জামিয়া তা’লীমুল কুরআন সিলেট : একটি বহুমুখী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সময় সংগ্রহ :
জামিয়া তা’লীমুল কুরআন সিলেট। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ডের গোটাটিকর (ষাটঘর) এলাকায় সম্পূর্ণ শহুরে কোলাহলমুক্ত একটি দ্বীনি শিক্ষা ক্যাম্পাস। উত্তর-পূর্বে স্বপ্নীল সোনার গাঁ, প্রকৃতির মুক্ত হিমেল বাতাস আর চারদিকের সবুজাভ সমারোহে স্নিগ্ধ পরিবেশে অবস্থিত এ বহুমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে কুরআন শিক্ষার কিংবদন্তী পুরুষ শায়খুল কুররা মাওলানা আলী আকবর সিদ্দীক রাহ’র মোবারক হাতে আঞ্জুমানে তালীমুল কুরআন বাংলাদেশের অধীনে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জামিয়াটি। আঞ্জুমানের মিশন ও ভিশনকে আরো সুদূরপ্রসারী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে এর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয় আঞ্জুমান কমপ্লেক্স। শায়খ রাহ.’র ব্যাপক শ্রম, ইখলাস ও লিল্লাহিয়াতের মহিমায় তাঁর জীবদ্দশায় জামিয়াটি শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর (মুতাওয়াসসিতাহ) পর্যন্ত অগ্রসর হয়। কালের পরিক্রমায় প্রভুর ডাকে সাড়া দেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁরই সুযোগ্য বড় সন্তান বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব মাওলানা ইমদাদুল হক নোমানী’র হাতে। এরপর আঞ্জুমানের মজলিসে শুরার সিদ্ধান্তক্রমে পরপর এহতেমামের দায়িত্ব পালন করেন দুইজন: মাওলানা ক্বারী হারুনুর রশীদ ও হাফিজ মাওলানা ক্বারী ইনাম বিন সিদ্দীক। ২০১৮ সালে আবারো পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত হন মাওলানা ইমদাদুল হক নোমনী।
শক্ত হাতে হাল ধরে এগোতে থাকেন মাওলানা ইমদাদুল হক নোমানী। তাঁর নিপুণ পরিচালনা ও সাহসিক পদক্ষেপে জামিয়াটি নতুন উদ্যমে এগোতে শুরু করে। শিক্ষার স্তর উন্নীত হয় উচ্চ-মাধ্যমিক স্তর (সানাবিয়াহ) পর্যন্ত। দরসে নেজামির সাথে সংযুক্ত হয় সমন্বিত শিক্ষা কারিকুলাম ও স্বতন্ত্র কারিগরী শিক্ষা বিভাগ। জামিয়ার অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মসজিদ কমপ্লেক্সের দৃষ্টিনন্দন সংস্কার, পরিকল্পিত শিক্ষাভবনকে দ্বি-তলায় উন্নীতকরণ’সহ জামিয়ার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমূহ সংস্কার কাজ জামিয়াকে যেন নতুনভাবে প্রাণ দেয়। সর্বোপরি জামিয়ার শিক্ষার মান, প্রবাদতুল্য বোর্ডিং ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও শৃঙ্খলা জামিয়াকে দিয়েছে বিশেষ খ্যাতি। শরীয়াহ ভিত্তিক আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজ গঠন, আল-কুরআনের বিশুদ্ধ তা’লিম ও তারবিয়াতের মাধ্যমে আদর্শ কুরআন পাঠক, দ্বীনের একনিষ্ঠ দাঈ ও আলোকিত প্রাজ্ঞ আলেমে দ্বীন গড়ে তোলার লক্ষ্যে দারুল উলুম দেওবন্দ ও আঞ্জুমানে তালীমুল কুরআন বাংলাদেশ’র চিন্তা ও দর্শনের সমন্বয়ে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে :
১. বিশুদ্ধভাবে কুরআন মজিদ শিক্ষা : ইলমুল কিরাআত বিভাগের আওতায় আঞ্জুমান নির্দেশিত কুরআন শিক্ষা পদ্ধতিকে সামনে রেখে বিশুদ্ধ কুরআন পঠনে অভ্যস্থ করে গড়ে তোলা।
