এস.এম. জাকির হোসাইনের মিথ্যাচার ও একজন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন
সময় সংগ্রহ :
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে গত রোববার (১৩ জুন) রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের গাড়ি আটকে হামলার চেষ্টার ঘটনায় জাকিরের অনুসারিদের কেউ কেউ পরিবেশমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিনের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই ঘটনায় পরিবেশমন্ত্রীর নাম জাড়ানোর চেষ্টায় দলীয় নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা ঘটনাটিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসাইনের ‘নাটক’ উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তাদের কেউ আবার জনপ্রিয়তা পেতে জাকির হোসাইন তাঁর সমর্থকদের দিয়ে সৎ-সজ্জন ও সাদা মনের অধিকারী পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নামে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করছেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
পরিবেশমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিনের নাম জাড়ানোর চেষ্টায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসাইনের কড়া সমালোচনার করে নিজের ফেসবুক আইডিতে লেখেছেন ‘বড়লেখা ছাত্রকল্যাণ সংঘ সিলেটে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বাবু। লেখাটিতে তিনি পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের মানবিকগুণগুলোও তুলে ধরেছেন। ‘এস.এম.জাকির হোসাইনের মিথ্যাচার ও একজন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন’ শিরানামে তাঁর লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো –
লিখাগুলি একটু লম্বা হবে। পড়লেও পড়তে পারেন। লিখতাম না, যদি না নাটকে একজন শাহাব উদ্দিন এমপিকে টানা না হতো। হয়তো আমি এমপি সাহেবের কর্মী নয়, তবুও যে একজন ব্যক্তি শাহাব উদ্দিন এমপি সাহেব বলেই দুটি কথা লিখতে হয়। সেদিন সন্ধ্যার পর ঢাকা বসুন্ধরা থেকে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন সাহেবকে কল দিয়ে আমার নাম ও বড়লেখা ছাত্রকল্যাণ সংঘ সিলেট’র পরিচয় দিয়ে সিলেটি ভাষায়ই কথা বলতে চাইলাম। আমার ব্যক্তিগত নয় ,জনকল্যাণমূলক কোনো কাজে। তিনি আমার সাথে শুদ্ধ ভাষায় একটু ভাব নিয়ে অন্যের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলে ‘তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি’ বলে রেখে দিলেন। ভাব থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ তখন তিনি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। ব্যস্ততাও থাকতে পারে বলে পরে ফোন দেওয়ার কথা বলতেই পারেন। কিন্তু ঐ পর আজও হয়নি। পরপর দুইদিন আরও দুইবার ট্রাই করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। তারপর টেক্সট করি। কোনো সাড়া পাইনি।
ঠিক এরপরদিনই Jalalabad Association, Dhaka জালালাবাদ এসোসিয়েশন, ঢাকা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাহিমা চৌধুরী মনি আপার সাথে কথা হয়। উনি হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী এমপির ভাইয়ের বউ। তিনি আমার পরিচয় পেয়েই ফোন কেটে দিলেন, ভাবলাম উনিও হয়তো ভাব নিচ্ছেন। কিন্তু নাহ, উনি কল ব্যাক করে ৭ মিনিট কথা বললেন। আমি ছোট বলে ফোনের টাকা খরচ না করতেই উনি কল কেটে ব্যাক করলেন। তখনই বুঝে ফেললাম জাকির সাহেব এতো জনপ্রিয় নেতা হয়েও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পদে এই মনি আপার কাছেই কেনো হেরেছিলেন। যাক, এরপরে আমার অনেক কাছের মানুষ জাকির সাহেবের সাথে দেখা করা, ফটো তোলাতে আমাকে নিয়ে যেতে চাইলেও পাশ কেটে চলেছি। বড়লেখায় একাধিকবার এসেছেন, সিলেট গিয়েছেন। খুব কাছে থাকলেও দেখা করার রুচিবোধ করিনি।
