গোয়াইনঘাটে ট্রিপল মার্ডার: পারিবারিক বিরোধে মা-সন্তানদের জবাই করে হত্যা
স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের গোয়াইনঘাটে মা ও দুই সন্তানকে খুনের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। নিহত আলিমা বেগমের বাবা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে বুধবার (১৬ জুন) রাতে মামলাটি করেন। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান।
ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় পুলিশ বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। সন্দেহের তালিকায় রাখছে আহত গৃহকর্তা হিফজুর রহমান (৪০)। তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হিফজুর অনেকটা সুস্থ হলেও পুলিশের সঙ্গে অসংলগ্ন কথা বলছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়- তিনজনের লাশ ও গৃহকর্তা হিফজুরকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনায় পূর্বশত্রুতার বিষয় সামনে নিয়ে তদন্ত করা হয়। তবে সেখানে হত্যাকাণ্ডে মতো ঘটনা ঘটার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পারিবারিক কলহ নিয়েও তদন্ত করছিল পুলিশ। এতে কিছু রহস্যের সন্ধান পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বঁটি হিফজুরের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হিফজুরের আচরণ ও তাকে যে অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি অনেকটা সন্দেহজনক।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়- হিফজুর পরিবারে কলহ ছিলো। এনিয়ে গত দুই মাসে দুইবার সালিশও হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৮ জুন) হিফজুরের শালির বিয়ে হওয়ার কথা। সেই বিয়েতে যাওয়া না যাওয়া নিয়েও অন্তঃসত্বা আলেয়া বেগমের সাথে হিফজুরের ঝগড়া হয়। পারিবারিক কলহের জের ধরে দুই শিশুসহ তাদের মাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণ করছেন স্থানীয়রা। তারা জানান- ঘটনার দিন সকালে প্রতিবেশীরা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেন তখন মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার সময় যখন ক্যামেরার ফ্লাশে হিফজুর চোখ খুললেও আবার চোখ বন্ধ করে ফেলেন। তখন কাছে গিয়ে দেখা যায় তার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক।
এদিকে, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সম্পৃক্ত পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- পুলিশ দুটি বিষয় নিয়ে তদন্ত করেছে। এর মধ্যে একটি জমিজমা নিয়ে বিরোধ এবং অন্যটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক লঠর। এ জন্য কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি দিকে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে। পুলিশের ধারণা- হিফজুর স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে খুন করে থাকতে পারেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- হিফজুরের শরীরে আঘাতগুলো তেমন গুরুতর নয়। এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তার মাথা ও পায়ের আঘাতগুলো তিনি নিজে নিজেই করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঘরের দরজা ভাঙার কোনো নিশানা মেলেনি। বর্তমানে হিফজুর কেবিনে আছেন। সেখানে তার সঙ্গে বিভিন্ন কৌশলে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সেটি এড়িয়ে গিয়ে অসংলগ্ন কথা বলছেন তিনি।
ভোরে ৩ জনকে ফোন করেন হিফজুর : বুধবার ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার দিকে হিফজুর তার ব্যবহৃত মুঠোফোন দিয়ে তিনজনকে ফোন দিয়েছিলেন। এর মধ্যে তাজ উদ্দিন ও সোহেল স্থানীয় বাজারে পান-সুপারির ব্যবসা করেন। অন্যজন হিফজুর রহমানের বিয়েতে উকিল বাবা ফয়েজ মিয়া (৪০)।
পুলিশ বলছে- ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ফয়েজ মিয়াকে ফোন দিয়ে কিছু টাকা নিয়ে বাড়ি আসতে বলেছিলেন হিফজুর। ওই সময় তিনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। এছাড়া ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন ও সোহেলকে ভোর সোয়া ৫টা এবং পৌনে ৬টার দিকে ফোন দিয়েছিলেন হিফজুর। ওই সময় তিনি অসুস্থ থাকায় পান-সুপারি দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।