সিলেট মেরিন একাডেমি : জুলাই থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আশা
স্টাফ রিপোর্টার :
১শ ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে সিলেট মেরিন একাডেমির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার ‘নবসৃষ্ট অবকাঠামো ও জলযান’ উদ্বোধন করেন। আগামী জুলাই থেকে এ ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১১ টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সিলেট মেরিন একাডেমিসহ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অবকাঠামো ও জলযানের মধ্যে রয়েছে বিআইডব্লিউটি এ’র ২০টি কাটার সাকশন ড্রেজার, ৮৩টি ড্রেজার সহায়ক জলযান, প্রশিক্ষণ জাহাজ ‘টিএস ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (দাদা ভাই)’, বিশেষ পরিদর্শন জাহাজ ‘পরিদর্শী’, নবনির্মিত নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার বেইজ; বিআইডব্লিউটিসির দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজ ‘এমভি তাজউদ্দীন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘পায়রা আবাসন’ পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট মেরিন একাডেমি।
জানা যায়, ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও পাবনায় ৪টি মেরিন একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রচেষ্টায় তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিলেট সদর উপজেলার হাটখলা ইউনিয়নে বাদাঘাট এলাকার চেঙ্গেরখাল নদীর পারে সিলেটের প্রথম জলপথের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিলেট মেরিন একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
পরে ২০১২ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠনটির জন্য ১০ একর ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। আর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেট মেরিন একাডেমির কাজের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধানে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট মেরিন একাডেমির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর আগে এ প্রকল্পের মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজ শেষ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ছোট বড় ২০টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সুরম্য একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ৩টি আবাসিক ভবন, জিমনেসিয়াম, মসজিদ, প্যারেড গ্রাউন্ড ও সুইমিংপুল।
নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় সুত্রে জানা যায়- এসব অবকাঠামো এবং জলযান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নৌ-সেক্টরের উন্নয়নে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশে তৈরি ২০টি কাটার সাকশন ড্রেজারসহ শতাধিক নৌযান একসঙ্গে উদ্বোধন বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
‘নবসৃষ্ট অবকাঠামো ও জলযান’ নদীর নাব্যতা রক্ষা, নৌপথ উন্নয়ন, উপকূলীয় এলাকার যাত্রী পরিবহন ও দক্ষ নৌকর্মী গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে ২০টি ড্রেজার এবং ৮৩টি ড্রেজার সহায়ক জলযান প্রস্তুত করা হয়েছে। নৌপথ খনন ও নাব্যতা বজায় রাখার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৮টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে ২০টি ড্রেজার বিআইডব্লিউটিএর বহরে যুক্ত হয়ে মোট ৪৫টি ড্রেজারের শক্তিশালী ইউনিট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বর্তমান মেয়াদে ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেট পর্বে সিলেট মেরিন একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি, পুলিশ সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, সিলেট মেরিন একাডেমির প্রধান ক্যাপ্টেন কাজী এবিএম শামীম, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, গণপূর্ত বিভাগ সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ আবু হানিফ, সিলেট সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ওসমান গনি, নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায়, উপ বিভাগ-৩ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাহিদুর রহমান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট নুরে আলম সিরাজী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্হা (বাসস) এর ব্যুরো প্রধান ও সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব সাধারন সম্পাদক মকসুদ আহমদ মকসুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা শফিউল আলম জুয়েল’সহ প্রশাসনের পদস্হ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনরা এ সময় উপস্হিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, সিলেট নগরীর উপকণ্ঠে নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের নিকটবর্তী চেঙ্গেরখাল নদীর তীরবর্তী এলাকায় নির্মিতি অধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সিলেট মেরিন একাডেমি নির্মাণ করা হয়।
প্রকল্প বিবরণীতে জানা যায়- ২০১২ সালে বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও পাবনায় ৪ টি মেরিন একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রচেষ্টায় তার নির্বাচনী এলাকা সিলেট সদর উপজেলার হাটখলা ইউনিয়নে বাদাঘাট এলাকার স্বচ্ছ জলের চেঙ্গেরখাল নদীর পারে সিলেটের প্রথম জলপথের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলেট মেরিন একাডেমী স্থাপনের জন্য ২০১২ সালের জুন মাসে ১০ একর ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে এর কাজের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধানে ১শ ৭কোটি ৩১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিলেট মেরিন একাডেমীর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ পুরোধমে শুরু হয় ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে। এর আগে এ প্রকল্পের মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজ শেষ করা হয়। উক্ত প্রকল্পের আওতায় ছোট বড় ২০ টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এসবের মধ্যে রয়েছে সুরম্য একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ৩টি আবাসিক ভবন, জিমনেসিয়াম, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, প্যারেড গ্রাউন্ড ও সুইমিংপুল,পাম্প হাউজ, সাব-স্টেশন ও জেনারেটর ভবন, আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার, গভীর নলকুপ, কম্পাউন্ড ড্রেন, এপ্রোচ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর ও শহীদ মিনার। সরেজমিনে দেখা যায়- সিলেটে সদর উপজেলার চেঙ্গের খাল নদীর এক পাশে গড়ে উঠেছে সিলেটের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার, মধ্যখানে চেঙ্গেরখাল নদী, অপর পাশে নদীর কূল ঘেষে গড়ে উঠেছে সুসজ্জিত ক্যাম্পাস মেরিন একাডেমি।
এদিকে, মেরিন একাডেমীর প্রথম ব্যাচে ৫০ ক্যাডেট ভর্তি করা হয়েছে। যার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ও নটিক্যাল শাখায় ২৫ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছেন। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেট মেরিন একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডেন্ট, ক্যাপ্টেন কাজী এবিএম শামীম বলেন- মেরিন একাডেমি সিলেট ক্যাম্পাস উদ্বোধন হয়েছে। এ বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের নতুন এ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদি।