দেশের সবচেয়ে বেশি নারী অভিবাসী বরগুনার, কম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
সময় সংগ্রহ :
বরগুনা জেলার ২৫১ জন অভিবাসীর মধ্যে নারী রয়েছেন ৬৯ জন বা সাড়ে ২৭ শতাংশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২ হাজার ৫৪৬ জনের মধ্যে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ নারী প্রবাসে গেছেন। লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন সুমন। বিস্তারিত পড়ুন…
দেশের মোট জনশক্তির ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ থাকেন সৌদি আরবে। আর মোট নারী অভিবাসীর ৭৫ শতাংশ থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। এমন তথ্য উঠে এসেছে দৃষ্টি রিচার্স সেন্টারের এক জরিপে।
বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের অভিবাসন ও লিঙ্গ : একটি অনিয়মিত প্রকৃত দৃশ্যপট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে দেশের পাঁচটি জেলার ওপর পরিচালিত এ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। দৃষ্টি রিচার্স সেন্টার, ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও গবেষণা সংস্থা র্যাপিড যৌথভাবে এ ওয়েবিনার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে দৃষ্টি রিসার্চ সেন্টারের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর তেরেস বলেন- ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে নারী ও পুরুষের অনুপাতে সবচেয়ে বেশি নারী প্রবাসে আছেন বরগুনা জেলার। আর সবচেয়ে কম গেছেন বাহ্মণবাড়িয়ার নারীরা। বরগুনা জেলার ২৫১ জন অভিবাসীর মধ্যে নারী রয়েছেন ৬৯ জন বা সাড়ে ২৭ শতাংশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২ হাজার ৫৪৬ জনের মধ্যে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ নারী বিদেশে গেছেন।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। তিনি বলেন- যারা প্রবাসে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি ঠিক না। গত ১০ বছরে অন্তত ৭ থেকে ৮ লাখ নারী শ্রমিক প্রবাসে গেছেন। তাদের কতজন নির্যাতিত হয়েছেন?
সচিব বলেন- ‘অন্যান্য দেশ বিবেচনায় বাংলাদেশের নারী অভিবাসন খুব কম। এর অন্যতম কারণ আমাদের সামজিক প্রেক্ষিত। সমাজ বাস্তবতা বিবেচনায় একজন পুরুষ যতো সহজে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, একজন নারী পারেন না। এরকম প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি ইশতেহারে প্রত্যেক উপজেলা থেকে এক হাজার করে লোক বাইরে পাঠানোর চেষ্টা চলছে।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন- ‘আমাদের অর্থনীতি ৯০ দশকে যেখানে ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এখন তা হয়েছে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতির আকার যত দ্রুত বেড়েছে দেশের কর্মসংস্থান সেভাবে তৈরি হয়নি। কৃষিতে এখন আমাদের ৪০ শতাংশ লোক জড়িত। কিন্ত কৃষি থেকে জিডিপিতে যোগ হচ্ছে মাত্র ১৩ শতাংশ। এ অবস্থায় দেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক রপ্তানির ওপর জোর দিতে হবে।’
নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বলেন- ‘পুরুষের তুলনায় নারীদের বিদেশে যাওয়ার হার কম হওয়ার অন্যতম কারণ সামাজিক অবস্থা। নারীরা বিদেশে যেতে চাইলে এখনও তাদের সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়। এসব বাধা পেরিয়ে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের সব ধরনের সহযাগিতা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ, আইএলও’র প্রতিনিধি ইগোর বস প্রমুখ।
জরিপের ফল তুলে ধরে জানানো হয়- বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৪টি দেশে শ্রমিক পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২২টি দেশে যাচ্ছে নারীরা। ২০০৪ সাল থেকে এ পরিবর্তন শুরু হয়। এরপর ২০১৫ সালে সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তির পর ২০১৭ সালে এটি ব্যাপক হারে বেড়েছে। পুরুষদের অভিবাসন ব্যয় বাড়লেও নারীদের ক্ষেত্রে কমেছে। যেসব নারী বিদেশে গেছেন তাদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮০ শতাংশ আগে গৃহকর্মী ছিলেন। আর ১৬ শতাংশ তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক ছিলেন। তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীদের মধ্যে প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা বেশি।
জরিপে দেখা গেছে- অভিবাসনে এখনও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় একটি বড় বাধা। প্রকৃত খরচের তুলনায় কুয়েতে ৪২১ শতাংশ বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে অভিবাসন প্রক্রিয়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাহরাইনে যেতে প্রকৃত খরচের চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে ৩৮৭ শতাংশ। কাতারে ৩৭২ শতাংশ, ওমানে ৩২৩, লেবাননে ৩১২, জর্ডানে ৩০৮, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৯১ ও সৌদি আরবে ২৮৭ শতাংশ বেশি খরচ হচ্ছে।