সিলেটে গত ২০ বছরের রেকর্ড তাপমাত্রার পর স্বস্তির দমকা হাওয়া
সময় সংগ্রহ :
এনামুল হক রেনু : কাঠফাটা রোদ আর তাপপ্রবাহের মধ্যে খানিকটা প্রাণ জুড়ালো দমকা হাওয়ার শীতল পরশ। ঝড়ের ভীতির বদলে বরং স্বস্তির আনন্দ খেলে যায় নগরবাসীর মধ্যে। তীব্র তাপমাত্রায় গত কয়েকদিন ধরে সিলেটের মানুষের মাঝে ছিল দারুণ অস্বস্তি। বিশেষ করে গত ২ দিনের তীব্র তাপদাহে জনজীবনে উঠেছিল নাভিশ্বাস। তবে, গতকাল সোমবার দিনভর তাপদাহের পর সন্ধ্যায় এক পশলা ঝড়ো হাওয়া অতিষ্ঠ মানুষকে এনে দেয় স্বস্তির পরশ। হঠাৎ করে আকাশে কালো মেঘের সাথে তীব্র বিজলি চমকালেও দেখা মেলেনি কাক্সিক্ষত বৃষ্টির।
নগরবাসী জানান— হঠাৎ দমকা হাওয়ায় রাস্তায় ধুলোবালি উড়ে বিড়ম্বনায় ফেলে পথচারীদের। কিছু কিছু এলাকায় দেখা দেয় বিদ্যুৎ বিভ্রাটও। এদিকে, গত সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটে বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় নগরবাসীকে এনে দেয় শীতল পরশ। বয়ে যাওয়া বাতাসে গাছ-পালার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্টও করেছেন অনেকে।
শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শামীম আহমদ ভিডিও দিয়ে ফেসবুকে লিখেন— এমন বাতাসে শরীরে যেন শীতল পরশ নেমে এসেছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান— গত ২০ বছরের মধ্যে মে মাসে সিলেটে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গত সোমবার। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন— ২০০১ সালে মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিলো ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০০৬ সালে মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিলো ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর আর মে মাসে কোনো দিন এত বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়নি।
তিনি বলেন— সোমবার রাতে সিলেটে কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও তাতে তাপমাত্রা খুব একটা কমবে না। তবে, মঙ্গলবার তাপমাত্রা সামান্য কমলেও ভ্যাপসা গরম থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সরে না যাওয়া পর্যন্ত সিলেটে টানা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী— গত বছরের নভেম্বরে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ডিসেম্বরে বৃষ্টি হয়নি। এবারের জানুয়ারিতে মাত্র একদিন বৃষ্টি হয় ৯ মিলিমিটার। ফেব্রুয়ারি ছিল বৃষ্টিহীন। মার্চে ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ বৃষ্টি হওয়ার কথা ১৫৫ মিলিমিটার। এপ্রিলে ৩৭৬ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪২ মিলিমিটার। মে মাসে ৫৭০ মিলিমিটারের স্থলে ২৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ গত বছরের মে মাসেই ৬৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল বলেও নিশ্চিত করেন আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী।
তার মতে— দু’দিন ধরে গরমের তীব্রতা বেড়েছে সাগরে নিম্নচাপের কারণে। সাইক্লোনস্থলের বর্তমান প্রেসার ৯৬৮ মিলিবার। বায়ুর চাপ সে সময় সিলেটে ৯৯৯ মিলিবার। ভূমি থেকে ৩৩ ফুট উঁচুতে উঠলে বাতাসের আর্দ্রতা ১ মিলিবার কম মিলবে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এই গরমের উৎপত্তি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সব জায়গার জলীয়বাষ্প শোষণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রাও বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন— সাইক্লোনের ঘূর্ণায়নের কারণে বায়ুমণ্ডলের প্রেসার কমে যায়। সাইক্লোন আর্দ্রতা শুষে নেয়। আকাশে মেঘের ঘনঘটা থাকলেও সেগুলোকে ঘূর্ণিঝড় শুষে নেয়। ফলে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। তাছাড়া প্রি-মৌসুমে এবার প্রায় ৬০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল ভারতের চেরাপুঞ্জি। অন্য বছর এ সময়ে ওই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হলেও এবার সেখানেও বৃষ্টিপাত না হওয়ার রেকর্ড ভাঙছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে— সিলেটে বেশি তাপদাহ হয়ে থাকে এপ্রিল ও আগস্টে। এবার পুরো ব্যতিক্রম। বৃষ্টির বদলে মে মাসে তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন ও প্রকৃতি। অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতির বাংলাদেশ থেকে সরে ভারতের দিকে যাচ্ছে।