কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে সর্বস্ব বিলীণ: পাউবো’র জরুরী পদক্ষেপ
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা :
কুড়িগ্রামের উলিপুরে মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে খরস্রোতা তিস্তা নদীর করালগ্রাসে ৬০টি পরিবার তাদের ভিটা-মাটীসহ সর্বস্ব হারিয়ে বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নীচে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। গোড়াইপিয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোড়াইপিয়ার পিয়ারিয়া দাখিল মাদরাসা, গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদসহ শতাধিক বাড়ী-ঘর এখন হুমকীর মূখে রয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ নিয়ে ভাঙ্গন রোধে জরুরী কার্যক্রম শুরু করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তানদী তীরবর্তী গোড়াইপিয়ার গ্রামের ঘর-বাড়ী হারা মানুষের বুকফাটা আহাজারী। এসব পরিবার জীবনের সমস্ত আয়-রোজগার দিয়ে এক চিল্তেমাটি ও মাথা গোজার জন্য বসতবাড়ী তৈরি করেছিলো। কিন্তু, খরস্রোতা তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে তাদের সব কিছু নদীগর্ভে গেছে।
থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান- দীর্ঘ ১৫-২০ বছর থেকে এই এলাকাটি নদীর ভাঙ্গন থেকে নিরাপদ ছিলো। সম্প্রতি গোড়াইপিয়ারের উজানে দলদলিয়া ইউনিয়রে তিস্তানদী তীরবর্তী করপূরা এলাকায় পাউবো’র তীররক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সেখানে স্রোত বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে সরাসরি গোড়াইপিয়ার এলাকায় আঘাত হানলে আকস্মিকভাবে গ্রামটি নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। ইতোমধ্যে গ্রামটির প্রায় ৬০টি বাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এখন মাত্র ২০ গজের মধ্যে ভাঙ্গনের অপেক্ষায় রয়েছে গোড়াইপিয়ার পিয়ারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোড়াইপিয়ার পিয়ারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদ।
তিনি আরও বলেন- তিস্তা নদীর বুকে বড় বড় চর জেগে ওঠায় নদী এখন কাইম এলাকার কাছ দিয়ে খরস্রোতের সৃষ্টি হয়ে নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। ঐ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন- ‘করপূরা এলাকায় তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যদি কুড়িগ্রাম পাউবো প্রকৌশলীগণ গোড়াইপিয়ার গ্রামের দিকে আসা নদীর স্রোত ঘুড়িয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নিতো, তাহলে আজ এই গ্রামের এতগুলো পরিবারকে প্রায় মৃত এই নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাতে হতো না। পাউবো এখানে যেনো ‘চোর যেয়ে খোর দেয়া’র অবস্থানে রয়েছে। এখন জিও টেক্সটাইল ব্যাগ এনে পানির নীচে অন্ধকারে ভাঙ্গন রোধের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে- পাউবো’র প্রকৌশলীদের উদাসিনতা ও খামখেয়ালীপনায় প্রতি বছর এমন জরুরী মেরামত কাজের মুখোমুখি হতে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। জনশ্রুতি রয়েছে এতে হিসাবের গড়মিল করে প্রকৌশলীদের বেশ বাণিজ্য হয়।
গোড়াইপিয়ার গ্রামে নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো হচ্ছে- সাহেব আলী কুটিয়াল, আশরাফুর কুটিয়াল, এরশাদুল কুটিয়াল, তোতা কুটিয়াল, বকুল মিয়া, আতিয়ার রহমান, ছক্কু মিয়া, সাইদুল হক, সফিকুল ইসলাম, নাজমুন নাহার, আঃ ছালাম, আঃ হাই, বাছুর উদ্দিন, শাহাজান আলী, সিরাজুল হক, মহুবর হোসেন, নূর ইসলাম, দবির উদ্দিন, জমিলা, মজনু মিয়া, মান্নান, মরিয়ম বেগম, সোহরাব হোসেন, আবুল কালাম, কালাম-২, মকবুল হোসেন, খলিলুর রহমান, আজগার আলী, আসিদুল হক, একরামুল, এরশাফুল,আজিজুল, দুলু মিয়া, ওবায়দুল ও সৈয়দ আলী’সহ প্রায় ৬০-৬৫ জনের বাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
শনিবার (৩ জুলাই) দুপুরে ভাঙন কবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু ভাঙন প্রতিরোধসহ ক্ষতিগ্রস্থদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
গোড়াইপিয়ার এলাকায় জরুরী মেরামত কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত সেকশনাল অফিসার (এসও) মার্জান হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন- ‘৩ দিন আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চীপ-ইঞ্জিনিয়ার, এসি’সহ উর্ধ্বতন প্রকৌশলীগণ নৌকায় গোড়াইপিয়ারসহ তিস্তা তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গত শুক্রবার থেকে আমরা প্রথম দফায় ৫ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ নিয়ে ভাঙ্গন রোধে জরুরী কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ২ হাজার ব্যাগ ভাঙ্গন কবলিত স্থানে নিক্ষেপ করায় ভাঙ্গন অনেকটা রোধ হয়েছে। কতৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে এলাকাটি রক্ষায় যতো জিও ব্যাগ দরকার তা প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ভলগেট ড্রেজার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় পৌঁছেছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু জানান- ‘এলাকাটি রক্ষায় ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে। এলাকা রক্ষায় সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ যাতে সরকারী সহযোগীতা পান তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।