‘স্বপ্নের ঘরে’ উঠছেন সিলেটের আরও ৬২১২ পরিবার
সময় সিলেট ডেস্ক :
তাদের ঘর নেই, নেই জমিও। তাই তাদের পরিচয় ভূমিহীন। তারা ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে থাকছেন কেউ কেউ। আবার কেউ থাকছেন সরকারি জমিতে কোনোমতে ঘর বানিয়ে। এসব বেশিরভাগ পরিবারেই এক জায়গায় দারুণ মিল। তা হলো মাথা গুঁজার ঠাই নাই। নাই নিজের কোন ঠিকানাও। তবে ভূমিহীন, ছিন্নমূল এসব মানুষের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে। পাচ্ছেন নতুন সেমিপাকা বাড়ি। হচ্ছে নিজস্ব ঠিকানা। মিলছে স্বস্তি।
সরকার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন, ভূমিহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র সিলেটের প্রায় ১০ হাজার পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে বিভাগের ২ হাজার ৬৬৮ জনকে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী ২০ জুন ‘স্বপ্নের ঘরে’ উঠছেন আরও ৬ হাজার ২১২ পরিবার।
এসব ঘরের মধ্যে সিলেট জেলায় ১০৯২ পরিবার, সুনামগঞ্জে ৩৯৮০ পরিবার, হবিগঞ্জে ৪৪১ পরিবার এবং মৌলভীবাজারে ৬৯৯ পরিবার আগামী ২০ জুন এসব ঘরের মালিকানা বুঝে পাবেন। পাবেন নিজস্ব ঠিকানাও।
আগামী ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন তিনি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছে বিভাগীয় কমিশনার সিলেট অফিস। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি ঘর উদ্বোধনকালে তিনি সরাসরি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে যুক্ত হয়েছিলেন।
১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিটি ঘর ইটের দেওয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি। এসব সেমিপাকা ঘরে দুইটি শয়নকক্ষ, একটি খোলা বারান্দা, একটি রান্না ঘর এবং একটি শৌচাগার আছে। এর বাইরে সামনে এবং পিছনের অংশে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা।
বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) কার্যালয় সিলেট সূত্রে জানা যায়- প্রকল্পের আওতায় সবচেয়ে বেশি ঘর নির্মাণ হচ্ছে সিলেট জেলায়। এ জেলায় ৪ হাজার ১৭৮ জন এসব ঘর পাবেন। আর সবচেয়ে কম ঘর নির্মাণ হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় মাত্র ৭৮৭ জন পাচ্ছেন সেমিপাকা এ ঘর। এর বাইরে সুনামগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৯০৮ এবং মৌলভীবাজারে ১ হাজার ২২৬ হাজার জন পাবেন এ ঘর। এসব ঘরের মধ্যে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি সিলেট বিভাগের ২ হাজার ৬৬৮ পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হয়। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১ হাজার ৪০৬, সুনামগঞ্জে ৪০৭, হবিগঞ্জে ৩১৩ এবং মৌলভীবাজারে ৫৪২ টি পরিবার ছিল।
বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) কার্যালয় সিলেট সূত্রে আরও জানা যায়- সিলেট জেলায় বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরের সংখ্যা ৪ হাজার ১৭৮টি। এরমধ্যে ২৩ জানুয়ারি হস্তান্তর হয়েছে ১৪০৬টি আর ২০ জুন হস্তান্তর হবে ১০৯২টি। এরমধ্যে সিলেট সদরে ১২৫, দক্ষিণ সুরমায় ৪৯, ওসমানীনগরে ১৯৪, বিশ্বনাথে ১৪১, বালাগঞ্জে ১৬০, গোলাপগঞ্জে ১৮৯, বিয়ানীবাজারে ৭৪, জৈন্তাপুরে ১২০, গোয়াইনঘাট উপজেলার ৪০টি পরিবারের মাঝে এসব ঘর হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে ২৩ জানুয়ারি বালাগঞ্জ উপজেলায় ১৪০টি, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১৫টি, সিলেট সদর উপজেলায় ১৭টি, ওসমানীনগরে ১৪০টি, বিশ্বনাথে ১২০টি, গোলাপগঞ্জে ৭৭টি, বিয়ানীবাজারে ৫০টি, গোয়াইনঘাটে ২৫০টি, জৈন্তাপুরে ১২০টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৭২টি, কানাইঘাটে ১৯৩টি, জকিগঞ্জে ৫৫টি এবং কোম্পানীগঞ্জে ১৫৭টি পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হয়।
