উপদেষ্টা না হয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হলেন অধ্যাপক ড. শামসুল আলম
স্টাফ রিপোর্টার :
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কিংবা প্রতিমন্ত্রী- এই দুটি থেকে প্রতিমন্ত্রিত্বই বেছে নিয়েছেন অধ্যাপক শামসুল আলম। শপথ নেওয়ার পরদিন সোমবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সংবর্ধনা নেওয়ার সময় একথা জানালেন তিনি।
কৃষি অর্থনীতিবিদ শামসুল আলম এক যুগ ধরে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন গত ৩০ জুন শেষ করেন।
এরপর কীভাবে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন, তা জানিয়ে তিনি বলেন- “আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যখন বিদায় নিতে গেছি, তখন উনি বললেন- ‘আপনাকে ছাড়া যাবে না’।
“(প্রধানমন্ত্রীর) উপদেষ্টা এবং প্রতিমন্ত্রী কোনটা বেছে নেবেন- এই অপশন প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেন। তখন আমি তাকে বলেছি- আমি কাজের সঙ্গে থাকতে চাই। পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে থাকলেই ভালো।”
এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘খুশিই’ হয়েছেন জানিয়ে শামসুল বলেন- “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘আপনি কাজকে এত ভালোবাসেন। ঠিক আছে আপনাকে সরাসরি কাজের সঙ্গেই যুক্ত রাখব। এখানেই থাকেন। আপাতত ২৩ (২০২৩) পর্যন্ত আপনি থাকেন’।”
শামসুল আলমকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী করে প্রজ্ঞাপন:
কৃষি অর্থনীতিতে অবদানের জন্য ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত শামসুল আলমের কর্মজীবন শুরু শিক্ষকতা দিয়ে। ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ২০০৯ সালের ১ জুলাই প্রেষণে তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য করা হয়। সেই দায়িত্বে থেকে তিনি ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ (এসডিজি), শতবর্ষের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন।
২০১৫ সালে কমিশনের সদস্য থাকা অবস্থায় তাকে জ্যেষ্ঠ সচিব করা হয়। পরের বছর তিনি অধ্যাপনা থেকে অবসরে যান। তবে কমিশনের সদস্য হিসেবে তার মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। রোববার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া পর সোমবারই তাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দপ্তর দিয়ে প্রজ্ঞাপন হয়। এরপর শেরে বাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তিনি গেলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এই অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব মো. জয়নুল বারী, আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. ইয়ামিন চৌধুরীসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তাকে পছন্দ করার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে শামসুল আলম বলেন- “আমার ধারণা, সবাই তো আমার কাজের প্রশংসাই করেছেন। এ ধরণের একটি গুডউইল বা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ছিল বিধায় আপনাদের সঙ্গে আবার ফিরে আসতে পেরেছি।”
শামসুল আলম বলেন- প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার প্রধান কাজ হবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে কীভাবে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন- “আমাদের পরিকল্পনা কমিশনের সফল যুগস্রষ্টা ড. শামসুল আলমকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এতে আমরা সবাই খুশি। আমাদের সবার পক্ষ থেকে তাকে যত ধরনের সহযোগিতা করা দরকার তা আমরা করব।”
আওয়ামী লীগের সরকারে যোগ দিয়ে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগে নিজের সম্পৃক্ততার তথ্যও তুলে ধরেন শামসুল আলম। “আমি ১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন- শেখ শহীদ (সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম), আর আব্দুর রশিদ ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।”
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-বাকসুর সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালনের কথাও জানান তিনি। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরও আওয়ামী রাজনীতির বলয়ে থাকার কথা বলেন শামসুল আলম। বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন শামসুল আলম। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন শামসুল আলম।
শিক্ষকতায় যোগ দেওয়ায় ১৯৭২ সালের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও সরকারি চাকরিতে তার যোগ দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।