সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে ধস : কাজ নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি : মেরামত দাবি
সময় সংগ্রহ :
কবির আহমদ, (কোম্পানীগঞ্জ থেকে) : সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানির মাধ্যমে ৫০৯ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক উদ্বোধনের আগেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে ও ব্লক ধসে পড়ছে। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় কিছুদিন পর পর এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
দেশের অন্যতম ব্যস্ত সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী পরিবহনসহ বিশেষ করে পাথরবাহী ট্রাক চলাচল করছে। এর মধ্যেই এ মহাসড়কের বর্ণি নামক স্থানে সড়কের গার্ডওয়ালের ব্লকে বড় ধরনের ধস নেমেছে। রাস্তার পিচ ঢালাইয়ের নিচে থেকে সরে গেছে মাটি। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রাক, পিকআপ, বাস, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ইত্যাদি। ধস ও গার্ডওয়ালের ভাঙন ঠেকাতে ফাটলের উপরে সড়কের অংশে বালি-সিমেন্টের স্তুপ করে বৃষ্টির পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা তেলিখাল গ্রামের মাসুক আহমদ জানান- এ সড়কের নির্মাণ কাজের শুরু থেকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব না দেওয়ায় প্রায়ই সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কে ফাটল ও ব্লক ধসের ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দুজ্জামান জানান- গতবছর সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের হাইটেক পার্ক এলাকায় রাস্তার মূল অংশে বড় ধরনের ফাটল দেখা যায়। কিছুদিন পরে সেই ফাটলের অংশ ভেঙে নতুন করে বানানো হয়। এছাড়া কাটাখাল সেতুর অংশে এ ধরনের ফাটল ও ব্লক ধসের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এতে বোঝা যায় এই সড়কের নির্মাণ কাজ নিম্নমানের হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩১ মে বিমানবন্দর-বাইপাস-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নিতকরণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল। ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে কাজের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। দীর্ঘ এ সড়কে ৩৪ মাস পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলে সময়ের ব্যাবধানে বেড়েছে নির্মাণ সময় ও ব্যয়। চুক্তি অনুযায়ী এই ৩ বছর সড়কের কাজের দেখভাল করার দায়িত্ব স্প্রেক্টা কোম্পানির। এখন সময় যত গড়াচ্ছে, ধীরে ধীরে মহাসড়কে ফাটল ও ধসের চিত্র ফুটে উঠছে।
জানা গেছে- প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের হাইটেক পার্কের সামনের রাস্তার ধসে যাওয়া ও ফাটল ধরা অংশ পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান কেন এই সড়কে ফাটল ধরেছে ও ব্লক ধসে গেছে। সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই সড়ক ধসে যাওয়া এবং ফাটল দেখা দেওয়ায় সড়কের নির্মাণ কাজ নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের সন্দেহ দূর করতে অবিলম্বে সড়কের নির্মাণ কাজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি।
গত রোববার মধ্যরাতে বর্ণি এলাকায় সড়কের ব্লক ধসের বেশ কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি কে এম নজরুল লিখেন- সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে বর্ণি এলাকার ব্রিজের দক্ষিণ দিকের রাস্তার উভয়পাশের ব্লকসহ গার্ডওয়াল ধসে গেছে। রাস্তার নিচে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। এটি জরুরিভিত্তিতে মেরামত প্রয়োজন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য বলেন- বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের বর্ণি এলাকায় ধসে যাওয়া অংশ আজ (সোমবার) সকালে আমি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ধসে যাওয়া অংশ মেরামতের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সড়কের ভাঙন মেরামত করা হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- বিমানবন্দর-বাইপাস-ভোলাগঞ্জ সড়কের ৯০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সোমবার সকালে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের একটি অংশের ব্লক ধসের সংবাদ পেয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ধসে যাওয়া সড়কের মেরামত কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। মেরামত কাজ শুরু হবে।