অন্যদিকে মৌলভীবাজারে ১২২৬ টি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। এরমধ্যে ২৩ জানুয়ারি হস্তান্তর হয়েছে ৫৪২ টি আর ২০ জুন হস্তান্তর করা হচ্ছে ৬৯৯টি ঘর। এরমধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৩৭টি, রাজনগরে ৪২টি, কুলাউড়ায় ৮৩টি, জুড়িতে ৮০টি, বড়লেখায় ১০৫টি, শ্রীমঙ্গলে ২০০টি, কমলগঞ্জে ১৫২টি পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ১৫০ টি, জুড়ী উপজেলায় ৭ টি, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১০০ টি, কমলগঞ্জে ৬০ টি, রাজনগরে ৯০ টি, কুলাউড়ায় ৮৫ টি আর বড়লেখা উপজেলায় ৫০ টি পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হয়।
আর হবিগঞ্জ জেলায় বরাদ্দ হয়েছে ৭৮৭ টি। এরমধ্যে ২৩ জানুয়ারি হস্তান্তর হয়েছে ৩১৩ টি আর আগামী ২০ জুন হস্তান্তর হবে ৪৪১ টি। এরমধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০০ টি, শায়েস্তাগঞ্জে ১৫ টি, লাখাইয়ে ২৮ টি, বাহুবলে ৬০ টি, বানিয়াচংয়ে ১২০ টি, নবীগঞ্জে ৪৮ টি, চুনারুঘাটে ৪০ টি এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৩০ টি পরিবারের মধ্যে এসব ঘর হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫০ টি, বাহুবল উপজেলায় ২০ টি, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ২৫ টি, লাখাই উপজেলায় ১৮ টি, নবীগঞ্জ উপজেলায় ২৫ টি, বানিয়াচংয়ে ৩৭ টি, আজমিরীগঞ্জে ২০ টি, চুনারুঘাট উপজেলায় ৭২ টি আর মাধবপুর উপজেলায় ৪৬ টি পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হয়।
আর সুনামগঞ্জ জেলায় বরাদ্দ ৩ হাজার ৯০৮টি ঘর। এরমধ্যে ২৩ জানুয়ারি হস্তান্তর হয়েছে ৪০৭টি ঘর। আর ২০ জুন হস্তান্তর হবে ৩৯৮০টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ সদরে ৪০০টি, দোয়ারাবাজারে ২৬৪টি, বিশ্বম্ভরপুরে ১৯০ টি, ছাতকে ১৭৫টি, জগন্নাথপুরে ৯২টি, ধর্মপাশায় ৩০০টি, জামালগঞ্জে ২৯৭টি, দিরাইয়ে ৪২০টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২৬১টি, তাহিরপুরে ১৪৬টি এবং শাল্লায় ১৪৩৫টি পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি শাল্লায় ১৬০টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৩০টি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫০টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ১০টি, ছাতক উপজেলায় ১০টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১০টি, দিরাই উপজেলায় ৪০টি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২৩টি, তাহিরপুর উপজেলায় ২৫টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৩০ টি, ধর্মপাশায় ৩৪টি এবং জামালগঞ্জে ২৫টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. ফজলুল কবীর জানান- ‘মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন সব পরিবারকে নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২০ জুন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধনের পর সিলেট বিভাগের ৬ হাজার ২১২ টি গৃহহীন পরিবারকে নতুন ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’