ফুলবাড়ির মুড়া-কচু’র বেচাকেনা বাড়লেও কমছে উৎপাদন
সময় সংগ্রহ :
ফাহিম আহমদ, গোলাপগঞ্জ থেকে : ভোর হলেই কৃষি জমিতে নেমে পড়েন কৃষকরা। এরপর ধীরে ধীরে পানির নিচ থেকে মুড়া, কচু, লতি তুলতে থাকেন। সুন্দর করে কাঁচি দিয়ে কেটে মুড়ার গুড়া পানি দিয়ে পরিস্কার করা হয়। হালি হালি করে বাঁধা হয় মুড়া আর আঁটি বাধা হয় লতির।
সকাল ৯টার দিকে রাস্তার পাশে দীর্ঘ লাইন ধরে ১০-১২ জন স্থানীয় কৃষক মুড়া, কচু, লতি নিয়ে বসে থাকেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের ব্যবসা। প্রতিদিন একেকজন কৃষক ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মুড়া, কচু ও লতি বিক্রি করে থাকেন বলে জানান তারা।
কৃষকেরা জানান- চারা থেকে বিক্রির উপযোগী হতে ৪-৫ মাস সময় লেগে যায়। মুড়া থেকে লতি বের হতে ২ মাস সময় লাগে একেক হালি মুড়া আকারভেদে ৩০ থেকে ২’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। আর লতি ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর পথচারীদের কাছে খুবই পছন্দের এ মুড়া, লতি ও কচু।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার ফুলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েক যুগ থেকে স্থানীয় কৃষকরা মুড়া, কচু, লতির উৎপাদন করে আসছেন। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ব্যস্ততম সড়ক গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ফুলবাড়ি বড়মোকামের পাশে প্রতিদিন লাইন ধরে কৃষকরা অস্থায়ী এ বাজার বসিয়ে থাকেন। সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এসময় শখ করে মানুষ গাড়ি থামিয়ে কিনে নিয়ে যান মুড়া, কচু ও লতি। যুগ যুগ ধরে ফুলবাড়ির মুড়া, কচু, লতি দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত।
এদিকে, গত কয়েক বছর থেকে ঐতিহ্যবাহী ফুলবাড়ির মুড়া, কচু ও লতির উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে জানান কৃষক ও স্থানীয়রা। এর মূল কারণ জায়গা ভরাট করে বাসা-বাড়ি নির্মাণ। ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে জায়গা। সেই সাথে কমে যাচ্ছে এসবের উৎপাদন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে পানি জমে যায় জমিতে। পানি যাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় জমিতেই পচে যায় মুড়া, কচু ও লতি।
সরেজমিন মঙ্গলবার (২২ জুন) মুড়া, কচু, লতির অস্থায়ী এ বাজারে গেলে দেখা যায়- রাস্তার একপাশে দীর্ঘ লাইন ধরে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান- ‘দিন দিন জায়গা কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এভাবে আরও কয়েকবছর চলতে থাকলে হারিয়ে ফেলব ঐতিহ্যের এ ফসল। কোনভাবেই সামান্য জায়গায় অন্য জমিতে আমরা কয়েকজন এ ফসল চাষ করে থাকি। বিনিময়ে জমির মালিককে দিতে হয় টাকা। তবে যে ফসল চাষ করা হচ্ছে তা থেকে ভাল আয় হয় বলে জানান তারা। আয় ভাল হলেও দিন দিন জায়গা কমে যাচ্ছে। সেই সাথে কমে যাচ্ছে উৎপাদন।’
হাশির আলী স্থানীয় কৃষক। অন্যের জমিতে ৭-৮ বছর থেকে চাষ করে আসছেন মুড়া, কচু ও লতি। এবার ২৬ শতক জায়গা অন্যের কাছ থেকে ১ বছরের জন্য ২ হাজার টাকায় নিয়েছেন। এ জায়গায় চাষবাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। সর্বশেষ তারা ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি।
টিপু মিয়া নামের আরেক কৃষক জানান- এবার তিনি ২ কেদার (কিয়ার) জমিতে চাষ করেছেন। যার জন্য মালিককে ১ বছরের জন্য দিতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। আর চাষবাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। সবশেষে তারা দেড় লাখ টাকার মত লাভ হবে বলে জানান তিনি।
মাইক্রোবাস থামিয়ে মুড়া কিনতে আসেন রাহাত নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন- ‘আমি এ নিয়ে কয়েকবার এখান থেকে মুড়া ও লতা কিনেছি। খুবই স্বাদ। দামেও স্বস্তা। অন্যান্য মুড়া, লতি চুলকায়। তবে এখানের মুড়া, লতিতে চুলকায় না। তাই খুব ভালা লাগে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার আনিসুজ্জামান জানান- আমি নতুন যোগ দিয়েছি। ফুলবাড়ির মুড়া, কচুর অনেক সুনাম আছে আমি আগেই জানতাম। তবে তাদের কিছু সমস্যা আছে সেটা জানলাম। আগামী ৩০ তারিখ এখানকার কৃষকদের নিয়ে আমরা একটি পরামর্শ সভা করব। যেখানে তাদেরকে কিভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হবে।