২. সিলেবাস : কওমী মাদরাসাসমূহের সিলেবাসের সমন্বয়ে পাঠদান।
৩. উন্মুক্ত এরাবিক-ইংলিশ স্পীকিং কোর্স : আরবীভীতি দূর করার লক্ষ্যে এবং যুগের চাহিদাকে সামনে রেখে জামিয়ার অভ্যন্তরে উন্মুক্ত এরাবিক-ইংলিশ স্পীকিং কোর্সের ব্যবস্থা। এ কোর্সের আওতায় শিক্ষার্থীরা আরবিতে কথা বলা, প্রবন্ধ লেখা, বক্তৃতা ও উপস্থাপনার কলাকৌশল অনায়াসে রপ্ত করতে পারে।
৪. জেনারেল শিক্ষা : আরবীশিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, পৌরনীতি ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ। ন্যাশনাল কারিকুলামে জাতীয় পরীক্ষাায় (পিইসি, জেডিসি ও দাখিল) অংশগ্রহণ।
৫. ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ : বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ ও জীবনদক্ষতার উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণ শেষে কারিগরি শিক্ষা উন্নয়ন বোর্ড’র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সার্টিফিকেট লাভ।
৬. কারিগরী শিক্ষা : শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জামিয়ায় স্বতন্ত্রভাবে কারিগরী শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
৭. পরীক্ষা পদ্ধতি ও মান যাচাই : মানোন্নয়ন ও মেধা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সাপ্তাহিক ও মাসিক ক্লাসটেস্ট এবং বৎসরে সেমিস্টার পদ্ধতিতে তিনটি পরীক্ষাগ্রহণ।
৮. স্বাস্থ্যসম্মত বোর্ডিং ব্যবস্থা : শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার জন্য উন্নতমানের আবাসন ও বোর্ডিং ব্যবস্থা।
৯. সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা : সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়াদিতে সতর্কতা তৈরির লক্ষ্যে জামিয়ার অভ্যন্তরে ‘আল আকবর ছাত্র সংসদ’ লক্ষণীয়ভাবে তৎপর। ছাত্রসংসদের আওতায় বক্তৃতা, লেখনী, সংস্কৃতিচর্চা, শরীরচর্চা ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সামসাময়িক বিষয়ে আরো সজাগ ও সচেতন করে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়।
১০. আবাসিক/ অনাবাসিক/ ডে-কেয়ার।
পরিকল্পিত বিভাগসমূহ : ১. কিতাব বিভাগ: ফযিলত (মিশকাত) [স্নাতক] ২. তাখাসসুস ফিল ক্বিরাআত [সাবআ-আশারা কোর্স] ৩. পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা ৪. শায়খুল কুররা আলী আকবর সিদ্দীক রাহ. রিসার্চ ইনস্টিটিউট ৫. স্বতন্ত্র বালিকা শাখা।
শায়খুল কুররা রাহ.’র স্বপ্ন ও মিশনকে সামনে রেখে এভাবেই অব্যাহত রয়েছে জামিয়ার অগ্রযাত্রা ও স্বপ্নযাত্রা। আপনার সন্তানের স্বপ্নীল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে জামিয়া তা’লীমুল কুরআন সিলেট হতে পারে আপনার আস্থা ও নির্ভরতার ঠিকানা। আপনার সঠিক সিদ্ধান্তই দিতে পারে সন্তানের সুন্দর আগামীর নিশ্চয়তা। সচেতন প্রয়াসে গড়ে উঠতে পারে শিশুর জীবনের সোনালী সৌধ। জামিয়ার অগ্রযাত্রায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দোয়ার কোন বিকল্প নেই। তাই জামিয়ার সার্বিক অগ্রগতি ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য সকলের দোয়া ও আন্তরিক সহযোগিতা কাম্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন। আমীন।