ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় নামের তালিকায় ‘মুহাম্মদ’
সময় সংগ্রহ :
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিশুদের জনপ্রিয় নামের তালিকায় ‘মুহাম্মদ’ নামটি স্থান করে নেয়। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিশু পরিচর্যাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘বেবি সেন্টার’ মুহাম্মদ নামটি শিশুদের জনপ্রিয় ১০টি নামের অন্যতম বলে জানিয়েছে। ব্রিটেন ও জার্মানিতেও মুহাম্মদ নামটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এদিকে প্রথম বারের মতো ফ্রান্সেও মুহাম্মদ নামটি পছন্দ তালিকার শীর্ষস্থান অধিকার করে।
মুহাম্মদ নামের বিচিত্র উচ্চারণ : এদিকে সমাজ, সংস্কৃতি ও ভাষার বৈচিত্রময়তা মুহাম্মদ শব্দের উচ্চারণেও তৈরি হয় ভিন্নতা। সমাজ ও সংস্কৃতির প্রভাব প্রকাশ পায় ভাষায় ও উচ্চারণে। শব্দের উচ্চারণে তারতম্য থাকলেও মূল আরবি উচ্চারণের সঙ্গে মিল থাকাই অধিক যুক্তিসঙ্গত। তাই মুহাম্মদ নামের সঠিক উচ্চারণ ধীরে ধীরে বিশ্বের নানা স্থানে পরিচিতি পাচ্ছে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে শিশুদের ‘মামাদো’ বলে সম্বোধন করা হত। তবে বর্তমানে তা যথাযথভাবে মুহাম্মাদ বলে উচ্চারণ করা হয়।
দেশ ভেদে শব্দের বিচিত্র উচ্চারণ : প্যারিসের স্যাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্যাপটিস্ট কুলমন্ট জানান- ইসলাম প্রসারের পাশাপাশি মুহাম্মদ নামও সমানভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তবে স্থানভেদে এর উচ্চারণে আসে বৈচিত্রময়তা। যেমন ফ্রান্সে মুহাম্মদকে বলা হয়- ‘মেহমেত’ (Mahomet)। তুরস্কে বলা হয় ‘মেহমেদ’। মালিতে বলা হয়- ‘মামদো’। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপরাজ্যে বলা হয়- ‘মেত, মেহ, সেমোহ’। এমনকি চীনের অনেক মুসলিম পরিবারের ‘মে’ একটি পারিবারিক নাম।
অনেক সময় স্থানীয় সমাজ ও সংস্কৃতির প্রভাবে মূল আরবি উচ্চারণের চেয়ে ‘মুহাম্মদ’ শব্দটি অনেকাংশে ভিন্নতর হয়। তুরস্কের ‘মুহাম্মদ’ নামটি মেহমেত হিসেবে খুবই প্রচলিত। উসমানি সম্রাজ্যের অনেক সুলতানের নামও ছিল এমন। অথচ বিশুদ্ধ উচ্চারণে ‘মুহাম্মদ’ নাম নেই বললেই চলে। তবে ধীরে ধীরে বিশুদ্ধ আরবি উচ্চারণের সঙ্গে মিল রেখে নাম রাখার ধারা শুরু হয়েছে।
মূল আরবি উচ্চারণ প্রচলন : নৃবিজ্ঞানী জোয়েল সি কুইপার্স ও আসকরি ইন্দোনেশিয়ায় মুহাম্মদ নামের পরিবর্তনের ধারা উল্লেখ করেন। তাঁরা জানান- ‘মুহাম্মদ’ নামের পরিবর্তে আগে মেত বলা হত। ১৯ শতাব্দিতে মেত নামে যাদের ডাকা হত তাদেরকে বর্তমানে মুহামদ বলে ডাকা হয়। বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুহাম্মদকে মুহামদ বলে উচ্চারণ করা হয়। স্থানীয় ভাষায় শব্দের দ্বি-উচ্চারণ (তাশদিদ যুক্ত) শব্দের ব্যবহার হয় না বলে ‘মুহামদ’ বলে উচ্চারণ করা হয়।
অপর নৃবিজ্ঞানী মোদসান লারি জনান- পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোয় এক সময় ‘মুহাম্মদ’ নামটি ‘মামাদো’ বলে উচ্চারণ করা হত। তবে বর্তমানে অধিকাংশ শিশুর নাম মূল আরবি উচ্চারণের সঙ্গে মিল রেখে ‘মুহাম্মদ’ বলে রাখা হয়।
বর্তমানে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও বোরকিনা ফাসোসহ বিভিন্ন দেশে ‘মুহাম্মদ’ নামটি নির্ভুল উচ্চারণে ডাকা হয়। সময়ের পরিক্রমায় শিশুর বাবা-মায়েরা আরবি ভাষা সম্পর্কে জানতে শুরু করেছে। এর ফলে তাঁরা ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সুযোগ পাচ্ছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রসারে নতুন প্রজন্মের জন্য এটি অনন্য।
সুন্দর নামের গুরুত্ব : সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা. এর নামানুসারে অনেক মুসলিম ছেলেদের নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখা হয়। সব মুসলিমের কাছে সুন্দর অর্থবহ নামের গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসুল সা. অনেক সাহাবির নাম সুন্দর অর্থবহ না হওয়ায় পরিবর্তন করেছেন। তাই একজন মুসলিম হিসেবে সন্তানের প্রতি মা-বাবার প্রথম কর্তব্য হলো- সন্তানের জন্য একটি সুন্দর নাম নির্বাচন করা। আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন- ‘কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ও তোমাদের পিতাদের নামে ডাকা হবে। অতএব তোমরা সুন্দর নাম নির্বাচন করো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ৪৯৪৮)
মুহাম্মদ নাম রাখ যায় : কোনো মুসলিম চাইলে ‘মুহাম্মদ’ নাম রাখতে পারবে। জাবির রা. বর্ণনা করেন- আমাদের এক ব্যক্তির ছেলে জন্ম নেয়। সে তার নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখে। তাঁর গোত্রের লোকেরা বলল- আমরা তোমাকে রাসুলুল্লাহ সা. এর নামে নাম রাখতে দেব না। ওই ব্যক্তি ছেলেকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে গিয়ে বলল- হে আল্লাহর রাসুল! আমার একটি ছেলে হয়েছে। আমি তাঁর নাম ‘মুহাম্মদ’ রেখেছি। কিন্তু গোত্রের লোকেরা রাসুলের নামে নাম রাখতে বারণ করছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন- ‘তোমরা আমার নামে নাম রাখো; কিন্তু আমার উপনাম গ্রহণ কোরো না। নিশ্চয়ই আমিই কাসেম বা বণ্টনকারী। আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৩৩)