা ভালোবাসার বই। যে বই পড়লে কারো কোনো ক্ষতি হবে না। ফরীদির মধ্যে অনেক গুণ ছিল, যা আমার দেখা একজন মানুষের মধ্যে একসঙ্গে এত গুণ আগে কখনো দেখিনি।
২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আমি প্রথম যখন শুনি যে ফরীদি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। সেই মুহূর্তে আমার অনুভূতির কথা হয়তো বলতে পারব না কোনো দিনও। আসলে কাছের মানুষ ও ভালোবাসার মানুষের মৃত্যু হয় না। তারা কখনো ছেড়ে যায় বলে আমি মনে করি না। তাই ফরীদি আমার সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে সব সময় আছে। আমি এক কথায় বলব, ফরীদি আমাদের গৌরব। যে গৌরব আমরা কোনো দিনও ভুলে যেতে পারব না।