সিলেটে ‘মুল্লুক চল’ আন্দোলনের শতবর্ষ উপলক্ষে চা শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিল
নগর সংবাদদাতা :
২০ মে রক্তস্নাত মুল্লুক চল আন্দোলনের শতবর্ষ উপলক্ষে শুক্রবার (২১ মে) বিকেল ৩টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্টে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে চা শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় সংগঠক বীরেন সিং, পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সংগঠক অজিত রায়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক মোখলেছুর রহমান। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- চা শ্রমিক নেতা হৃদয় লোহার, আমেনা বেগম, মনা গঞ্জু, রিংকু কর্মকার স্বাধীন সিং প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন- ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়।নানা প্রলোভন দেখিয়ে (গাছ হিলায় গা তো পয়সা মিলে গা) লাভজনক চা চাষের জন্য আজীবন কাজের শর্তে ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, মাদ্রাজ, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বাঁকুড়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে দরিদ্র কৃষকদের নিয়ে আসা হয়। এ সকল শ্রমিকদের মালিকরা দাসের মত খাঠিয়ে পাহাড় জঙ্গল পরিষ্কার করে চা বাগান শুরু করে কিন্তু শ্রমিকদের বাঁচার মত মজুরি, খাবার দেয়া হত না ছোট কুঁড়েঘরে গাদাগাদি করে থাকতে শ্রমিকদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হল। তখন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে এর প্রভাব চা শ্রমিকদের জীবনে আলোড়ন তৈরি করে। চা শ্রমিকরাও বাগানে তাদের বাঁচার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান। শ্রমিকরা তাদের মুল্লুকে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পন্ডিত গঙ্গা দয়াল দীক্ষিত ও পন্ডিত দেওশরণের নেতৃত্বে ৩০ হাজার চা শ্রমিক পায়ে হেটে চাঁদপুর মেঘনাঘাটে পৌছায় সেখানে বৃটিশ গোর্খা বাহিনীর হাতে শতশত চা শ্রমিক নিহত হয় নিহতদের মেঘনার স্রোতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। জাহাজ শ্রমিক ও ছাত্ররা এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ধর্মঘটকে জোড়ালো করেছিল।
বক্তারা বলেন- বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন ২০০৮ সাল থেকে এই ঐতিহাসিক দিনকে স্মরণ করে আসছে, এই ইতিহাস কে শাসকরা, মালিকরা ভয় পায় তাই এ দিবসের স্বীকৃতি তারা দিতে চায় না। মুল্লুক চল আন্দোলনের শতবর্ষ পালিত হচ্ছে অথচ আজকেও চা শ্রমিকদের জীবন পালটায়নি চা শ্রমিকদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। চা বাগানে জন্মই যেন আজন্মের পাপ।সারা দেশে যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য লকডাউন ঘোষণা করে কল-কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছিল তখন থেকে এখনও পর্যন্ত সরকারি পরামর্শে মালিকদের স্বার্থে কোনো ঝুঁকি ভাতা ছাড়া চা বাগান খোলা রাখা হয়েছে। চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার না থাকার কারণে ইকোনমিক জোন, টি ট্যুরিজম’সহ বিভিন্ন অজুহাতে চা বাগানের জায়গা দখলের পায়তারা চলছে।
নেতৃবৃন্দ ২০ মে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, স্ববেতন ছুটি, ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা, দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা ও ৫কেজি সাপ্তাহিক রেশন, প্রত্যেক বাগানে এম বি বি এস ডাক্তার নিয়োগ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, চা শ্রমিকদের পেনশন ব্যাবস্থা চালু করার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ সকল চা শ্রমিকদের প্রতি আন্দোলনের মাধ্যমে মুল্লুক চল আন্দোলনের প্রেরণায় চা শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
সমাবেশ শেষে চা শ্রমিক দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা’সহ চা শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত নানা দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, লাল পতাকা নিয়ে সুসজ্জিত একটি মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।