সিলেটের সড়ক-মহাসড়ক যেন মৃত্যুকূপ : ৫০ দিনে ৫০ মৃত্যু
সময় সংগ্রহ :
এ টি এম তুরাব : সিলেটের মহাসড়কগুলো যেন দিন দিন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনায় ঘটছে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ৩১ মার্চ থেকে ২০ মে এই সময়ে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে শুধু সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ১৬ জন, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ১৪ জন। এছাড়া মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরো ২০ জন মারা যান। মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পঙ্গু হওয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। এমন বাস্তবতায় আলোচনা-সমালোচনার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে অপ্রশস্ত রাস্তা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি আর চালকদের অসচেতনতার বিষয়টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে— ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশিদপুর এলাকাটি ডেঞ্জারজোন হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনায় ঘটছে। গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর এ মহাসড়কটি আলোচনায় আসে। শুধু এই পয়েন্টেই নয়, দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার, নাজির বাজার, ওসমানীনগর, সাদিপুর’সহ বেশকিছু স্থানে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। প্রাণহানির পাশাপাশি অনেকেই অঙ্গ হারিয়ে সারাজীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন দুর্ঘটনার ক্ষত। এসব স্থানে চলতি বছরে প্রায় শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। তবে দুর্ঘটনার সঠিক কোন হিসেব দিতে না পারলেও প্রতিদিন অন্তত দু’একটি করে দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে হাইওয়ে পুলিশের সিলেট জোন জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন— চালকদের অতিরিক্ত ডিউটি ও আয় করার প্রবণতায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। ভাঙাচোরা ও ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, ওভার টেকিং, নিয়ম না মানার প্রবণতা এবং জনসচেতনতার অভাবে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া যানজটে পড়ে সময় ক্ষেপণ হওয়ায় পরবর্তীতে দ্রুত চালিয়ে তা পুষিয়ে নেয়ার মানসিকতাই আর চালকদের বেসামাল আচরণের কারণে ঘটছে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেটের সভাপতি ময়নুল ইসলাম অভিযোগের ব্যাপারে নিজেদের অসচেতনতার দায় কিছুটা স্বীকার করেছেন। এই পরিবহন নেতা বলেন— ঠিকঠাকভাবে গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যেই চালকরা গাড়ি চালান। এর মাঝেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তবে কিছু অসচেতনতার দায় তো চালকদের আছেই।
‘চালকদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি আছে কিনা’-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন— হাইওয়েতে যেসব যানবাহন চলাচল করে সেগুলোর চালক আলাদাভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এছাড়া বড় বড় কোম্পানির বাস চালকদের জন্য নিজস্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্যমতে ও অন্য কয়েকটি সূত্র জানায়— ৬ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ইটভাঙার কাজ করতে গিয়ে মেশিন বহনকারী গাড়ি উল্টে আনোয়ার হোসেন (৩৫) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার হোসেন উপজেলার সাটিয়াজুরি গ্রামের শাহিদ মিয়ার ছেলে।
৭ মে শুক্রবার সকালে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় শামীম মিয়া (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার উবাহাটা গ্রামের মো. রফিক মিয়ার ছেলে। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পুরানবাজার বটেরতল গোলচত্বর এলাকায় চুনারুঘাট থেকে ছেড়ে আসা হবিগঞ্জগামী মোটর সাইকেল মেকানিক ব্যবসায়ী শামীম মিয়াকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
১৬ মে রোববার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাত মাইল নামক স্থানে বাস ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন। নিহতরা হলেন- হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গোপেশ রায়ের স্ত্রী বিউটি রায় (৪০) ও তার দুই বছরের ছেলে গৌরব রায়।
১৭ মে সোমবার রাত ৮টার দিকে ওসমানীনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। উপজেলার তাজপুর কলেজ গেইটের সামনে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে ঘাতক গাড়ি শনাক্ত বা আটক করা সম্ভব হয়নি।
১৯ মে বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ওসমানীনগর হযরত শাহজালাল রহ. ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুল ইসলাম (৫৫) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণগ্রাম কসেরতল (মাদরাসার পাশে) এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে।
২০ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সড়ক দুর্ঘটনায় বায়েজিদ আহমদ নামের মোটরসাইকেল চালক নিহত হন। তিনি সে কামালবাজারের পুরাগাঁও তালুকদার বাড়ি সুনু মিয়ার ছেলে।
