রশিদপুরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা : এনা-লন্ডন এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৮ আহত ৩০
স্টাফ রিপোর্টার :
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশিদপুরে এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
আজ শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানাধীন রশিদপুর ব্রীজের পূর্বদিকে আব্দুর রহমান পেট্রোল পাম্প এর নিকট ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওসমানী হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এস.আই মো. জয়নাল মোট ৮জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন- নিহতের সংখ্যা ১১ জনেরও বেশী হতে পারে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক আল মাহমুদ সাদ ইমরান খান (৩৩), এনা পরিবহনের বাসেরচালক ওসমানীনগর উপজেলার ধরখা গ্রামের মঞ্জুর আলী (৩৮), এনার সুপারভাইজার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিঠাভরা গ্রামের সালমান খান (২৫), হেলপার ধরখা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন (২৪), বি বাড়িয়ার সরাইল থানার রাজানিয়াকান্দি পশ্চিম পাড়ার নুরুল আমিন (৫০), ঢাকার ওয়ারি এলাকার নাদিম আহমদ সাগর (২৯) ও সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকা শাহ কামাল (২৭) ও ছাতক বাংলাবাজার এলাকার রহিমা খাতুন (২৫)।
এ ঘটনায় আরও ৩০ জন আহত হন। এর মধ্যে ১৫ জন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্য কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে ওসমানী হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এস.আই মো. জয়নাল।
সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখা জানায়- হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিসাধীনরা হচ্ছেন- রেজাউল করিম (৫০), শামিম (২৩), জসিম উদ্দিন (৩০), আলা উদ্দিন (৬০), সায়ান (১৬), সালাম (৪০), ডা. অন্তরা (৩০), চান বিবি (৬০), শারমিন (৩০), সীমা পারভিন (৩০), সানাত (৩৫), মাহি (০৭), সুর্বনা (৩০) ও সেলিনা পারভীন (৩০)।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ, এসএমপির ঊর্ধ্বতন অফিসারগণ, ফায়ার সার্ভিস এর উদ্ধারকর্মীগণ উপস্থিত হয়ে হতাহতদের উদ্ধারে সবাই কাজ করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের টিম দুটি বাসের বডি কেটে হতাহতদের উদ্ধার করেছে। এসময় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছিলো । তবে প্রায় ২ ঘন্টা পর সকাল ৯ টার দিকে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লন্ডন এক্সপ্রেস দ্রুত গতিতে ভুল সাইটে চলে আসার কারণে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। সিলেটগামী গাড়িটি ব্রীজ পার হয়েই বিপরীত দিক থেকে আসা এনা গাড়ির উপর উঠে যায়। এসময় প্রচণ্ড গতিতে এনা বাসের সঙ্গে লন্ডন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ ঘটে।
লন্ডন এক্সপ্রেসের বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী জানান- ঢাকা থেকে আসার পথে বার বার গাড়ির চালক অন্য গাড়িকে বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করছিলেন। কয়েকবার আমরা সতর্ক করার পরও চালক আমাদের কথা শুনেননি। যে কারণে এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক কোবাদ আলী সরকার বলেন- লন্ডন এক্সপ্রেস গাড়িটি রাস্তার ভুল দিকে এসে এনা বাসকে ধাক্কা দেয়। প্রাথমিকভাবে লন্ডন এক্সপ্রেসের ভুল বলে মনে হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনার আসল কারণ পরবর্তীতে তদন্তে জানা যাবে। তিনি বলেন- ‘ঘটনাস্থল থেকে আমরা এসে ১০ জনকে উদ্ধার করেছি। এরমধ্যে ৮ জনের মরদেহ রয়েছে। আর আহতদের এর আগেই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান- ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লন্ডন এক্সপ্রেস (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩১৭৬) ও সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকামুখী এনা পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৭৩১১) দ্রুতগতির দুটি বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এতে বহু যাত্রী আহত হয়েছেন। আর নিহত সংখ্যা ৮ জন। তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন- সকালে কুয়াশা তেমন একটা ছিলো না। গাড়ির অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে লন্ডন এক্সপ্রেস দ্রুত গতিতে ওভারটেক করে এনা গাড়ির সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। অথবা লন্ডন এক্সপ্রেসের চালক ঘুমিয়েও থাকতে পারেন। বিষয়টি পরে তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।