গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে বাধা : ত্রিমূখী সংঘর্ষে চৌহাট্টা রণক্ষেত্র
স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন মেয়র ও সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের উপরও হামলা করে পরিবহন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে ত্রিমুখে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে কাউন্সিলর-পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আধঘন্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে পুলিশ। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ফয়সল আহমদ ফাহাদ (৩৮) নামে এক পরিবহন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়- সিলেটে চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। এই সড়কের চৌহাট্টা- দরগাহ এলাকার ফুটপাত ও সড়কের অনেকাংশ দখল করে অনেকদিন ধরেই অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার শ্রমিকরা। প্রতিদিন এখানে শতাধিক গাড়ি পার্কিং করা থাকে।
চারদিন আগে এই অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে যায় সিলেট সিটি করপোরেশন। মেয়রের নেতৃত্বে এই অভিযানে বাধা দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। পরে তাদের তিনদনের সময় বেঁধে দিয়ে এই সময়ের মধ্যে ফুটপাত ও সড়ক ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মেয়র।
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা জানায়- বুধবার সকালে চৌহাট্টা এলাকায় সড়কের উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা। এ খবর পেয়ে দুপুরে কাউন্সিলর, ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসময় তিনি দেখতে পান পরিবহন শ্রমিকরা তখনও সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গাড়ি পার্কিং করে রেখেছেন। এসময় মেয়রসহ সিসিকের কর্মকর্তারা সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে চাইলে তারা বাধা দেন। এনিয়ে আলাপচারিতার একপর্যায়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায় পরিবহন শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- পরিবহন শ্রমিকদের হামলার পর পর সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পুলিশের উপরও হামলা চালায় শ্রমিকরা। এসময় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এবং চৌহাট্টা-আম্বরখানা, চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার, চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা-মিরবক্সটুলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন- মেয়র, কাউন্সিলর ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা আচমকা হামলা চালায়। এসময় কাউন্সিলরসহ সিসিকের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন- হামলার একপর্যায়ে বন্দুক নিয়ে একজন মেয়রের দিকে তেড়ে আসে। পুলিশ সাথেসাথে তাকে আটক করেছে। আমাদের আশঙ্কা মেয়রকে হত্যার উদ্দেশ্যই সে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসেছিলো।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বলেন- পুলিশ আধঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়। তিনি বলেন- ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ফয়সল আহমদ ফাহাদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনার ব্যাপারে পরিবহন শ্রমিকদের কেউ কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেছেন- আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকায় স্ট্যান্ড করে আছি। উচ্ছেদের আগে আমাদের বিকল্প একটি জায়গা প্রদানের জন্য মেয়রের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তি তিনি তা না শুনে আজ দলবল নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা করেন ও গাড়ি ভাংচুর করেন। সংঘর্ষে পরিবহন শ্রমিদকের ৫/৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন- সরকারি রাস্তা দখল করে যানবাহন রাখা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু সম্প্রতি সিসিকের উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় চৌহাট্টাস্থ এলাকার অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড সরানোর জন্য বলা হলেও শ্রমিকরা যানবাহন না সরিয়ে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ে সিসিকের কর্মী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।