বন্দর ফুট ওভারব্রীজ এখনও অব্যবহৃত : নির্মাণ করা হচ্ছে আরও ৩টি
স্টাফ রিপোর্টার :
দীর্ঘ যানজট আর পথচারীদের সুবিধার জন্য ২০১৫ সালে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় নির্মাণ করা হয় ফুট ওভারব্রীজ। কিন্তু এ ফুট ওভারব্রীজটি এখন অব্যবহৃত। সন্ধ্যা হলে জমে মাদক সেবীদের আড্ডা। এমন অবস্থায় সিসিক কর্তৃপক্ষের গলার কাটা হয়ে আছে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাদচারী সেতুটি।
এদিকে স্থান নির্বাচনের কারণে এ ওভারব্রীজটি অব্যবহৃত থাকলেও এবার আরও ৩টি ফুটওভার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ তিনটি ফুট ওভারব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।
নূর আজিজুর রহমান জানান- প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীতে আরও ৩টি ফুট-ওভারব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে টিলাগড়ে একটি সেতুর কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ। অপেক্ষায় আছে বাকি দু’টি ফুটওভার নির্মাণকাজের। তবে ইতোমধ্যে এ দু’টির জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সিসিক সংশ্লিষ্টরা।
তিনি জানান- টিলাগড়ের এটি ছাড়াও আরেকটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এবং অন্যটি কদমতলী এলাকার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে নির্মাণ করা হবে।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পাদচারী সেতুর কাজ শেষ। কিন্তু পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য ফুটওভার ব্রীজটি নির্মাণ করা হলেও এটি ব্যবহার করছেন না কেউ। কেবল সড়কের উপর শোভিত হচ্ছে এটি। এ অবস্থায় এসব ফুটওভারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
তবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন- মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রয়োজন। সড়ক পারাপার ঝুঁকিমুক্ত করতে এসব ফুটওভার ব্যবহারে মানুষকে সচেতন হতে হবে। এমনকি টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজ ও সরকারী কলেজ খুললে পাদচারী সেতুটির ব্যবহার বাড়বে। শিক্ষার্থীরা সেতু ব্যবহার করে সড়ক পারাপার হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আগ্রহে ২০১৫ সালে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের বন্দর বাজার এলাকার কোর্ট পয়েন্টে নির্মাণ করা হয় সিলেটের প্রথম পাদচারী সেতু। স্থাপনের পর থেকেই এটি অব্যবহৃত থাকায় এটি নিলামে বিক্রি করে দেয়ার উদ্যোগ নেয় সিসিক। বিক্রির জন্য পরপর দুইবার দরপত্রও আহ্বান করা হয়। কিন্তু নিলামে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় নির্মিত এই সেতুর দাম উঠে মাত্র ২২ লাখ টাকা।
এর প্রেক্ষিতে সেতুটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সিটি কর্পোরেশন। এরপর সিদ্ধান্ত হয় এটি নগরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে সরিয়ে নেয়ার। তবে সেটিও পরিকল্পনা পর্যায়েই রয়ে গেছে এখনও। অপ্রয়োজনীয় এই সেতুটি এখন সড়ক সম্প্রসারণ ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের জন্য উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে কোর্টপয়েন্ট এলাকার ফুট ওভারব্রীজটি দীর্ঘদিন থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে না নিয়ে নতুন করে নির্মাণের এ উদ্যোগকে লুটপাটের পায়তারা বলে মন্তব্য করছেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম।
তিনি বলেন- ‘কোর্ট পয়েন্ট এলাকার ফুট-ওভারব্রীজ এখন টুকাই, ছিনতাইকারী আর মাদকসেবীদের আখড়া। এটি সরিয়ে হুমাইয়ুন রশিদ চত্বরে নেওয়া হবে বলে মেয়র জানিয়েছিলেন। কিন্তু এটি না সরিয়ে নতুন করে আরও দুটি নির্মাণের যে উদ্যোগ তা লুটপাটের একটি পায়তারা মাত্র। ভালো কাজ হোক এটা সবাই চাই। কিন্তু অপচয় সেটা মেনে নেওয়ার মতো না। সুতরাং আমার মনে হচ্ছে এসব ফুটওভার নির্মাণের আগে কোর্ট পয়েন্ট এলাকার এটি অন্যখানে কাজে লাগানো হোক।’
তবে কোর্ট পয়েন্টের ফুট ওভারব্রীজের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন- এটি নিলামের চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু যে দাম ওঠে তাতে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। তাই আপাতত এটির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।