গরম হাওয়ায় শাল্লায় বোরো ধান ধূসর !
শাল্লা প্রতিনিধি
এবছর চৈত্রের শুরুতে বোরোতে আঘাত হানে শিলাবৃষ্টি। এই ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় গরম দমকা হাওয়ায় নষ্ট হয়ে যায় হাওরের জমির ধান। কৃষকরা বলছেন গরম বাতাস তাদের ধান নষ্ট করে দিয়েছে। ঐ দিন সকালেও সারা হাওর সবুজের সমারহ ছিল কিন্তু বিকেলে গরম বাতাস বয়ে যাওয়ার পর থেকেই সব জমি ধূসর হয়ে যায়। হাওরের কৃষকের মাঝে এক ধরনের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে হাওরজুড়ে।
শাল্লা উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, গরমের কারণে ধানের জমিতে একধরনের ব্যাকটেরিয়া রোগের সৃষ্টি হয় পরে বাতাস দেওয়ার কারণে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ধানের জমিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ক্ষতির পরিমান এখনও নির্ণয় করা যায়নি বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিস।
জানা যায়, বেশ কিছু দিন থেকেই সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বোরো ধানের জমিগুলোতে পোকার আক্রমণ ছিল। পোকাগুলো ধানের চারা কেটে দিচ্ছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও প্রয়োজনীয় ঔষধ নেই উপজেলার ডিলারদের কাছে। এরই মাঝে দমকা গরম হাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে জমির ধান। সব মিলিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কৃষক। কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।
শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের মনুয়া গ্রামের কৃষক আমির উদ্দিন বলেন, ‘ধার দেনা করে ১২ কেয়ার জমি চাষ করেছিলাম। ধান কাটার জন্য শ্রমিকও ঠিক করে রেখেছি কিন্তু গত পরশু গরম হাওয়ায় সব ধান নষ্ট করে দিয়ে গেল। ছেলে মেয়ে নিয়ে সারা বছর কি খাব সে চিন্তাই করছি।’
ইয়ারাবাদ গ্রামের কৃষক সাইফুর রহমান বলেন, জমিতে পোকার আক্রমণ ছিল ঔষধ দিয়েছি কিন্তু গরম হাওয়ায় সব শেষ করে দিয়েছে। এই ধানের বন এখন গরুও খাবে না। গরুর খাবারও সংকট দেখা দিবে।
কৃষক মমিনুল হক বলেন, ৩০ কেয়ার জমি করেছিলাম প্রথমে শিলায় ক্ষতি করল। বাকি যা ছিল এই গুলো দিয়ে কষ্ট করে বছর কাটিয়ে দিব। সকালেও জমি ভালো দেখে আসছি কিন্তু বিকেলে গরম হাওয়ার পরই সব জমি ধূসর হয়ে গেছে।
শাল্লা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত দাশ বললেন, শীষকাটা লেদা পোকা এবং গোড়া পচা রোগ দেখা দিয়েছে এই উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ধানি জমিতে। গত দুই দিন সরেজমিনে উপজেলার কলাপাড়া, পুটকা, নারাইনপুর ও আগুয়াই গ্রামে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি, তারা যেন শীষকাটা লেদা পোকার জন্য কীটনাশক সেতারা এবং নাইট্রো এবং গোড়া পচার জন্য টিল্ট অথবা স্কোর ব্যবহার করেন। তিনি জানালেন, এগুলো ছাড়া আরও ভাল ওষুধ আছে, অন্যগুলো শাল্লায় পাওয়া যাচ্ছে না। পোকা দমনের জন্য আলোকপাত বা নাইটসেড করার জন্যও বলা হচ্ছে। রাতে নাইটসেডের নীচে সাবান পানি রেখে পোকা নিধন করা সম্ভব। কৃষকদের এভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
শাল্লা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, এটা এক ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগ বলা যেতে পারে। গরম আবহাওয়া কারণে ব্যাকটেরিয়া বাড়ে পরে এইগুলো বাতাসের মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে ধানের জমির ক্ষতি করেছে। তাছাড়া বিপিএইচ পোকার আক্রমণের কারণে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। শাল্লা উপজেলার নির্ধারিত ডিলারদের কাছে সব ঔষধ না থাকায় আমরা আশেপাশের উপজেলা গুলো থেকে ঔষধ আনার ব্যবস্থা করছি।