২১ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগরে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখামুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
৩০ এপ্রিল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগরে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে সিলেটগামী ট্রাকের চালক ও হেল্পার ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের চক আতাউল্লা নামক স্থানে ঘটনাটি ঘটে।
২১ এপ্রিল বুধবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহপুরে গাড়ি চাপায় তাহির মিয়া নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। উপজেলার শাহপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগরের বেগমপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এমদাদুর রহমান নামে এক যুবক মারা যান। নিহত ওই ব্যক্তি ওসমানীনগরের খসরুপুর গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
৩১ মার্চ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ জন। নিহতরা হলেন- সিলেটের ওসমানীনগরের নিজ কুরুয়া এলাকার মৃত তহির উল্লাহর ছেলে অটোরিকশা চালক শামীম মিয়া (৩৫), বিশ্বনাথের চানসিকাপন গ্রামের ডাক্তার চেরাগ আলীর স্ত্রী রাহেলা বেগম (৫০) ও তাদের মেয়ে কামরুন নেছা শিপা (২০)।
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ২০ ঘন্টায় ১৩ জন নিহত : ১৮ এপ্রিল ভোর ৫ টার দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কের গোয়াইনঘাটে আফছার আহমদ রেনু নামে এক পরিবহন শ্রমিক মারা গেছেন। উপজেলার তামাবিল রোডে অটোরিকশা দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।
২ মে রোববার সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন জৈন্তাপুরে পাখিবিল এলাকার পাঁচজন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ২ জন, কানাইঘাট উপজেলার একজন, জৈন্তা দরবস্ত এলাকার একজন। রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। রোববার সকাল ৬টায় ট্রাক-সিএনজি অটোরিকশা সংঘর্ষে পাঁচজন নিহতের ২০ ঘন্টা অতিবাহিত হতে না হতে সিলেট-তামাবিল সড়কে আবারো দুর্ঘটনা ঘটে। আবারও ঘাতক ট্রাক কেড়ে নেয় আরো ৩ জনের প্রাণ। রাত ১১ টার দিকে বটেশ্বরের জালালনগর এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মারা যান একজন।
এদিকে ১ মে রোববার দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। উপজেলার দরবস্ত পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে।
১১ মে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার সারী-গোয়াইনঘাট সড়কে মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও আরেকজন গুরুতর আহত হয়েছে।
এছাড়া সিলেটের গোলাপগঞ্জ, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, নগরীর সুবিদবাজার, বিয়ানীবাজার ও সুনামগঞ্জের ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, জুড়ী, রাজনগরে একাধিক দূর্ঘটনা ঘটেছে।
১৯ মে বুধবার সন্ধ্যায় গোলাপগঞ্জে মোটরসাইকেল-সিএনজি অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। উপজেলার পৌর শহরের গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের চৌমুহনীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় গোলাপগঞ্জে পাথর বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিকশা চালক সাজু মিয়া (১৮) নিহত হয়েছেন। উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌঘরী এলাকার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত সাজু মিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে।
কানাইঘাটে কৃষিকাজের সময় ট্রাক্টর চাপায় দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নাইম ও মাইশা নামের এই দুই শিশু পরষ্পরের ভাইবোন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার দিঘীরপার ইউনিয়নের লন্তিরমাটি গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
১৮ মে বেলা দেড়টার দিকে বিয়ানীবাজারে মালবাহী ট্রাকের চাপায় ইমন আহমদ (১৬) নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের সাদিপুর এলাকার শেওলা-সুতারকান্দি সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত ইমন আহমদ দুবাগ ইউনিয়নের সাদিমাপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে।
১৬ মে রোববার জকিগঞ্জে গোটারগ্রাম জামে মসজিদের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মোস্তাকিম আলী (৭৫) কাজলসার ইউনিয়নের গোটার গ্রামের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে।
গোটার গ্রাম জামে মসজিদে আসরের নামাজ শেষে মসজিদের সামনে আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়কে গেলে একটি ব্যাটারিচালিত টমটম তাকে চাপা দেয়। এতে তিনি গুরুত্বর আহত হন।
১৩ মে বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস এলাকায় গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মাইক্রোবাসের এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শিশুসহ আরো ৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত নিকলু তালুকদার (২৮) সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ডাইয়রগাও গ্রামের মৃত রাগেন্দ্র নারায়ন তালুকদারের ছেলে।
