সিলেটে লকডাউনেও প্রাণচাঞ্চল্য
স্টাফ রিপোর্টার
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি ঠেকাতে ৭ দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিনেও সিলেটে সকালে এক চিত্র, বিকেলে আরেক চিত্র। সকালে পুলিশের কঠোরতা দেখা গেলেও বিকেলে তা নমনীয় হয়ে যায়। ফলে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত রাস্তায় যান ও মানুষের চলাচলও বেড়ে যায়। এতে লকডাউনের মাঝেও নগরীর ব্যস্ত এলাকায় কিছুটা হলেও ফিরে আসে প্রাণচাঞ্চল্য।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে নগর ছিল পুরোপুরি ফাঁকা। কিছু রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও অন্যান্য যানবাহন ছিল সীমিত। করোনার সাধারণ ছুটির পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় লকডাউনের আওতার বাইরে থাকা ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। ফলে রাস্তায় মানুষ ছিল কম। এ সময় রাস্তায় পুলিশের অবস্থান ছিল কড়াকড়ি। তবে জুমআর নামাজের পরে মানুষের উপস্থিতি বাড়ে। একই সঙ্গে বাড়ে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যাও। আর নগরীর অলি-গলিতে প্রথম দিন থেকেই বিরাজ করছে প্রাণ চাঞ্চল্য।
বন্দরবাজার এলাকায় গত দুই দিনের তুলনায় মানুষের আনাগোনা অনেক বেশি দেখা গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বা মুদিদোকানের পাশাপাশি একটি-দুটি করে খুলছে অন্যান্য দোকান। একই সাথে ভ্রাম্যমাণ ব্যাবসায়ীদেরও সড়কে বসে ব্যবসা করতে দেখা গেছে। এতে বেড়েছে মানুষের আনাগোনা বা চলাচল।
একই চিত্র দেখা গেছে আম্বরখানা, চৌহাট্টা, রিকাবিবাজার, জিন্দাবাজার, উপশহর, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, নাইওরপুল, মেডিকেল, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। তাতে দেখা যায়, এসব এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সকল দোকান খুলেছে। এসব দোকানে বিভিন্ন পণ্য কিনতে আসছেন অনেকেই। আবাসিক এলাকার অধিকাংশ দোকানপাটই ছিল খোলা।
মহাজনপট্রিসহ নগরীর কিছু এলাকায় ব্যবসায়ীরা দোকানের সাটার বন্ধ রেখে মালামাল বিক্রি করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দোকানের সাটারে নক করলে ভেতর থেকে কিছু লাগবে কি-না এমন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। এছাড়া অনেক দোকানের বাইরে কর্মচারীদের ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। ক্রেতাদের দেখলে তারা জিজ্ঞেস করে কিছু লাগবে কি-না। এসময় ক্রেতা কিছু কিনতে চাইলে দোকানের ভেতরে ক্রেতাদের প্রবেশ করে সাটার লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বেলা আড়াইটার দিকে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কোনো পুলিশ সদস্য নেই। রাস্তার পাশে ফুটপাতে কলা, আপেল, বিভিন্ন ধরণের সবজি নিয়ে বসে আছেন হকাররা। তবে সরকারের নির্দেশনা মেনে এদিনও নগরের সব শপিং মল, মার্কেট বন্ধ রয়েছে।
লকডাউনের প্রথম দিন পুরো সিলেট নগরী ছিল জনশূন্য। রাস্তাঘাট বা নগরের অলিগলিতে জনসমাগম ছিল না বললেই চলে। লকডাউনের তৃতীয় দিন শুক্রবার সিলেট নগরের চিত্র অনেকটাই পাল্টেছে। সময় যত যাচ্ছে ততই অলিগলিতে বাড়ছে প্রাণচাঞ্চল্য। ফিরছে স্বাভাবিক দিনের ব্যস্ততা।
এদিকে, প্রথম দু’দিনের মতো ৩য় দিনের বিকেলের চিত্রও একই। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসেছে জিলাপীর হাট। এতে দেখা যায় জিলাপি কিনতে আসা মানুষের দীর্ঘ সারি। তবে এসবে পুলিশ কোন বাধা দিচ্ছেনা বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
তবে সর্বাত্মক লকডাউন কিছুটা পূর্ণতা পেয়েছে কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কুমারগাও বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও বিমানবন্দরে। এসব স্থানগুলোতে নেই স্বাভাবিক দিনের চিত্র। নেই মানুষের আনাগোনা। নেই কোন ব্যস্ততা।
দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, রাস্তায় যারা বের হয়েছেন বেশির ভাগেরই পাস রয়েছে। মুভমেন্ট পাস ছাড়া আমরা কাউকে যেতে দিচ্ছি না। তবে জরুরি চিকিৎসাসেবা কাজে নিয়োজিতদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আবার মুভমেন্ট পাস নিয়ে অনেকেই জরুরি কাজের চাইতে ব্যক্তিগত কাজে বেশি বের হতে দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মামলা ও সচেতন করা হচ্ছে।
এদিকে, জরিমানা করা পুলিশের উদ্দেশ্য নয় বলে জানালেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, পুলিশের উদ্দেশ্য করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সরকারের সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন মানতে সচেতনতা তৈরি করা। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্যই পুলিশ কঠোর ভূমিকা পালন করছে।
পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, সিলেটে মেট্রোপলিটন এলাকায় ২০ টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এরমাঝে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে ৬টি এবং নগরীর ভেতরে ১৪টি চেকপোস্ট। ১৪টি মোবাইল পেট্রোলও চালু রয়েছে। তবুও চেকপোস্ট ভেঙে গাড়ি ঢুকছে দেদারছে।