তাহিরপুরে নদীর মুখ থেকে বালি উত্তোলনের পায়তারা : হুমুকিতে অর্ধশতাধিক গ্রাম
তাহিরপুর সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মাহারাম নদীর মুখে দীর্ঘদিন ধরে পলি বালিতে ভরাট হওয়া বালি উত্তোলন না করতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান।
গত রোববার (১৩ জুন) এলাকার জনস্বার্থে এ আবেদনটি করেন- উপজেলার ৪নং বড়দল (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কাসেম।
সূত্রে জানা যায়- উপজেলার ৪নং বড়দল (উত্তর) ইউনিয়নের রাজাই মৌজার চালিয়ারঘাট মানসীগোফ মৌজাস্থীত ও মাহারাম (পাইলট) নদীর সহিত যাদুকাটা নদীর সংযোগ থাকায় উক্ত নদীতে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলে প্রবল স্রোতে নদীর তীরবতী বিস্তীর্ণ এলাকা ও বোর ধানের হাওর সহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেত। অকাল বন্যায় হাওরের বোরো ফসল রক্ষার জন্য যাদুকাটার শাখা নদী মাহারাম নদীর মুখে প্রতি বছরই লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বেড়ি বাঁধ দেয়া হত। একপর্যায়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা পলি বালিতে এবং ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় পাহাড়ি ঢলে মাত্রাতিরিক্ত বালি চলে এসে স্থায়ীভাবে ভরাট হয়ে যায় মাহরাম নদীর মুখ। ফলে ৩৩ বছর ধরে বোরো ফসল রক্ষায় মাহরাম নদীতে আর বেড়ি বাঁধ দেয়ার প্রয়োজন পড়ছেনা। বেশ কিছুদিন ধরে কিছু দুষ্কৃতিকারী ও এলাকার সঙ্গবদ্ধ একটি প্রভাবশালী চক্র বিভিন্ন পন্থায় মাহারাম নদীর মুখ থেকে বালি উত্তোলন করার পায়তারা করছে। প্রাকৃতিক সৃষ্ট বাঁধ হতে বালি উত্তোলন করলে পাহাড়ি ঢলের আগাম বন্যার হুমকিতে পড়বে মাটিয়ান, শনি হাওর সহ ছোট বড় কয়েকটি হাওরের প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর বোরো জমির ফসল। গত কয়েকদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র স্থায়ীভাবে বালিতে ভরাট হওয়া মাহরাম নদীর মুখ থেকে ইচ্ছেমত বালি উত্তোলন করার চেষ্টা করছে। ফলে পর্যটন স্পট খ্যাত শিমুল বাগান’সহ নদীর পাড়ের অর্ধশতাধিক গ্রাম হুমকির মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে।
দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহার আলী বলেন- প্রাকৃতিক উপায়ে বালিতে ভরাট হওয়া মাহারাম নদীর মুখ থেকে বালি উত্তোলন করলে সুষ্ট বাঁধ ভেঙ্গে ভাটি এলাকার হাওররক্ষা বাঁধ’সহ অর্ধশতাধিক গ্রাম হুমুকিতে পড়বে।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন- মাহারাম নদীর মুখে প্রাকৃতিক উপায়ে পলি পড়ে বিশাল বালির বাঁধ সৃষ্ট হওয়ায় ভাটি এলাকার হাওর পাড়ের মানুষের জন্য আর্শিবাদ। যদি এ বাঁধটির মুখ থেকে বালি উত্তোলন করা হয় তাহলে উত্তর বড়দল, দক্ষিন বড়দল ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম’সহ হাওরের বোর ফসল হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন- এবছরই বৈশাখ মাসে যে পাহড়ী ঢল এসেছিল, যদি মাহারাম নদীর মুখে বালির বাঁধ না থাকতো তাহলে হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ রক্ষা করা যেত না।
মাটিয়ান হাওর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বশির আহমদ বলেন, মাহরাম নদীর স্থায়ী বাঁধটি কেটে বালি নিয়ে গেলে শুধু মাঠিয়ান হাওর নয় উপজেলার সবকটি বোরো ফসলি হাওর আগাম বন্যার হুমকিতে পড়বে।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম বলেন- মাহারাম নদীর মুখ থেকে বালি উত্তোলন করলে তিনটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামসহ হাওরের বোর ফসল অকাল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। এজন্যই এলাকার জনস্বার্থে নদীর মুখ থেকে বালি উত্তোলন না করতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত আবেদন দিয়েছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন- উপজেলার তিনটি নদীতে মাননীয় সুপ্রিমকোর্ট লিজ দিয়েছেন। লীজ ব্যাতিত কোন স্থান থেকে অবৈধ ভাবে কেউ বালি উত্তোলন করলে তাদের বিরোদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।