আঁধারে আলোর বিস্ফারণ : অটো চালকের দুই ছেলেই এমবিবিএস কোর্স এ উত্তীর্ণ
বিশ্বনাথ (সিলেট) সংবাদদাতা
দরিদ্রতা দমিয়ে রাখতে পারেনি মেধাবী সহোদর দুই ভাই আরিফ ও শরিফকে। অদম্য ইচ্ছা শক্তি তাদের সফলতার পথ দেখিয়েছে। এবারের মেডিকেল পরীক্ষায় দু’জনেই সরকারী ভাবেই এমবিবিএস কোর্স এ সরকারি মেডিকেলে উত্তীর্ণ হয়ে চমক দেখিয়েছেন।
২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে মান্দারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা বোর্ডে জিপিএ-৫ পায়। তারপর এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সহযোগীতায় অর্থের জোগানে সুযোগ পায় কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজে। সেখান থেকে ও এবার অটো পাসে জিপিএ-৫ পেয়ে আবেদন করে মেডিকেলে।
করোনা মহামারীর মধ্যেও সারা বাংলাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে সুযোগ পেয়ে তারা আনন্দিত। ছেলেদের এমন সফলতায় মা-বাবা খুব খুশি। উপজেলার হাসনাবাদ ইউপির মানরা গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরে পায়ে হেঁটেই স্কুল জীবনে আসা যাওয়া করতো তারা। এমনটাই জানিয়েছেন হাসনাবাদ ইউনিয়ন এবং বাইশগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামাল হোসেন এবং আলমগীর হোসেন।
বাবা বিল্লাল হোসেন সামান্য অটোরিকশা চালক। বাবার দিন রাত কষ্টার্জিত টাকার বেশিরভাগই ব্যয় করতেন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার পেছনে। বাকী দুই সন্তানের মধ্যে সাইফুল ইসলাম মাদরাসায় এবং আমেনা আক্তার প্রাইমারী স্কুলে পড়ে। সাংসারিক টানাপোড়েনের মাঝে সামান্য আয় দিয়ে চার সন্তানের লেখাপড়ার খরচ সংসার চালানো নিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতেন তিনি।
এ ব্যাপারে বাইশগাঁও ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মৌলভী আব্দুল মজিদ বলেন- আল্লাহই অর্থের জোগান দিবেন। অবশেষে সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দুই সন্তানই মেডিকেলে সুযোগ পাওয়ায় অভাবের সংসারে বইছে আনন্দের বন্যা।
আরিফ-শরিফ দুই ভাইয়ের সাথে কথা হলে তারা জানান- আরিফ সারা বাংলাদেশে ৮২২ তম হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেলে, এবং শরিফ ১১৮৬ তম হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবার মতন মহানব্রত সামনে রেখে সাধারণ মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যাবে বহুদুর।
তারা আরো জানান- বাবা-মায়ের পরিশ্রম আর শিক্ষকদের সহযোগীতায় তাদের লেখাপড়ার সাহস যুগিয়েছে। তারা সকলের দোয়া প্রার্থী।
বাবা বিল্লাল হোসেন জানান- নিজে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেও সিএনজি চালাই। অর্থাভাবে লেখাপড়া হয়নি। আমার মত ওদের লেখাপড়া যেন থেমে না যায় সেজন্য নিজে কষ্ট করেও তাদের উচ্চ শিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ছেলেদের ভর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।