গ্রামে নেই স্কুল, ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা
সময় সংগ্রহ :
অঞ্জন রায়, (নবীগঞ্জ থেকে): গ্রামটিতে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসবাস। অথচ গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা ভূমিও দান করেছিলেন। এরপর স্থানীয় লোকজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার ধরনা দেন। তারা কেবল শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এতে ওই গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে দূরবর্তী বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করছে। দূরবর্তী এলাকায় স্কুল হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।
গ্রামটির নাম হৈবতপুর। এটি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নে পড়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকার লোকজন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে বিদ্যালয় নির্মাণের দাবিতে লিখিত আবেদন করেছেন। তারা দ্রুত ওই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হৈবতপুর গ্রামে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ বাস করেন। স্বাধীনতার পর ওই ইউনিয়নের অন্য গ্রামগুলোতে বিদ্যালয় নির্মিত হলেও আজ অবধি হৈবতপুর গ্রামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ১৯৯৮ সালে হৈবতপুর গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ৩৩ শতক জায়গা দান করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতায় আজও সেখানে কোনো বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দূরবর্তী গোপলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফুটারমাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয় দূরবর্তী হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়বিমুখ হয়ে পড়ছেন। এতে অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
সম্প্রতি ওই এলাকায় বিদ্যালয় নির্মাণের দাবিতে এলাকাবাসী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
গ্রামের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়- তাদের গ্রামে কোনো বিদ্যালয় নেই। এতে তারা কষ্ট করে পাশের গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে লেখা পড়া করছে। গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের অনেক সহপাঠী দূরের স্কুলে যায় না। অনেকে লেখাপড়াও ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের গ্রামে একটি বিদ্যালয় চাই। লেখাপড়া শিখে আমরা বড় হতে চাই।
হৈবতপুর গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি আব্দুল ওয়াহিদ বলেন- ‘বয়স অনেক হলো। বৃদ্ধ হয়ে গেছি। গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য অনেক মানুষের দ্বারে-দ্বারে গেছি। তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মৃত্যুর আগে এই গ্রামে একটি বিদ্যালয় দেখে যেতে চাই। এব্যাপারে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।’
গ্রামের শিশু মিয়া নামে এক অভিভাবক বলেন- ‘আমাদের গ্রামে কোনো স্কুল নেই। তাই পাশের দেবপাড়া ইউনিয়নের গোপলার বাজারে আমার সন্তানকে ভর্তি করতে নিয়ে গিয়েছিলাম। শিক্ষকরা জানান- অন্য ইউনিয়নের ছাত্র ভর্তি করার কোনো আইন নেই। এরপর কয়েক কিলোমিটার দূরের ফুটারমাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার মেয়েকে ভর্তি করেছিলাম। অনেক সময় বৃষ্টি হলে রাস্তার বেহাল হয়ে পড়ে। এ জন্য দূরের স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়না। দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। বিদ্যালয় অনেক দূর হওয়ায় আমার মেয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমার সন্তানসহ হৈবতপুর গ্রামের অনেক শিশু-কিশোর ঝরে পড়ছে। শিক্ষার অভাবে শিশু-কিশোর ও যুবসমাজ বিপদগামী হচ্ছে।
ওই এলাকার আব্দুর রহিম জানান- হৈবতপুর গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন হলে সু-শিক্ষা গ্রহণ করে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে পারবে এলাকার শিশু-কিশোররা।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন- ‘হৈবতপুর গ্রামে একটি স্কুল প্রয়োজন। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহি উদ্দিন বলেন- ‘হৈবতপুর গ্রামে বিদ্যালয় নেই। বিষয়টি আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না। আমি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন- ‘এলাকাবাসীর আবেদন পেয়েছি। ওই এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’