ওসমানীনগরে জ্বর-সর্দির প্রকোপ : বাড়ছে করোনার আতঙ্ক
সময় সংগ্রহ :
রায়হান আহমদ : সিলেটের ওসমানীনগরের সর্বত্র জ্বর ও সর্দির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ করে জ্বর-সর্দির প্রকোপ দেখা দেওয়ায় অনেকেই করোনার আতঙ্কে ভুগছেন।
ওসমানীনগরের একাধিক কমিউনিটি ক্লিনিক ও বেসরকারি বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে যোগাযোগ করে জানা গেছে- চিকিৎসাসেবা নিতে যারা আসছেন তাদের বেশিরভাগই জ্বর-সর্দি, মাথা-শরীর ব্যথা ও কাশিতে আক্রান্ত। আর অসুস্থদের অধিকাংশের বয়স ২০-৪৫ এর মধ্যে। তবে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। গত ১৫ দিনে ওসমানীনগরের শতাধিক রোগীকে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ এসেছে। ওসমানীনগরে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ জন।
চিকিৎসকরা জানান- প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে গ্রামীণ এলাকায় ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়। অন্য বছরগুলোতে জ্বর-সর্দি ৪-৫ দিনে সেরে গেলেও এবার তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ১০-১২ দিন পেরিয়ে গেলেও অনেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না। তাপমাত্রার দ্রুত উঠা-নামা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে জ্বর-সর্দির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কিন্তু এবারের জ্বরের ধরন অনেকটা অচেনা। দেখা যাচ্ছে শীত শীত ভাব, মাথাব্যথা, শরীরে ও হাড়ে ব্যথা, খাবারে অরুচি, গন্ধহীনতা, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক-চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম চলে যাওয়া, পেটের সমস্যা, বমি ও ডায়রিয়াসহ নানা রকমের উপসর্গ। তাই সঠিক চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন।
চারদিকে ছড়িয়ে পড়া জ্বর নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বালাগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ওসমানীনগর অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডা. এস এম শাহরিয়ার। তিনি জানান- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে দিনে শতাধিক জ্বরের রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ৬০-৭০ ভাগ বেশি। তাদের অনেকের মধ্যে করোনার উপসর্গ রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীর করোনা পরীক্ষায় অনীহা থাকায় তারা করোনায় আক্রান্ত কি না নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া অন্যান্যবারের চেয়ে এবার জ্বরের ধরন ও উপসর্গগুলো ভিন্ন। করোনাভাইরাসও দ্রুত নিজের ধরন পাল্টাচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট করে এখন আর করোনার উপসর্গ নিয়ে আলাদাভাবে ভাবার সুযোগ নেই। দেখে বোঝার উপায় নেই কে বহন করছেন এই বিষাক্ত ভাইরাস।
ডা. শাহরিয়ার বলেন- গত বৃহস্পতিবার বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ কর্মকর্তার করোনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ তাদের মধ্যে করোনার প্রচলিত লক্ষণগুলো ছিল না বললেই চলে। গায়ে হালকা জ্বর, সামান্য কাশি ছিল শুধু। তাই জ্বর-সর্দিকে অবহেলা করা ঠিক হবে না।
করোনা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাণঘাতী এ মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা, মাস্কের ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।