পর্যটনে নয়া আকর্ষণ কমলগঞ্জের ‘পদ্মছড়া চা-বাগান লেক’
সময় সংগ্রহ :
চারদিকে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়। উঁচু-নিচু টিলার সমাহার। সবুজের নান্দনিকতা, বিস্তীর্ণ পাহাড় ও বনাঞ্চল পরিবেষ্টিত নদী, ছড়া, ঝর্ণা ও জলপ্রপাত দুটি পাতা একটি কুড়ির প্রাচুর্যে ভরপুর এক সমৃদ্ধ শস্য ভাণ্ডার মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ।
এই জনপদ বহু ভাষাভাষী, বর্ণ-গোত্র আর ধর্মাবলম্বীদের এক অপূর্ব সূতিকাগার। প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় সিক্ত এই এলাকায় জনজীবনও তেমনি সৌহার্দপূর্ণ ও মমতায় ভরপুর। বলা হয়ে থাকে কমলগঞ্জ প্রকৃতির এক জীবন্ত যাদুঘর। কমলগঞ্জ যেন পুরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। পর্যটনে বিপুল সম্ভাবনার কমলগঞ্জ।তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে লিখে প্রকাশ করা যাবে না। শেষও হবে না না লিখলে। খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে, অনাদরে অবহেলায় ছড়িয়ে আছে অনেক পর্যটন সম্ভাবনা। তাই হাঁটতে হাঁটতে এসব দৃশ্যেরই দেখা পাবেন আপনি, যদি যান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া পর্যটকদের আকর্ষণ করা পদ্মছড়া লেক কমলগঞ্জের অপরূপা এই লেকটি এখন বিনোদনের স্থান। বছরের যে কোনও সময়ে আনন্দভ্রমণ, পিকনিক বা বেড়ানোর জন্য বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজনদের নিয়ে যে কেউ আসতে পারেন পদ্মছড়া লেকে।
তবে এখনো দেশের অনেকের কাছেই অচেনা-অজানা এই পদ্মছড়া লেকটি। পাহাড়ের বুকের ভেতর নিজের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের মাঝে প্রকৃতির সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এটি।
এখানে এলে দেখতে পাবেন সবুজের সমারোহ, নাকে এসে লুটোপুটি খাবে সবুজ পাতার ঘ্রাণ। পলকেই আপনার মনকে চাঙ্গা করে তুলবে এই প্রকৃতি। আপনি বিমোহিত হয়ে মিলিয়ে যাবেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে। লেকের পানি, সুনীল আকাশ আর শ্যামল সবুজ পাহাড়, ছবির মতো চা বাগানের এই মনোরম দৃশ্য আপনাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের জগতে। চারদিকে পাহাড়-টিলার মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব। প্রতিদিনই ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা আসছেন এখন পদ্মছড়া লেকে।তবে কোনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ পর্যটনের জায়গাটির দিকে নজর দিচ্ছে না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লেকটিকে আকর্ষণীয়ভাবে সংস্কার করা ও পর্যটকদের জন্য আরও উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব।
এদিকে পদ্মছড়া লেককে দৃষ্টিনন্দন করার লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বাগান স্টাফদের উদ্যোগে কৃষ্ণচূড়া, বনজ ও ফলজ গাছের শতাধিক চারা রোপণ করা হয়েছে। চারা রোপণ কার্যক্রমে পদ্মছড়া চা-বাগানের প্রায় ৫০ জন চা শ্রমিক সহযোগিতা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক রুহুল ইসলাম হৃদয় ও আহাদ মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন- আসলেই সৌন্দর্যের ভাণ্ডার নিয়ে যেন দাঁড়িয়ে আছে এই লেকটি। চারিদিকে সবুজের সমারোহ সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ।
তারা আরও বলেন- প্রথম কেউ এখানে আসলে আর পরে আসতে না করবে না। এটি আসলেই দৃষ্টি নন্দন একটা লেক পর্যটনের অপার সম্ভাবনা এই পদ্মছড়া লেকটি। শুধু বৈদেশিক আয়ই নয়, কমলগঞ্জকে তুলে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়ে তা কার্যকর করতে পারলে আমূল পরিবর্তন বদলে রাজস্ব, যা আমাদের সামগ্রিক জন্য সহায়ক হবে।
মাধবপুর চা বাগানের স্টাফ মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল বলেন- ‘দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াচ্ছে মাধবপুর লেক তার সঙ্গে কমলগঞ্জে মনোরম পরিবেশে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য নিয়ে পদ্মছড়া লেক একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এসময় স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোতাহের আলী বলেন- ‘পদ্মছড়া চা-বাগানের লেকে অনেক পর্যটক আসছেন তাই লেকটিকে আরও দৃষ্টিনন্দন করার লক্ষ্যে আমরা বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। কিছুদিন আগে পর্যটকরা বাইক বা গাড়ি করে স্বাভাবিক ভাবে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছি। এ বছর আমরা লেকের রাস্তার দু-পাশে প্রায় শতাধিক বৃক্ষ রোপণ করেছি। গাছ গুলো বাঁচিয়ে রাখতে স্থানীয়দের সহযোগিতা চাই। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা এই পদ্মছড়া লেকটি। শুধু বৈদেশিক আয়ই নয় ,তিনি আরও বলেন, কমলগঞ্জকে তুলে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কিভাবে যাবেন :
এই পদ্মছড়া লেকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন, যোগে মৌলভীবাজার শমসেরনগর যাওয়া যাবে, সেখান থেকেও এখানে আসতে পারেন। বাস বা রেলপথে এলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে করে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ বা শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে।
দেশের সব আন্তঃনগর ট্রেন শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ ও শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতী করে, এখানে সব আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতী আছে। ফলে আগেই জেনে নিতে হবে কোথায় নামতে হবে।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে নামলে সেখান থেকে বাস ও সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া যায়। সেখান থেকে সিএনজি করে যাওয়ার পর সহজেই এই পদ্মছড়া লেকে পৌঁছানো সম্ভব। আবার ভানুগাছ ও শমশেরনগর নামলে অটোরিকশায় করে সেখানে পৌঁছাতে পারেন। আর ঢাকা বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসে আসতে চাইলে মৌলভীবাজারগামী বাসে ওঠে নামতে হবে শ্রীমঙ্গলে। সেখান থেকে একইভাবে যাওয়া যায়।