বাড়তে পারে শুনেই বেড়ে গেলো দাম : কমা’র গুলো কমেনি
সময় সংগ্রহ :
মামুন পারভেজ : ২০২১-২০২২ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্যের দাম বাড়তে পারে এমন খবরে ইতোমধ্যেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। যেসব পণ্যের দাম কমার কথা সেসব পণ্যের দাম না কমলেও বাজেটের আগে ও পরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েক দফা বাড়িয়ে দিয়েছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বাজেট পাশের আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন সচেতন মহল।
শুক্রবার ও শনিবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে- বাজেট ঘোষণার পরপরই বাজারে তেল, চাল, পেঁয়াজ ও সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে। দাম বেড়েছে সিগারেট, মোইল’সহ বেশ কিছু পণ্যের।
পাইকারী বাজারে কার্টুন প্রতি ২শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে সিগারেটের দাম। বাজেটের আগে থেকে সিলেটের বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সিগারেট ও তামাকজাতীয় পণ্য। দাম বেড়েছে আমদানিকৃত মোবাইল ফোনেরও। ২৫ হাজার টাকার উপরের স¥ার্ট ফোনের দাম ১ হাজার টাকা বেড়েছে। তবে এখনো অপরিবর্তীত রয়েছে বাজেটে মূল্য বেড়ে যাওয়া আমদানিকৃত পারফিউম, সেনিটারি পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন- বাজেট পাশ হওয়ার পর দাম নির্ধারিত হলেই দাম বাড়বে এসব পণ্যের।
প্রস্তাবিত বাজেটে বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রাখা হলেও বাজেট ঘোষণার ৩/৪ দিন আগে থেকে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজেট পাশ হওয়ার পর নতুন দাম নির্ধারণ হয়ে আসলে দাম বাড়ার কথা কিন্তু সিলেটের বাজারগুলোতে বাজেটকে কেন্দ্র করে সিগারেটের কার্টুন প্রতি ২শ’ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাইকারী বাজারে বেনসন সিগারেট প্রতি প্যাকেট ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ২৫৫ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেট ৩০০ টাকা। গোল্ডলিফ ও ক্যাপ্টেন সিগারেট ২০৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিলো ১৮৪ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেট ২২০ টাকায়। ডারবি সিগারেট প্রতি প্যাকেট ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৮৪ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেট ১০০ টাকায়। বন্দর বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল জানান, প্রতিবছর বাজেটের সময় সিগারেটের দাম বাড়ে। তাই বাজেট আসলে আগে থেকেই দাম বেড়ে যায় সিগারেটের। এখনো কোম্পানী রেইট আসেনি। তাই যে যার মত করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে আমদানিকৃত মোবাইলের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাজেট কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দাম বেড়েছে শাওমী কোম্পানীর মোবাইলের। শাওমীর ২৫ হাজার টাকার উপরের সেটের দাম বেড়েছে ১ হাজার টাকা। তবে অন্যান্য ব্রান্ড স্যামসাং, ভিভো, অপ্পো সেটের দাম কমেছে।
নগরীর দাড়িয়াপাড়ার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী মোবিসিটি স্বত্বাধিকারী তপু বিশ্বাস বলেন- বাজেটের পর এখনো পর্যন্ত শুধু শাওমী সেটের দাম বেড়েছে। তবে অন্যান্য কোম্পানীর সেটের দাম কমেছে।
বাজেটে বিদেশি সুগন্ধি আমদানিতে অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। তবে এখনো পারফিউম বা আতরের দাম বাড়েনি। ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম চৌধুরী লিটন জানান- আতরের ব্যবসায় মৌসুমী ব্যবসা। তাই সিজন টাইমে আমদানির প্রয়োজন পরে। যেহেতু এখন সিজন টাইম না তাই দাম বাড়েনি।
সিরামিকের তৈরি বেসিন, প্যাডেস্টাল বেসিন, কমোড বা অন্য যে কোন ধরনের বাথরুম ফিটিংস আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে বাজেটে। এর প্রভাব এখনো সিলেটের সেনেটারি বাজারে না পড়লেও মঙ্গলবার নাগাদ দাম বাড়তে পারে বলে জানান মেসার্স হক সেনেটারি এন্ড টাইলসের ব্যবসায়ী পিংকু লাল দে।
এদিকে, বাজেট পেশের আগেই দাম বেড়েছিল সয়াবিন ও পেঁয়াজের দাম। বাজেটের পরদিন বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫ টাকা। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। সয়াবিন তেলের লিটারে বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলছেন- সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বড় ব্যবসায়ীরা আগেই দাম বাড়িয়েছেন। বাজেট উপলক্ষে সয়াবিনের বাড়তি দামের বোতল বাজারে ঢুকেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ লিটার বোতলের সয়াবিন বিক্রি হয়েছিল ৬৬৫ টাকায়। শুক্রবার তা বিক্রি হচ্ছে ৭২৮ টাকায়। একইভাবে সকাল থেকে বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। সাধারণ পেঁয়াজ (হাইব্রিড) বুধবারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা করে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার ক্ষেত্রে আমদানিপত্র আইপি (ইম্পোর্ট পারমিট) বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে এলসি খুলে দিলেও বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।
গতকাল নগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারী আড়ৎ কালীঘাটে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। কালীঘাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন- দেশি পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমদানিকৃত পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত বাজার কিছুটা অস্তিতিশীল থাকবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দাড়িয়াপাড়ার এক মুদি দোকানী জানান- বাজেটের কারণে মোটা চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট চালের দাম যেটুকু কমেছিল বাজেটের পর সেটা আগের দামে ফিরে গেছে। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। এদিকে মিনিকেট ১ নম্বরটা বেড়ে ৬২ টাকা হয়েছিল। পরে কমে ৫৬ টাকা হয়েছিল। আজ থেকে আবার ৬২ টাকা। মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায়। তবে কালীঘাটের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল রয়েছে। পাইকারী বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজেটের কোনো প্রভাব পড়েনি।
কালীঘাট চাল মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ বলেন- পুরান চালের দাম ৫০ কেজির বস্তা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমেছে। নতুন চালও উঠেছে তাই পাইকারী বাজারে চালের দাম বাড়েনি। স্থানীয় নতুন চাল আরো উঠার বাকি রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে চালের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
এই বাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ীরা জানান- পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। বৃহস্পতিবার থেকেই সব দোকানেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দামে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এছাড়া আটাও প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা।
বেড়েছে সবজির দামও। নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে- একদিনের ব্যবধানে লতা (লম্বা) বেগুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি হয়েছে। আগে লম্বা বেগুন ২৮ টাকায় কিনে ৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন সবজি বিক্রেতারা। শুক্রবার ৪০ টাকায় কিনে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ৪০ টাকার শসা শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্য সবজির দামও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সবজি ব্যবসায়ীরা।