বাংলাদেশী শ্রমিকের অভাবে বিপদেই আছে সিঙ্গাপুর
আন্তর্জাতিক সময় :
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর সরকার ঘোষণা করেছে- বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের এবং এই দেশগুলোতে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে অবস্থান করেছেন এমন কাউকে আর সিঙ্গাপুরে প্রবেশ বা দেশটির ভেতর দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেয়া হবে না। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়- উক্ত দেশগুলো ভারতের নিকট প্রতিবেশী হওয়ায় এবং দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া সিঙ্গাপুরেও সম্প্রতি স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে।
সিঙ্গাপুর আরো আগে থেকেই ভারত থেকে আসা যাত্রীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত থেকে আগত যাত্রীদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এখন বিপদে পড়েছে দেশটির শ্রমখাত।
বেশ কয়েকটি সংস্থা সিঙ্গাপুরের ইংরেজী চ্যানেল সিএনএকে বলেছে- যেসব কোম্পানি ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল ছিল, তারা এখন বিকল্প দেশের শ্রমিক খুঁজছে। তবে তারা এটাও বলেছে যে, তারা কেবলই বিকল্প অন্বেষণ করতে শুরু করেছে এবং আপাতত ধরে নিচ্ছে যে প্রকল্পগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত হবে এবং সেগুলো শেষ করতে বিলম্ব হবে।
কোভিড-১৯ আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্ক ফোর্সের সহ-সভাপতি এবং দেশটির শিক্ষামন্ত্রী লরেন্স ওয়াং স্বীকার করেছেন যে, এর মাধ্যমে নির্মাণ খাতের মতো শিল্পগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং সিঙ্গাপুরের অনেক ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
২৬ এপ্রিল ‘বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন অথরিটি’ বলেছে যে, অন্যান্য সহায়তা ছাড়াও চীন থেকে শ্রমিক আনতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও নমনীয়তা দেয়া হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে যে এর মাধ্যমে তাদের ঘাটতি পূরণ হবে না।
নির্মাণ খাতের একজন পরিচালক অ্যালান বলছিলেন- চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে চীনা শ্রমিকরা তাদের নিয়োগের খরচ “বাড়িয়ে দেবে”। কিন্তু আগে বাংলাদেশী বা ভারতীয় শ্রমিকদের অনেক কম মজুরিতেই পাওয়া যেতো।
আরেকজন মালিক বলছিলেন- ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আগে থেকেই দেশটিতে শ্রমিকের ঘাটতি ছিল। এখন সেটা আরো বেড়েছে। চীন থেকে আসা কর্মীরা কিছু শূন্যস্থান পূরণ করতে পারলেও চীনে অর্থনৈতিক সুযোগের উন্নতি হওয়ায় কম সংখ্যক চীনা শ্রমিকই সিঙ্গাপুরে আসতে চাইবে। আমি মনে করি, আমাদের কোনও বিকল্প নেই, আমরা এখনও খুঁজছি।
চ্যানেল এশিয়া তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারত বা বাংলাদেশের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরির হার এখন প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ সিঙ্গাপুরি ডলার। আগে যেটা ৭০ থেকে ৮০ ডলার ছিল।
স্ট্রেইট কনস্ট্রাকশন-এর সিওও কেনেথ লু বলছিলেন- পরিস্থিতি ‘খুব কঠিন’ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আগেই জনশক্তি কম ছিল। তিনি অনুমান করেছেন যে, বর্তমানে শ্রমিকের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অভাব রয়েছে।
সিঙ্গাপুর কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড (এসসিএএল) ২৩ এপ্রিল বলেছে- শ্রম সঙ্কট ইতোমধ্যে ১২ মাসের জন্য নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে বিলম্ব সৃষ্টি করেছে এবং শ্রম ও উপকরণের ব্যয় ৩০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তবে কোম্পানিগুলোকে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার। আজ শনিবার (৮ মে) এক বিবৃতিতে দেশটির মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়- ভারত ও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকদের প্রবেশ বন্ধের সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে সিঙ্গাপুরে প্রায় ১৫,০০০ বিদেশি সংস্থা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বিদেশী শ্রমিকদের মজুরির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হবে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে- গত জুনের পর থেকে, সামুদ্রিক শিপইয়ার্ড, প্রক্রিয়া খাতের ১৫,০০০ সংস্থার জন্য বা বিদেশী শ্রমিকদের জন্য ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ৯২০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার আলাদা করা হয়েছে।
করোনা মহামারিতে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশগুলোর একটি সিঙ্গাপুর। ওয়াল্ডোমিটারের তথ্যানুসারে আজ শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, ৬১ হাজার ৩৩১ জন। এই সময়ে মারা গেছেন মাত্র ৬১ জন।