৯ মে রোববার বিকেল ৫টার দিকে গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সোহরাব হোসেন জনি (১২) নামে এক মাদরাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের হেতিমগঞ্জ মুল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
৫ মে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় নগরীর সুবিদবাজারে ট্রাকচাপায় শাবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির নিহত হন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নড়াইল বলে জানা গেছে।
১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সিলেটের গোলাপগঞ্জে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় আহত আলা উদ্দিন (৫০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর মারা গেছেন। এদিনই দুপুরে সিলেট কমিউনিটি বেইজড হাসপাতালে তিনি মারা যান। নিহত আলা উদ্দিনের বাড়ি উপজেলার পৌর এলাকার উত্তর ঘোষগাঁও গ্রামের মৃত মখদ্দছ আলীর ছেলে। পেশায় তিনি গাড়ির চালক ছিলেন।
১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরতলীর ঘোপাল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ফখর উদ্দিন (৬০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে একটি পিকআপ বেপরোয়া গতিতে ওভারটেকিং করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
১০ এপ্রিল শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মহানগরীর জালালাবাদ থানা এলাকায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় ছাবের আহমদ (১২) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সে থানার মিরপুর গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে। একইদিন শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ট্রাক চাপায় শওকত আজিজ (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহত আজিজ রাজনগর উপজেলার ইটা চা বাগানের বাসিন্দা আহসান আলীর ছেলে। তিনি জুড়ী উপজেলার সোনারূপা বাগানের পাশে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
৯ এপ্রিল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে অমর শর্মা (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এছাড়ার শিবলাল শর্মা নামে আরও এক যুবক আহত হয়েছেন।
একইদিন শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে কানাইঘাট উপজেলায় বেপরোয়া গতির সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় সামিয়ান আহমদ নামে ৭ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার নয়াগ্রামের বোরহান উদ্দিন সড়কে কুদরতের দোকান নামক স্থানে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিশুটি উপজেলার নয়াগ্রামের আব্দুল মালিকের ছেলে।
২ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলার লুয়াইউনী এলাকায় বাসের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছন। নিহতরা হলেন, রাজনগর উত্তরভাগ চা-বাগানের বাসিন্দা রবীন্দ্র কর্মকারের ছেলে সুজন কর্মকার (২২) ও রঞ্জিত রায়ের ছেলে রাজন রাত (২৩)।
এছাড়া একই দিন সুনামগঞ্জের ছাতকে সড়ক দুর্ঘটনায় রেণু ইসলাম (২২) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। সে উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের কালারুকা (খালপাড়) গ্রামের রাহিম উদ্দিনের ছেলে ও ছাতক সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ২৮ মার্চ রোববার দিবাগত রাত ১১টার দিকে কালারুকা বাজার থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে তার বাড়ি যাওয়ার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালপাড় ব্রিজ থেকে নিচে পরে মারাত্মক আহত হয়। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত : এদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নবীগঞ্জ, সিলেটের ওসমানীনগর এলাকার সড়কগুলো আর জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, নবীগঞ্জ উপজেলার সড়কগুলোকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফাউন্ডেশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত দুই বছরব্যাপী গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার স্থানসমূহ পর্যবেক্ষণ করে সারাদেশে ১১৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে। দুর্ঘটনার ধরণ ও মাত্রা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ৫১টিকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এবং ৬৩ টিকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করেছে।
হাইওয়ে পুলিশ সিলেট জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকে বলেন— আমরা সড়কে নিয়মিত অভিযান চালাই। গত ৬ মাসে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তাছাড়া স্পিডগান ব্যবহার করে বেপরোয়া যানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কিন্তু চালকরা কেউ কাউকে সমীহ করতে চায় না। এক গাড়ি ওপর গাড়িকে সুযোগ দিতে চায় না। এছাড়াও রাতে চালকরা বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আর অসচেতনতাতো আছেই। তারা সুযোগ পেলেই ইচ্ছেমতো গাড়ি চালান। এজন্য দুর্ঘটনাগুলো হয়।