নানা সমস্যায় বেহাল শায়েস্তাগঞ্জের সুতাং শাহজীবাজার : দেখার কেউ নেই!
সময় সংগ্রহ :
সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, (শায়েস্তাগঞ্জ থেকে) : হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অন্যতম সুতাং শাহজী বাজার। এই বাজারটিতে সদর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী মাধবপুর উপজেলা, চুনারুঘাট উপজেলার অধিকাংশ জনগণ এই বাজারে আসেন তাদের পণ্য নিয়ে। কেউ বিক্রি করতে কেউ বা আসেন ক্রয় করতে। বাজারটিতে সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বুধবার দুইদিন হাট বসে। বাঁশ বিক্রির জন্য এই বাজারটি হবিগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ বাজার বলেই বিবেচ্য। এছাড়াও সুতাং নদীর কূল ঘেঁষে বাজারটি স্থাপিত হওয়ার কারণে নদীপথে সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন এই বাজারে আসেন কেনাবেচার জন্য। বিভিন্ন রকম কেনাবেচার জন্য বিশেষ করে ধান বিক্রির জন্য এই বাজারেই মানুষজন আসেন অথচ এই বাজারের এখন যে বেহাল দশা যেন দেখার কেউ নেই।
বিগত প্রায় দুই বছর আগে বাজার দখলমুক্ত করতে সরকারি উদ্যোগে অনেকগুলো দোকানঘর ভাঙচুর করা হয়। উচ্ছেদের দুই বছর পেরিয়ে গেলে ও ভাংচুরের জিনিসগুলো রাখার কারণে, ক্রেতা সাধারণ তাদের পণ্য ক্রয় এবং বিক্রিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসন থেকে বা স্থানীয় ভাবে কেউ ভাঙচুর করা জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলা বা নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য কেউ নেই বলেই মনে হচ্ছে।
এদিকে সুতাং বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সুতাং বাজারের শত বছর পুরনো বটবৃক্ষ টি ভেঙে পড়লে বিগত চার পাঁচ বছর ধরে সেই গাছটি এখনো বাজারের উপর হেলেই আছে। এতে করে যেমন ব্যবসায়ীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তেমনি মসজিদে আসা মুসল্লীদের ও আসা যাওয়া করতে সমস্যা হয়।
অন্যদিকে, অল্প বৃষ্টিতেই সুতাং বাজারের রাস্তা ঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, নেই চলার মতো কোনো পরিবেশ। এই বাজারে সুতাং নদী ঘেঁষে মাঠে প্রতি ঈদুল আযহাতে বসে কোরবানির গরু ছাগলের হাট। বাজারের ইজারা বেশি থাকার কারণে বিগত কয়েকবছর যাবত ব্যবসায়ীরা ক্ষতি দিয়েই যাচ্ছেন। অন্যদিকে যারা গরু কেনার জন্য আসেন অতিরিক্ত চার্জের কারণে তারা এ বাজারে গরু কিনতে বিমুখী হয়ে পড়েন।
সুতাং বাজারের পাশেই কামার এবং কুমারের একটি এলাকা আছে, যেখানে তারা তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। স্থানীয় তহসিল তাদের খাস জায়গায় বাউন্ডারি নির্মাণ করে অফিস নির্মাণ করার ফলে এখানে আর কামার কুমাররা বসতে পারেন না। স্থানীয় তহসিলের নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে ও নানা টালবাহানায় এখন পর্যন্ত উদ্বোধন করা হয়নি। কামার-কুমার বাজারের পাশেই তহসিল অফিস নির্মাণ করা হলে ও এখনো বাজারের ওমেন্স কর্নারকেই অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে। তহসিল অফিসের নির্মাণাধীন ভবনের চারপাশে বাউন্ডারি হওয়ার কারণে এই বাজারটির রাস্তাটি অনেকাংশেই সংকোচিত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সুতাং ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বাইপাস রাস্তা নির্মাণে এমন নাজুক পরিস্থিতি কোনরকম যন্ত্রচালিত অথবা ইঞ্জিন চালিত যান চলাচল করতে পারছে না, নিয়মিত বৃষ্টি হলে সুতাং নদী অল্প দিনেই পানিতে ভরে যাবে এবং সেই পানির গতিবেগের কারণে এই বাইপাস বাঁধ থাকবেনা। তখন দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা জানলে হয়তো বা বিষয়টি সহজ হবে সাধারণ মানুষজনের জন্য।
নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়, সুতাং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক মো. নাছির উল্লাহর সাথে। তিনি জানান- আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি কিন্তু এর রাজস্ব এত বেশি নির্ধারণ করা হয় সরকার কর্তৃক, যে কারণে ক্রমাগতভাবে ক্রেতাশূণ্য হচ্ছে এবং অনেক মানুষই বাজারে আসতে চাচ্ছেনা। রাজস্ব টি আরও কমালে হয়তোবা মানুষজন বা পাইকারগণ দূর থেকে এসে মালামাল ক্রয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন।
এক্ষেত্রে সরকার এই বাজারের উপরে নির্ধারিত কর বা রাজস্ব কমানোর জন্য অনেকেরই দাবি এর সাথে আমাদেরও দাবি। এছাড়া ইজারাদার বেশি মূল্যে বাজার ডাক আনার কারণে, ক্রেতা বিক্রেতাদের উপরে চাপ পড়ে। পাশাপাশি বাজার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য যারা কাজ করে, তাদেরকে বাজারে পণ্য বিক্রয়ের জন্য যারা আসেন তাদের উপর থেকে তারা মালামাল গ্রহণ করেন। যেটি নিয়মবহির্ভূত। এছাড়াও বাজারে পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। অল্প বৃষ্টি হলেই বাজারটি পানিতে তলিয়ে যায়। এবং ভাঙাচোরা টিনশেড গুলো সরকারকর্তৃক যদি সুনির্দিষ্ট ভাবে ঠিক করে দেয়া হয় বাজার ব্যবস্থাপনা যদি আর একটু উন্নতি করা হয় তাহলে এই বাজারটি তার আগের জায়গায় ফিরে যাবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে মত স্থানীয় সচেতন মহলের।
এ বিষয়ে নুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মুখলিছ মিয়া জানান- সম্প্রতি জেলা প্রশাসক সুতাং বাজার পরিদর্শন করেছেন। তিনি এসে সরকারী জমি উচ্ছেদের স্থান থেকে অতি দ্রুত আবর্জনা সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদের পাশে কাঁচামালের শেডের উপর গাছ সরানোর জন্য আমি বললে জেলা প্রশাসক এই বিষয়ে ও যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান- আমি পরিষদ থেকে ২/৩ বার ড্রেনের কাজ করেছি কিন্তু তা বর্তমানে ভরাট হয়ে গেছে। আর বাজার উন্নয়ন এটা একটা বিশাল বাজেটের প্রয়োজন, যা এমপি মহোদয় ছাড়া মোটেও সম্ভব নয়। ওনার একটা বাজেট দেওয়া আছে যা অচিরেই বাস্তবায়ন শুরু হলে বাজারের এ অবস্থা পাল্টে যাবে। এবং সুতাং নদীর পাশে যে বিকল্প রাস্তাটি করা হয়েছে, আমি বার বার এ বিষয়টির প্রতিবাদ করে আসছি। সামান্য বৃষ্টিতেই স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ কেউই এখন আসা যাওয়া করতে পারে না। অথচ কর্তৃপক্ষ চাইলেই ব্রিজ ভাঙ্গার যে উচ্ছিষ্ট আছে তা রাস্তায় দিলেই সাময়িক চলার উপযোগী হয়ে উঠে।
সুতাং বাজারের এই বেহাল দশা এবং রাজস্বের ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- রাজস্বের বিষয়টি একেবারেই যারা ডাক নেন বা আমরা ডাক দেই তারা ডাক নেন, সেক্ষেত্রে তারাই আসলে মূল্যটা নির্ধারণ করেন। অর্থাৎ যে মূল্য থাকে তারা যে মূল্যে ডাকলেন তার থেকে তিন বছর পর পর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৬ পার্সেন্ট করে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এটি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়। বিষয়টিতে আমাদের কোনো হাত নেই। অর্থাৎ রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সরাসরি হাত নেই, এটি যারা বাজার ডাক গ্রহণ করেন, তারাই এর মূল্য বর্ধিত করেন।
বাজারের দখলকৃত জায়গা পুনরুদ্ধারে ভাঙচুরের পরিত্যক্ত মালামালের ব্যাপারে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।