হাকালুকি হাওরে গাছ কাটার ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা
সময় সিলেট ডেস্ক :
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমি থেকে গাছ কাটার ঘটনায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুন) রাতে বড়লেখা থানায় পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা গণমাধ্যমকে বলেন- পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় মামলা করা হয়েছে। সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আছে আরও ১৫ থেকে ২০ জন। তদন্তে আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁদের চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার রাতে মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছেন- বড়লেখা উপজেলার মনাদি গ্রামের জয়নাল উদ্দিন, কাজীরবন্দের মক্তদির আলী, মশাঈদ আলী, রিয়াজ আলী, জয়নাল উদ্দিন, কালা মিয়া ও সুরুজ আলী।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় মামলা করা হয়েছে। সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আছে আরও ১৫ থেকে ২০ জন।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে- হাকালুকি জাগরণী ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ও মালাম বিল বনায়ন এলাকার পাহারাদার আবদুল মনাফ গত রোববার পরিবেশ অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ দেন। তাতে বলা হয়েছে- হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমির প্রায় ১২ বিঘা জমিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছ কর্তন করা হয়েছে। মালাম বিলের বাঁধ ও চাষের জমি তৈরির জন্য প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার মামলার বাদী অভিযোগকারী, হাল্লা ফরেস্ট বিটের বিট কর্মকর্তা সুমন বিশ্বাস এবং হাকালুকি ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনে দেখা গেছে- আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমির প্রায় ১২ বিঘা জমিতে সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ হিজল, করচসহ অন্যান্য প্রজাতি এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার গাছ কর্তন করেছেন। তাঁরা মালাম বিলের বাঁধ নির্মাণ ও জমি চাষের জন্য উপযোগী করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৫-এর উপধারা ১ ও ৪–এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে হাকালুকি হাওরের ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া-ইসিএ) ঘোষণা এবং সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ আরোপ করে। ইসিএ এলাকার প্রতিবেশব্যবস্থা সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক ইতিমধ্যে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ জারি করা হয়েছে। ইসিএ এলাকা হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য মৎস্য ও জলজ প্রাণী এবং পাখির বসবাসের উপযোগী রাখার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর হাকালুকি হাওরে বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুযায়ী বিদ্যমান প্রাকৃতিক অবস্থা এবং জীববৈচিত্র্য, বন্য প্রাণীর আবাসস্থলসহ সংরক্ষিত বন ও রক্ষিত এলাকা, নদ-নদী, খাল-বিল, প্লাবনভূমি, হাওর-বাঁওড়, লেক, জলাভূমি, পাখির আবাসস্থল, মৎস্য অভয়াশ্রমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জলজ অভয়াশ্রম, জলাভূমির বন, ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় এলাকার অবক্ষয়–সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে- আসামিরা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় আরোপিত বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত ও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা জলজ বৃক্ষ কর্তনের মাধ্যমে হাকালুকি হাওরের মৎস্যসম্পদ, জলজ প্রাণী, পাখির আবাসস্থল, উদ্ভিদের জলজ অভয়াশ্রমের ক্ষতিসাধন করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৫-এর উপধারা ৪ এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬-এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন, যা দণ্ডনীয় অপরাধ।