দোয়ারাবাজার-বগুলা সড়ক ভেঙ্গে খাল : দুর্ভোগে অর্ধলক্ষ মানুষ
সময় সংগ্রহ :
তাজুল ইসলাম, (দোয়ারাবাজার) : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার-বগুলা সড়কটি সংস্কারবিহীন থাকায় এখন পথচারীদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিরায়িত নিয়মে গত বছরও আকস্মিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সড়কটির মহব্বতপুর মোকাম এলাকায় সৃষ্ট ভাঙনটি এখন বড় খালে পরিণত হয়েছে।
এলজিইডি’র ওই সড়কটি বগুলা ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামসহ সুরমা ও বাংলাবাজার ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াতসহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নবনির্মিত বাগানবাড়ি বর্ডার হাটে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। বেহাল দশার জনগুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- মেরামত কিংবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের ওই ভাঙায় ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতু দিয়েই যাতায়াত ও গাড়ি পারাপার করছেন পথচারীরা। তাও স্থানীয়ভাবে সেতুটি ইজারা দিয়েছে সুরমা ইউনিয়ন পরিষদ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান- বর্ষায় হাওরের পানি চলাচলে কোনো ব্রিজ না থাকায় সড়কের ওই অংশে প্রতিবছরই ভাঙন সৃষ্টি হয়। এজন্য সড়কটি টিকিয়ে রাখতে ভাঙা অংশে একটি স্লুইচ গেইট নির্মাণ অতি জরুরি।
বগুলা ক্যাম্পের ঘাট গ্রামের নূর আলম বলেন- ‘এটা কোনো নদী-নালা কিংবা খাল নয়। এটাই আমাদের সড়ক। ভাঙনের এক বছর পরও সড়কটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এটা আমাদের জন্য কালের সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা যেন ছিটমহলের বাসিন্দা। ভোটের সময় এলে নেতাদের মুখে নানা প্রতিশ্রুতিসহ কোকিলকন্ঠি সুরে কতোইনা মধুর বুলি। কিন্তু নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর জনদুর্ভোগ নিয়ে তাদের আর কোনো মাথাব্যাথা নেই।’
ব্যবসায়ী সাব্বির আকন্দ বলেন- ‘ভঙ্গুর ওই সড়ক দিয়ে মালামাল পরিবহনে বাড়তি টাকা ও সময় গুনতে হচ্ছে। এতে আমরা চরম লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছি।’
বগুলা রোসমত আলী রাসসুন্দর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক জামাল মিয়া বলেন- ‘বছরজুড়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ওই সড়কটি মেরামত করা একান্ত জরুরি।’
সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মামুনুর রশীদ বলেন- ‘সড়কটি ভাঙার পরপরই এলজিইডি অফিসকে অবহিত করেছি। আপাতত সড়কের ওই ভাঙ্গা অংশে পারাপারের সুবিধার্থে কাঠের সেতু নির্মাণ করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। পথচারীদের পারাপার ফ্রি। শুধু গাড়ি পারাপারে নিয়মমাফিক টোল আদায় করতে বলা হয়েছে।’
বগুলা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম জুয়েল বলেন- ‘সড়ক দিয়ে চলাচলে ট্যাক্স আদায়ে জনসাধারণ প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় দোয়ারা-বগুলা সড়কের বিষয়টি একাধিকবার উত্থাপন করেও ফল হয়নি। সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানাই।’
জানতে চাইলে দোয়ারাবাজারের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ পাল প্রতিবেদককে বলেন- ‘আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সড়কটিকে বন্যা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে এখানে ব্রিজের চাহিদা দিয়েছি। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের দাবি এখানে ব্রিজ হলে নাকি বন্যার সময় তাদের বসতবাড়িতে পানি উঠে ফসলি জমি তলিয়ে যাবে। ওরা শুধু প্রটেকশন চায়। কিন্তু এখানে তো প্রটেকশন টেকানো যাচ্ছেনা। কারণ প্রতিবছর উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢল এখানে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়। যেকারণে প্রতিবারই এখানে ভাঙন দেখা দেয়।’