বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে খালেদা পরিবার বিভক্ত
সময় সিলেট ডট কম
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার খালেদা জিয়ার পরিবারের একাধিক সদস্যের সঙ্গে দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের কথা হয়।
পরিবারের একটি অংশ বলেন, ‘কারামুক্ত হওয়ার পর আগে যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা। আমরা চাই উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে। এজন্য এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছি। তবে সরকার বিদেশে নিতে অনুমতি দেয়নি।’
পরিবারের অন্য একটি অংশ বলেছেন, ‘বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। এখন খালেদা জিয়াও বিদেশে গেলে দলের উচ্চাকাক্সক্ষী নেতারা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ড. মনমোহন সিং হতে তৎপরতা শুরু করতে পারেন বলে আমাদের আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় তাকে বিদেশে না পাঠিয়ে দেশেই উন্নত চিকিৎসা দিতে চাই।’
এদিকে গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের যেকোনো হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসা নিতে পারবেন। এর জন্য কোনো হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের সময়সীমা বাড়ানো এবং বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য যে আবেদন, সেটি আমাদের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল। আমরা যে মতামত দিয়েছি সেটি হলো আগের মতো তার সাজা স্থগিতের সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। যে শর্তগুলো আগে ছিল সেই শর্তসাপেক্ষে এটা বাড়ানো হয়েছে (শর্তগুলো হলো তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন)।
আইনমন্ত্রীর এমন সুপারিশের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মেজ বোন সেলিমা ইসলাম গতকাল সোমবার বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় বাড়িয়েছে। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছিল তাতে সাড়া দেয়নি সরকার। এ অবস্থায় আমরা তাকে বিদেশে নিতে চাইলেও তা পারছি না। বাধ্য হয়ে দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশে নেওয়ার জন্য ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা ভিসা দিতে সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু সরকার অনুমতি না দেওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নিজ বাসভবনে রেখেই খালেদা জিয়াকে বরাবরের মতো চিকিৎসা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানই চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করবেন।’
গত ২ মার্চ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফের আবেদন করে তার পরিবার। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাই শামীম এস্কান্দার এই আবেদন করেন। করোনার সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে আবেদনে প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতিও চাওয়া হয়। পরের দিন বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। আমরা আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তারা মতামত দিয়ে পাঠালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এ অবস্থায় গতকাল সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় দফায় ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ সংক্রান্ত আদেশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্বাক্ষর করেছেন। পরে এ সংক্রান্ত আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে দেশে রেখেই উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। কারণ খালেদা জিয়ার অবস্থা এমন না যে এখনই তার অপারেশন করতে হবে। হার্ট, কিডনি, লিভার কিংবা শরীরের অন্য কোনো অংশের বড় ধরনের সমস্যা নেই। এ অবস্থায় আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে উন্নতি হয়েছে তাতে টেলি মেডিসিন কিংবা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে লন্ডনের চিকিৎসকদের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানো সম্ভব। বিদেশি ওষুধ এখন দেশে পাওয়া যায়। কিংবা প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে ওষুধ আনা যাবে। খালেদা জিয়া বিদেশ গেলে দলের উচ্চাকাক্সক্ষী নেতারা ঝামেলা করতে পারেন। তাই খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠিয়ে দেশে রেখেই চিকিৎসা দেওয়ার কথা ভাবছেন তারা।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দারের পক্ষে এ সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ মাস কারাভোগের পর খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে গত বছরের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য দন্ড স্থগিত করে সরকার। এরপর দ্বিতীয় দফায় ফের ছয় মাস সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সে মেয়াদ আগামী ২৪ মার্চ শেষ হচ্ছে। একইসঙ্গে দন্ডাদেশ মওকুফ করা যায় কি না সে প্রসঙ্গেও তারা আর্জি জানিয়েছেন।