আসি মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সাহেব প্রসঙ্গে। আমার সাথে মন্ত্রী মহোদয়ের প্রথম বাক্যালাপ ২০১০ সালে, উপজেলা অডিটোরিয়ামে। এরপর থেকে ১১ বছরে মাত্র ১৫-২০ বার উনার সাথে কাছাকাছি কথা হয়েছে। উনি জানেন আমি উনার দলের কর্মী না। তাও জানেন কখনও কর্মী হবও না। তবুও সংসদ ভবন, সচিবালয়, মন্ত্রী পাড়া, এয়ারপোর্ট, উনার বাড়ি কিংবা কোনো অনুষ্ঠান, যেখানেই উনার পাশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েছে সেখানেই আমার মত সামান্য মানুষকেও যে মূল্যায়ন করতেন, সময় দিতেন তা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হতো। হ্যাঁ তিনিই শাহাব উদ্দিন এমপি, যার বাড়িতে রাত তিনটায়ও কেউ গেলেও তিনি তার অভিব্যক্তি শুনেন। বাড়ির গেইট খোলা থাকে। তিনিই শাহাব উদ্দিন এমপি যার কাছে আমার মত সামান্য মানুষও বাংলাদেশ থেকে চলে আসার আগে এতো ব্যস্ততা ও সামনে বসা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা থামিয়ে প্রায় ১০ মিনিট একান্ত আলাপ করে আমার সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি ইউকে এসে কিভাবে কি করবো তার জন্য প্লান-পরামর্শ ও সাহস দিয়েছেন।
উনার পুত্র জাকির হোসেন জুমন ভাইয়ের নাম্বারও দিয়ে বলেছিলেন-‘জাকিরের লগে পরিচয় আছে নি, হে দেশে আছে, যাইবোগি, যোগাযোগ করিয়া যাইও, হনো গিয়া হারলেও যোগাযোগ রাখিও’। উনিতো একটা বড় মন্ত্রী পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তবুও উনার সময় হয়। আর জাকির সাহেবের……. না কি শুধু বড়লেখা পরিচয় দিয়েছি বলেই উনি উপেক্ষা করেছিলেন??
একজন শাহাব উদ্দিন এমপি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নয়, উনি দল মত নির্বিশেষে একজন জনগণের নেতা। আপনার ফেইসবুকে লক্ষ ফলোয়ার আছে বলেই একটা পোস্ট দিয়ে আলোচনায় আসতে গিয়ে নাটক সাজালেন। মন্ত্রী মহোদয়ের বিপক্ষে লেখালেখি করালেন। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ কি আপনার নাটকের সমাপ্তি টেনে দিলো না??? ছিঃ ছিঃ…।
এভাবে মিথ্যাচার আর নাটক করে জনগণের নেতা হওয়া যায়??? মনে রাখবেন, আপনি একজন জাতীয় নেতা। এলাকায় রাজনীতি করতে চান। নেতা হতে চান, কিংবা এমপি হতেও চান। তাই বলে কি এইভাবে?? কাজ করুন, আমাদের মত সামান্য মানুষকেও মূল্যায়ন করতে শিখুন, জনগণের সাথে মিশুন, বয়স হোক। এমনিতেই তো নেতা হবেন। এতো তাড়াহুড়ো কিসের। আপনি ছাত্রলীগের আগে তো আমার সংগঠনের কর্মী বা সমর্থক ছিলেন শুনেছি। এই তো মাত্র ১২-১৪ বছর হবে সব মিলিয়ে। এর চেয়ে বেশি সময় তো আমরাও রাজপথে দিয়েছি। আর একজন শাহাব উদ্দিন তো এই এলাকার মানুষের সাথে সেই ১৯৮৪ সাল থেকেই জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের সাথে মিশে আছেন। এতো সহজে তো উনাকে ঘায়েল করা যাবে নারে ভাই। উনার সাথে যে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, আছে বড়লেখা-জুড়ীর আপামর জনগণ।
তাই সাধু সাবধান জাকির সাহেব, নয়তো বড়লেখার ছেলেরা তোমাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করবে বড়লেখায়। পাশাপাশি যারাই এই নাটকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে কিংবা দুই নৌকায় ছিলো যে, মন্ত্রী মহোদয়ও ছাড়া যাবে না, পদ পদবীর জন্য জাকির ভাইও ছাড়া যাবে না, তাদের ব্যপারে মন্ত্রী মহোদয়ের হুশিয়ার থাকা প্রয়োজন নয় কি?? অগোছালো লেখাগুলো পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে জুড়ীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের জাকির হোসাইনের গাড়ি আটকে হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে, জুড়ী উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আহমদ অহিদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ এক ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছে। এই ঘটনায় জাকিরের অনুসারিদের কেউ কেউ পরিবেশমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিনের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছেন।